শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও জনভোগান্তি

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তিন মাসের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে পরপর দুবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এ দফায় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৮ শতাংশ। খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে উৎপাদন খরচ, যা মানুষের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়ে আয় কমিয়ে দেবে। সদ্য বাড়া বিদ্যুতের সঙ্গে গ্যাসের দামও বাড়বে। মূলত দেশের জ্বালানিগুলোর আগে দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষমতা ছিল ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন’-এর। এ ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে সরকার ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ বিইআরসি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একের পর এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, বিশেষ করে সাধারণ মানুষ বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ বিদ্যুতের দাম বাড়লে খরচ বাড়বে কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতে। ফলে আরেক দফা দ্রব্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। বিশ্বজুড়ে করোনাকাল অতিক্রম করার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ, বিশেষ করে দেশের সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে সংকটে পড়বে নিরীহ মানুষগুলো। চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। পৃথিবীর দেশে দেশে অর্থনৈতিক সংকট এখন প্রকট। সেক্ষেত্রে এ খাতে সরকারের ভর্তুকি অব্যাহত রাখা উচিত ছিল। এতে করে দেশের সাধারণ জনগণ বাজারে অনেক কিছুর দাম বৃদ্ধি থেকে রক্ষা পেত।
এ বিষয়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় সাধন করে এ খাতে যাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে না হয় সেদিকেই এগোচ্ছে সরকার। তবে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এ খাতে সিস্টেম লস দূর করতে পারলে আরো ভালো ফল পাওয়া যেত। বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এর দায় চাপছে গ্রাহকদের ওপর। ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে আক্ষরিক অর্থেই সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠবে। প্রকৃতপক্ষে একদিকে করোনার ক্ষত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে অস্থির হয়ে আছে মানুষের জীবন। তার ওপর খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় মানুষ পড়েছে বিপাকে। এই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি দেশের শিল্প খাতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে, কারণ বিদ্যুতের দাম বাড়ায় তারা তাদের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীরও দাম বাড়িয়ে দেবে, যা বিদেশে রপ্তানি করতে কষ্টসাধ্য হবে। এর ফলে দেশও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাবে।
মূলত বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে এর প্রভাব দেশের প্রতিটি খাতে গিয়ে আঘাত হানে। যদিও বলা হচ্ছে এত স্বল্প পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তা পর্যায়ে কোনো ক্ষতি করবে না, কিন্তু বিষয়টা যদি এক মাস কিংবা দুই মাাস পরপর মূল্যবৃদ্ধি ঘটে তাহলে এটি ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাব পড়তে বাধ্য। আমরা প্রত্যাশা করব সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আগে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা ভাববে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মূল্য সমন্বয় বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে আমরা মনে করি। আশা করছি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে বিষয়টি চিন্তা করে দেখবে।

রতন কুমার তুরী : শিক্ষক ও লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়