এবার ডিএনসিসির গাড়িচাপায় বাইক চালকের মৃত্যু : মেশিনে পেঁচিয়ে নিহত ১

আগের সংবাদ

আতঙ্কের বসতি পুরান ঢাকা : কেমিক্যাল গোডাউন না সরায় ক্ষোভ, নিমতলীর ১৭ দফা বাস্তবায়ন জরুরি

পরের সংবাদ

দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কাতারকে প্রয়োজন

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শ্রম অভিবাসন (৮ লাখ বাংলাদেশি কর্মী এবং ইউএসডি ১.৩ বিলিয়ন রেমিট্যান্স), জ্বালানি সহযোগিতা (১৫ বছরের জি-২-জি এলএনজি চুক্তি) এবং রোহিঙ্গাদের জন্য ক্রমাগত সহায়তাসহ বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে অবিরাম সহযোগিতা রয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে কাতার এবং ওমান থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ক্রয় চালিয়ে যাচ্ছে এবং বছরে প্রায় চার মিলিয়ন টন তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করে। কাতারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২০৩২ সালে শেষ হবে এবং ওমানের সঙ্গে ২০২৯ সালে মেয়াদ শেষ হবে। কাতার অন্যতম শীর্ষ শক্তি উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই কাতারের সঙ্গে সরকার থেকে সরকারে ১৫ বছরের জন্য এলএনজি চুক্তি করেছে। তবে ইউক্রেন সংকট, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং পরবর্তীকালে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন হ্রাস এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির উচ্চ মূল্যের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় লড়াই করছে।
কাতার মধ্যপ্রাচ্যের একটি তেলসমৃদ্ধ দেশ। তার অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য দেশটি মূলত বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। কাতারের ৮৯.৫ শতাংশ বাসিন্দা বিদেশি নাগরিক। বিপরীতে বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম শ্রম রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি। প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী সেখানে কাজ করছেন, যা কাতারের মোট বাসিন্দার ১২.৫ শতাংশ। তেলসমৃদ্ধ দেশটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের প্রবাসী ও অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। কাতার চ্যারিটি বাংলাদেশে কয়েকটি স্কুল, এতিমখানা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে। ২০১৭ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য বার্ষিক ২.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি পাওয়ার জন্য কাতারের কোম্পানি রাসগ্যাসের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটা লক্ষণীয় যে গত পাঁচ বছরে কাতার থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ মার্কিন ১ বিলিয়ন ছুঁয়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু জ্বালানি সংকটে ভুগছে, কাতার তার ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির কাছে বছরে আরো এক মিলিয়ন টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গত ৫ মার্চ কাতারের দোহায় কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনের মাঝে দেশটির আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাতারের আমির বাংলাদেশকে জ্বালানি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের অনুরোধের পর কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, আমি আজ আমাদের জ্বালানিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিচ্ছি। আপনি (শেখ হাসিনা) দেশে ফেরার আগে আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব এবং এর মধ্যে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেব। আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। কাতার সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
বাংলাদেশ ও কাতার সম্প্রতি তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করেছে। কাতারের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত, এলপিজি স্টোরেজ টার্মিনাল, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই জরুরি এলএনজির জন্য কাতারকে অনুসরণ করেছে এবং তুলনামূলক কম দামে সরবরাহের জন্য ঋণের হাত প্রসারিত করেছে। কাতার শোধনাগার খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে। ওআইসি সদস্যপদ এবং মুসলিম পরিচয় বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ এখন কঠোর পরিশ্রম করে বিশ্বের মানচিত্রে তার ছাপ ফেলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যদের মতো বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অত্যাবশ্যকীয় জ্বালানির অভাব রপ্তানিমুখী পোশাক ইউনিটগুলোর জন্য বিদেশি অর্ডারের ক্ষতির কারণ হতে পারে। অন্যান্য শিল্পের উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাই উন্নয়ন ও শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে বর্তমান জ্বালানি সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হবে, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সম্পর্ক সুসংহত হবে। সামগ্রিক সম্পর্ক ইঙ্গিত দেয় যে এই দুটি দেশ একে অপরের কার্যকর অংশীদার হতে পারে। বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ উপভোগ করছে এবং উভয় দেশই এই বিরল সুযোগ থেকে উপকৃত হতে পারে। ডিজিটাল স্পেসে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে এবং কাতার বাংলাদেশের আইটি খাতেও বিনিয়োগ করতে পারে। এদিকে বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতা অপসারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন দেশটি এখনো একটি নিরাপদ, নিরাপদ এবং ব্যবসাবান্ধব জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। উভয় অংশীদারের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং প্রবণতা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য অনুকূল কারণ কাতার নিয়মিতভাবে বিদেশে সম্ভাব্য খাতে বিনিয়োগ করে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের একটি উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও কাতারের মতো দেশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ও অবদান রাখতে পারে।

জুবেদা চৌধুরী : ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়