জাকের সুপার মার্কেট : সংঘর্ষে সভাপতিসহ আহত ২

আগের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

পরের সংবাদ

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন : ছেঁউড়িয়ায় লালন স্মরণোৎসব শুরু আজ

প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৪, ২০২৩ , ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গান, বাউল মেলা ও সাধুসংঘের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার থেকে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী
লালন স্মরণোৎসব-২৩। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনী ও আলোচনা সভা শুরু হবে ওইদিন সন্ধ্যা থেকে।
ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি। ভক্ত-অনুসারীরা আগে থেকেই লালন আখড়ায় জায়গা করে নিয়েছেন। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মাজার প্রাঙ্গণ ধুয়ে-মুছে সাফ করে এক বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
মরমি এ সংগীত সাধকের বার্ষিক স্মরণোৎসব উপলক্ষে তার সাধন-ভজনের তীর্থস্থান ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ এখন পরিণত হয়েছে উৎসবের পল্লীতে। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে আগমন ঘটেছে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের। উৎসব চলবে ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে স্মরণোৎসবে থাকবে লালনের স্মৃতিচারণ করে আলোচনা, লালন সংগীতানুষ্ঠান ও লালন গ্রামীণ মেলা। কুষ্টিয়া শহরের কোলঘেঁষে কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী। এ নদীর তীরেই ছেঁউড়িয়ার লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭ এর ১ কার্তিক ও ইংরেজি ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই মরমি সাধক লালন শাহের শেষশয্যা রচিত হয়।
গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহের জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোল পূর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধু সংঘ।
লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমিও প্রতি বছর এ উৎসবটিকে ‘লালন স্মরণোৎসব’ হিসেবে পালন করে আসছে। তবে লালন অনুসারীরা দিনটিকে ‘দোলপূর্ণিমা’ উৎসব হিসেবেই পালন করে থাকেন।
সাধুদের মতে, সত্যিকার অর্থে লালন অনুসারীরা দোল পূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারাবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপূর্ণিমার রাতের বিকালে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসংঘ শুরু হয়। চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জোছনার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে। পরদিন ৪টায় ‘পুণ্যসেবা’ দিয়ে সাধুসংঘ শেষ করে আখড়াবাড়ি ত্যাগ করেন বেশির ভাগ সাধু।
প্রকৃত সাধুসংঘের অধিবাস শেষ হলেও লালন একাডেমি আয়োজিত মূলমঞ্চে লালনগীতি ও লালনমেলা চলে আরো দুদিন। তারা মনে করেন, মানবধর্মই বড় ধর্ম। একসঙ্গে এভাবে সাধুসংঘ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধু-গুরুর কৃপা ছাড়া মানুষ মুক্তি পেতে পারে না। তার কৃপায় মানুষ সঠিক পথ দেখে।
লালন স্মরণোৎসব ঘিরে কালীগঙ্গা নদীর ধারে প্রতি বছরই বসে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল গ্রামীণ মেলা।
শনিবার দোলপূর্ণিমার রাতে শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপী চলবে লালন স্মরণোৎসব-২০২৩। শুরুর দিনই সন্ধ্যায় তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করবেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ।
এতে সভাপতিত্ব করবেন লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি থাকবেন কুষ্টিয়া-৪ কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম। উদ্বোধনী দিনে আলোচক থাকবেন বিশিষ্ট গবেষক ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহীনুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল। আলোচনা সভা শেষে লালন একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হবে রাতভর লালন সংগীত।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে- এমন দাবি করে আয়োজকরা জানিয়েছেন, অন্যবারের তুলনায় এবারে আরো বেশি লোক সমাগম ঘটবে লালন ভক্ত-অনুসারীদের। আর এ উৎসবকে নির্বিঘœ রাখতে কয়েক বলয়ে নিরাপত্তামূলক সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৫ মার্চ সন্ধ্যায় যথারীতি আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে। দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন সাংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ হোসেন, বিশেষ অতিথি থাকবেন কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা।
৬ মার্চ সমাপনী দিনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, বিশেষ অতিথি থাকবেন খুলনা বিভাগীয় পুলিশের ডিআইজি মঈনুল হক, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. আরিফুজ্জামান। আলোচক থাকবেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. সরোয়ার মুর্শেদ রতন প্রমুখ। দুদিনের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলায় চলবে লালন সংগীত। এই লালন সংগীতের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী লালন মেলার সমাপ্তি হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়