কাতার নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী : প্রবাসে অপরাধে জড়ালে দায় নেবে না সরকার, দালালের মাধ্যমে কেউ বিদেশমুখী হবেন না

আগের সংবাদ

বিপর্যয় সামালের সক্ষমতা কম : ইঞ্জিনিয়ার ও প্যারামেডিকেল টিম নেই, প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম

পরের সংবাদ

সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণ : ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়নি চলছে স্থিতিশীলতার কাজ

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত কুইন স্যানিটারি মার্কেট ভবন ভাঙা হবে নাকি সংস্কার করা হবে- সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তদন্ত কমিটি। সংস্থাটি বলছে- বেজমেন্ট, নিচতলার কলাম ও পিলার যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যদি ভবনটি ভেঙে ফেলা হয় তাহলেও ক্ষতিগ্রস্ত পিলারগুলো আগে স্থিতিশীল করতে হবে। না হলে ভাঙতে গেলেও ভবন ধসে পড়তে পারে। রাজউকের তদন্ত

কমিটির সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী গতকাল রাত ৮টার দিকে ভোরের কাগজকে বলেন, রাজউক কারিগরি টিমের সদস্যরা ভবন স্থিতিশীলতার কাজ করছে। আজ (শুক্রবার) দুপুরের মধ্যে স্থিতিশীলতার কাজ শেষ হবে। এরপর কিছু ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে আগামী রবি অথবা সোমবার নিশ্চিত হওয়া যাবে ভবনটি ভাঙা হবে কিনা। এদিকে রাজউকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে শহরের যত ভবনের বেজমেন্টে রেস্টুরেন্ট ও মার্কেট আছে, সেগুলোর তালিকা করা হবে।
অন্যদিকে ঝুঁকি বিবেচনায় এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে কুইন স্যানিটারি মার্কেট ভবনের সামনের সড়কের লেনটি। আর এতে রাজধানীর ব্যস্ততম এই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গতকাল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় এ ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। যদিও রাজউকের কারিগরি টিম বলছে, সড়কের ওই লেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দিলে যে ভাইব্রেশন সৃষ্টি হবে, তাতে ভবনটি ধসে পড়তে পারে। তাই জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সড়কে যান চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। গতকাল আরো একটি মৃতদেহ উদ্ধারের পর ভবনটিতে আর কোনো মৃতদেহ নেই বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা ব্যানার টানিয়ে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
গতকাল দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে এসে রাজউকের তদন্ত কমিটির সদস্য মেজর (অব.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ১৭০০ স্কয়ার ফিট ভবনের ২৪ কলামের মধ্যে নয়টি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু বিম কলাম থেকে উড়ে গেছে। ১ম ও ২য় তলার ছাদ ধসে পড়েছে। ওয়াসার পানির পাইপ ফেটে বেজমেন্টে বেশ পানি জমে গেছে। এ অবস্থায় ভবন ভাঙতে কিংবা ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখতে ভবন স্থিতিশীল করা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের কারিগরি টিম কাজ শুরু করেছে। প্রথমে সাপোর্টিং বিমের মাধ্যমে ভবনের লোড সরিয়ে এবং নতুন রড প্রতিস্থাপন করে ঝুঁকিমুক্ত করা হবে। এরপরই ভবন ভাঙা অথবা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
কুইন্স স্যানিটারি মার্কেট ভবনের নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে ১৯৮৫-১৯৯০ সালের পুরনো নথি ঘেটে আমরা ভনটির কোনো নথি পাইনি। এখন ১৯৮০-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত যে নথি আছে সেগুলো খোঁজা হচ্ছে। নথি পাওয়া গেলে ভবনটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাজউকের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তা তন্ময় দাশ বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে শহরের যত ভবনের বেজমেন্টে রেস্টুরেন্ট ও মার্কেট আছে, সেগুলোর তালিকা করা হবে। রাজউকের আটটি জোনের ২৪টি সাব-জোনে সরজমিনে পরিদর্শন করে এই তালিকা করা হবে। মার্কেট ও রেস্টুরেন্টে ভেন্টিলেশন রয়েছে কিনা, অনুমোদন আছে কিনা- যাচাই করা হবে।
গতকাল ভবনের বেজমেন্ট থেকে স্যানিটারি ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান স্বপনের লাশ উদ্ধারের পর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, উদ্ধার হওয়া মরদেহের ওজন প্রায় ১২০ কেজি, এজন্য দুটি ব্যাগ ব্যবহার করতে হয়েছে। মরদেহ মেহেদী হাসান স্বপনের সঙ্গে মিলে যায়। ভবনে আর কোনো মৃতদেহ নেই। দুর্ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। ৫ দিনের মধ্যে তারা রিপোর্ট দেবে।
এদিকে বিস্ফোরণের পর থেকেই ভবনের সামনের সড়কের লেন বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে জনসাধারণের। বিশেষ করে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান হয়ে এ সড়ক দিয়ে উত্তরা ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। ভবনের বিপরীত পাশের লেন দিয়ে ধীর গতিতে যানবাহন চলায় অনেকে সদরঘাট থেকে গুলিস্তান হেঁটেই যাচ্ছেন। আবার অনেকে ফুলবাড়িয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করেছেন।
আশরাফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, সকালে মিরপুর থেকে কোর্ট কাচারি এসেছিলাম। রাস্তার একপাশ বন্ধ থাকায় জ্যাম লেগেছে পুরো রাস্তায়। তাই গুলিস্তান পর্যন্ত হেঁটেই যাচ্ছি। তারপর বাসে উঠে মিরপুর যাব। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা ফয়সাল মোল্লা নামে আরেকজন বলেন, ঢাকায় এসেছিলাম ব্যবসার কিছু মাল কিনতে। সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত গাড়ি খুবই ধীরে ধীরে চলছে। তাই হেঁটেই যাচ্ছি। গুলিস্তান থেকে বাসে উঠব। তেজগাঁও থেকে আসা লাইজু রহমান বলেন, প্রতিদিনই নবাবপুর আসি। আজও সকালে এসেছি। বিস্ফোরণের পর থেকে নবাবপুর থেকে গুলিস্তানে এসে বাসে উঠছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়