সাভারে সাংবাদিকের গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হানা

আগের সংবাদ

তিন কলেজের শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ সায়েন্স ল্যাবে : ঢাকা কলেজ বন্ধ ঘোষণা

পরের সংবাদ

অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ : সীতাকুণ্ডের ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে’ বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত আরো ২৫

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর কদমরসুল এলাকায় ‘সীমা অক্সিজেন লিমিটেড’ নামে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ ও আগুনে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ২০-২৫ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে বিকট শব্দের বিস্ফোরণে আশপাশের অন্তত দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে উঠে। এরপরই আগুন ছড়িয়ে পড়ে অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিভিন্ন অংশে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। হতাহতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ এবং স্থানীয় জনগণও আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। এর মধ্যেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা হতাহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তবে কীভাবে এই বিস্ফোরণ ও আগুন লেগেছে তাৎক্ষণিকভাবে তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঠিক ৯ মাস পরই কাছাকাছি এলাকায় এরকম আরেকটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ওই এলাকায় চরম আতঙ্ক ও শোক বিরাজ করছে।
নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা ফরিদ (৩৪), কদমরসুল এলাকার শামসুল আলম (৬৫), নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ছোট মনগড়া গ্রামের মিকি রেঙি লখরেটের ছেলে রতন লখরেট (৪৫) এবং নোয়াখালীর সুধারাম থানার অলিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবদুল কাদের (৫০)। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি আহতদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- নূর হোসেন (৩০), মো. আরাফাত (২২), মোতালেব

(৫২), ফেনসি (৩০), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬) ও জাহিদ হাসান (২৬)।
হাসপাতালে শামসুল আলমের ভাগ্নে পরিচয়ে জিসান নামে এক যুবক বলেন, ‘কারখানার উল্টো পাশে রাস্তায় একটা লাকড়ির দোকানে আমার মামা বসেছিলেন। বিস্ফোরণে একটি লোহার বড় টুকরা এসে তার ওপর পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা এসে শুনি মামা আর বেঁচে নেই।’
বিস্ফোরণে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য বিকালেই নিশ্চিত করেন সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদৎ হোসেন। পরে রাতে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ জানান, এই বিস্ফোরণে নিহত পাঁচজনের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আরেকজনের লাশ ভাটিয়ারির বিএসবিএ হাসপাতালে রয়েছে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, এই বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তাও আছেন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলে মোট ২১ জনকে আনা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩ জন মৃত। আহতদের অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, আহতদের বেশির ভাগেরই আঘাতজনিত সমস্যা। দুজন মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছেন। আমাদের সব চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী প্রস্তুত আছেন। চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রক্ত, স্যালাইন ও ওষুধপত্র ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আহতদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে সন্ধ্যায় মেডিকেলে যান জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসার সব খরচ ও ওষুধ দেয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
নগরীর আগ্রাবাদে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমা শিল্প গ্রুপের একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, কীভাবে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণ ও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে জোর দিয়েছেন।
অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে আশপাশের অন্তত দুই বর্গ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। ভাটিয়ারী ইউপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের পর তিনি নিজে ঘটনাস্থল থেকে আহত চারজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইনফিনিয়া নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানা আছে। বিস্ফোরণে ওই কারখানার জানালার গøাস ভেঙে যায়। কারখানার শ্রমিকরা এ সময় আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন।
রিদওয়ানুল হক নামে মাদামবিবির হাটের এক বাসিন্দা বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল দেখতে এসে বলেন, বিস্ফোরণের পর কদমরসুল এলাকায় ঘন কালো ধোঁয়া ওপরের দিকে উঠতে দেখেন। ধোঁয়া অনুসরণ করে কারখানা এলাকায় গিয়ে দেখেন বীভৎস অবস্থা। একের পর এক আহত শ্রমিকদের বের করে আনা হচ্ছে। তিনি অন্তত: ১৫ জন শ্রমিককে বের করে নিয়ে যেতে দেখেছেন। উৎসুক জনতা কারখানা এলাকায় ভিড় করছিলেন। পরে কারখানার ভেতর থেকে জানানো হয়, আরো অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাদের ঘটনাস্থল থেকে দূরে যেতে বলা হয়। তখন অনেকে দূরে চলে যান।
কামাল উদ্দিন নামে প্ল্যান্টের পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি বলেন, বিস্ফোরণের পর টিন ও লোহার টুকরা উড়ে গিয়ে আশপাশে পড়েছে। এতে অনেকে আহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধারকাজ শুরু করেন। এ সময় দুটি মরদেহ প্ল্যান্টের বাইরে পড়ে ছিল।
মুসলিম উদ্দিন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, অনেকের হাত-পা কেটে যায়। এখান থেকে উড়ে যাওয়া লোহার টুকরার আঘাতে আধা কিলোমিটার দূরে শামসুল আলম নামের একজন মারা গেছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশে টিনের টুকরা পড়ে রয়েছে। পুরো প্ল্যান্টটি দুমড়েমুচড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে এমনই এক বিস্ফোরণে ৫১ জন নিহত হয়েছিলেন। বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের প্ল্যান্টের দূরত্ব আধা কিলোমিটার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়