শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ, প্রভোস্ট প্রত্যাহার

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক ও ইবি প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচজনকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িক বহিষ্কার করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্য চার ছাত্রী হলেন- হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।
ওই ঘটনার সময় ফুলপরীর ভিডিও ধারণকারী শিক্ষার্থী হালিমার মুঠোফোন উদ্ধার এবং ধারণ করা ভিডিও সংরক্ষণ করে আদালতে দাখিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়। ফুলপরী যাতে নির্ভয়ে স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য তিন দিনের মধ্যে তার পছন্দ অনুসারে হলে আসন বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি ফুলপরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কুষ্টিয়া ও পাবনার পুলিশ সুপারসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। ঘটনার সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় আদালত।
ইবি ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে দুটি পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর গতকাল বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্দেশসহ এ আদেশ দেন। আদালত আগামী ৮ মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। সেদিন প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য তারিখ ঠিক করেন হাইকোর্ট।
এদিকে ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর দ্রুত তাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ১৪ মাস ধরে শামসুল আলম হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন।

গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, হাইকোর্ট থেকে বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অধ্যাপক শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে অধ্যাপক আহসানুল হক সাময়িকভাবে প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
আদালত বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন ও বিধিবিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে সাসপেন্ড এবং ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শৃঙ্খলাবিষয়ক কার্যধারার প্রয়োজনে তাদের ডাকা যাবে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রভোস্ট, হাউস টিউটরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দায়িত্বে অবহেলা খুঁজে পেয়েছে। হল থেকে প্রভোস্টকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হলো। প্রভোস্টসহ তাদের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফুলপরী। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তাবাসসুম নামের দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন। কমিটির প্রতিবেদন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এছাড়া ওই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়ের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। সেই নির্দেশনা মতে গত মঙ্গলবার পৃথক প্রতিবেদন সিলগালা করে আদালতে দাখিল করা হয়। তিনি আদালতে প্রতিবেদন দুটির অংশবিশেষে পড়ে শোনান। তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের যুক্ততার সত্যতা মিলে। হলের প্রভোস্টসহ দায়িত্বশীলদের অবহেলার বিষয়টি প্রতিবেদনে উঠে আসে। পরে গতকাল বুধবার আদেশের দিন ধার্য করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। রিট আবেদনকারী গাজী মো. এহসীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রিটকারী আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, বিষয়টি মনিটরিংয়ে রাখব। আপনিও এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে আদালতকে জানাবেন। তখন প্রয়োজনীয় আদেশ দেয়া হবে।
এ সময় আদালত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, কিছু শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নষ্ট করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করছে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং বন্ধে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রথমবর্ষে ভর্তির সময় ওই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিতে হবে যেন র‌্যাগিংয়ের মতো কাজে যুক্ত থাকলে বহিষ্কার করা হবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঁচ নেতাকর্মী বহিষ্কার : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, দেশরতœ শেখ হাসিনা হল শাখার সহসভাপতি তাবাসসুম ইসলাম, কর্মী মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিমি ও হালিমা খাতুন উর্মী।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ এবং সার্বিক বিবেচনায় বিষয়টাতে ক্রিমিনাল অফেন্স হয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। পাঁচজনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়