শাহজালাল বিমানবন্দর : মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনজনের মতামত চান হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

ফের ‘ভেরিফিকেশন’ নাটক! : মিয়ানমার থেকে আসা ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল টেকনাফে

পরের সংবাদ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার দেশগুলোর নতুন জোটের প্রস্তাব

প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয়, মনে হচ্ছে সেটিই করতে যাচ্ছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া দেশগুলো। অন্যায় অবরোধ আর জোরপূর্বক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে কোণঠাসা হতে হতে এবার নিজেরাই পাল্টা জোট গঠনের হুমকি দিয়েছে। গত সোমবার ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনি এবং বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষাৎকালে একথা বলেন। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো যেসব দেশকে শত্রæতাবশত একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিচ্ছে সেসব দেশের উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সম্মিলিতভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বানচাল করে দেয়া।
ইরান এবং বেলারুশের মধ্যে অভিন্ন ক্ষেত্রের কথা তুলে ধরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, দুই দেশই বলদর্পী শক্তি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির নিষেধাজ্ঞার শিকার তাদের উচিত অভিন্ন জোট গড়ে তোলা এবং নিষেধাজ্ঞার অস্ত্রকে সমূলে ধ্বংস করা। আমরা বিশ্বাস করি অভিন্ন জোট গঠনের মাধ্যমে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা নস্যাৎ করা সম্ভব। সাক্ষাৎকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি উপস্থিত ছিলেন।
নিষেধাজ্ঞায় উন্নতি : ইরানের নেতা বলেন, পশ্চিমাদের অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞা আমাদের দেশের নানা ক্ষেত্রে চোখ ধাঁধানো অনেকগুলো উন্নতির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ওষুধ ও বায়োলজি, পরমাণু কর্মসূচি এবং ন্যানো-টেকনোলজি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যেসব দেশ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার তারা যদি একে অন্যের সক্ষমতাগুলোকে ব্যবহার করে তাহলে তারা সবাই ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। ইরান এবং বেলারুশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে রাজনৈতিক তৎপরতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।
নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্টেশন করিডোর সম্পর্কে তিনি বলেন, এই করিডোর চালু হলে দুই দেশই লাভবান হবে। এছাড়া রাশিয়া ও অত্র অঞ্চল সুবিধা পাবে। সেজন্য এই করিডোর চালু করার ব্যাপারে প্রচেষ্টা

জোরদার করা দরকার।
খামেনি বলেন, এর আগে যে সমস্ত চুক্তি হয়েছে সেগুলো শুধু বৈঠকের ভেতরে সীমাবদ্ধ না রেখে সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজে পরিণত করা দরকার। সবশেষে তিনি বলেন বিশ্বে আধ্যাত্মিকতার চর্চা থাকতে হবে, প্রতিটি জাতির জন্য আধ্যাত্মিকতা চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।
বৈঠকে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো বলেন, নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকার কারণে ইরান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি লাভ করেছে এবং দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে যে পরিবেশ তৈরি হয় তা যদি পুরোপুরি কাজে লাগানো যায় তাহলে সত্যিকার অর্থে উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করে। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট বলেন, তার ইরান সফরে আসার আরেকটি কারণ ছিল। সেটি হলো এখানকার অর্জনগুলো সরজমিন পরিদর্শন করা।
শত্রæ-মিত্র চেনার সুযোগ : বৈঠকের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় তার দেশ সত্যিকারের বন্ধু ও শত্রæ চিনতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃত বন্ধুদের সঙ্গে বেলারুশ বিশেষ সহযোগিতায় আবদ্ধ থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কায়ানি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে বিশ্ববাসীর সামনে নিজের সন্ত্রাসী চেহারা উন্মোচন করে দিয়েছে।
আরো আসছে অনেকে : যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ও একতরফা নিষেধাজ্ঞা রুখে দিতে একজোট হচ্ছে বিশ্বের ১৬ দেশ। মূলত জাতিসংঘকে ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন যখন তখন যেসব হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে তা মোকাবিলার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নিচ্ছে দেশগুলো। ইরান, রাশিয়া, চীনসহ এই জোটে আরো থাকছে সিরিয়া, ফিলিস্তিন, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও কিউবা। সদস্য দেশ হিসেবে থাকছে আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বেলারুশ, বলিভিয়া, কম্বোডিয়া, ইরিত্রিয়া, লাওস, নিকারাগুয়া, সেইন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডিন্স দ্বীপপুঞ্জ।
মার্কিনবিরোধী এই দেশগুলো মনে করছে, বহুপাক্ষিকতাবাদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন দেশের ওপর জোর করে নিষেধাজ্ঞা চাপাচ্ছে সামরিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তির এই দেশটি। কখনো কখনো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, যা একাধিপত্যবাদের চূড়ান্ত লক্ষণ। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে বলেও দেশগুলো মনে করে।
জোট গঠনে সিদ্ধান্ত নেয়া দেশগুলোর প্রায় সবাই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে। শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পরও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া প্রযুক্তিগত দ্ব›েদ্বর কারণে চীনের বিরুদ্ধে এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার জন্য মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। ২০১১ সাল থেকে সিরিয়া পশ্চিমা সমর্থিত উগ্র সন্ত্রাসবাদীদের সহিংসতার কবলে পড়ে রয়েছে। সিরিয়ার বাশার আসাদ সরকার যখন এই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ের পথে তখন দামেস্কের সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো দামেস্কের ওপর বর্বর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির সাধারণ জনগণ। কারণ কোনো নিষেধাজ্ঞা সরকারের ওপর সীমাবদ্ধ থাকে না, অবশ্যই তা দেশ ও জনগণকে প্রভাবিত করে।
স¤প্রতি সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার তুরস্ক এবং কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, সিরীয় জনগণকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো। এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়ার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ল্যাভরভ বলেন, মার্কিন এবং পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরিয়ার পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আর সহজ নেই। এসব নিষেধাজ্ঞা শুধু সিরিয়ার সরকারকে লক্ষ্য করে আরোপ করা হয়নি বরং নিষেধাজ্ঞার প্রধান টার্গেট দেশটির সাধারণ জনগণ। সূত্র : প্রেসটিভি, রয়টার্স

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়