শালুক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মিলন ১০ মার্চ

আগের সংবাদ

ই-টিকেটের নামে ‘ফাঁকিবাজি’ : টিকেট দিতে অনীহা কন্ট্রাকটরের, টিকেটের বিষয়ে যাত্রীরাও উদাসীন, মনিটরিং ব্যবস্থা অপ্রতুল

পরের সংবাদ

ইমোতে শ্রæতিমধুর ভুয়া মেয়ে কণ্ঠের ফাঁদে পড়ছে প্রবাসীরা : লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া ৪ প্রতারক গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ইমোতে সুন্দর চেহারার ছবিসহ মেয়ে আইডি থেকে মেসেজ দেয়া হয় প্রবাসীদের। এরপর শুরু কথোপকথন ও ছবি আদান-প্রদান। সুন্দর ছবি ও শ্রæতিমধুর কণ্ঠের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার মায়ায় পড়ে সহজেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন প্রবাসীরা। পরে ভিডিও কলের প্রলোভনে কৌশলে প্রবাসীদের ইমো আইডি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। ইমো নম্বর পরিবর্তন করে অ্যাকাউন্টের প্রিভিয়াস হিস্টোরিতে গিয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের নম্বর সংগ্রহ করে নানা বাহানায় হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। অথচ মেয়ের ছবিসহ ইমো আইডিটিই ভুয়া। মেয়ে কণ্ঠে কথা বলেন প্রতারক চক্রের পুরুষ সদস্য।
এমনই এক চক্রের মূলহোতাসহ ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃরা হলেন, সোহাগ আহমেদ, রিপন ইসলাম, সোহেল রানা ও লিটন আলী। গত সোমবার নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধভাবে প্রতারণা করে থাকে। প্রতারণা করার জন্য তারা মূলত মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারী প্রবাসীদের টার্গেট করত।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার সোহাগ এই চক্রের মূলহোতা। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে সে মোবাইল হার্ডওয়্যার এন্ড সফটওয়্যার ফিক্সিংয়ের কাজ খুব ভালোভাবে রপ্ত করে। এর সঙ্গে মেয়েলি কণ্ঠে সুরেলাভাবে কথা বলার একটি গুণ তার আগে থেকেই ছিল। পরবর্তীতে এই দুই দক্ষতা ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভ তাকে পেয়ে বসে। এই প্রতারণার টার্গেট হিসেবে সে বেছে নেয় অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ইমো ব্যবহারকারী মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের। প্রতারণায় সহযোগী হিসেবে সে প্রথমে তার আপন ভাই মো. রিপন ইসলামকে নেয়। রিপন প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকা ক্যাশ-আউটের কাজ করত। এই প্রতারণা চক্রের আরো দুই সক্রিয় সহযোগী সোহেল রানা ও লিটন আলী। তারা প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে জায়গা-জমি কিনে ও বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির মাধ্যমে উন্নত জীবনযাপন করে।
চক্রটির খপ্পড়ে পড়েন ইরাক প্রবাসী মো. সামছুল হক। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর সামছুল হকের বোন রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা সুরাইয়া আক্তারের কাছে একটি ভয়েস মেসেজ আসে। ভয়েস ম্যাসেজটি হুবহু সামছুল হকের কণ্ঠের মতো ছিল। ভয়েস মেসেজে বলা হয়, সামছুল হক ইরাকের কোনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তিনি অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য দেশ থেকে টাকা পাঠাতে হবে। ভয়েস মেসেজটি শোনার পর সুরাইয়া দ্রুত তার মা শামসুন্নাহারকে বিষয়টি জানায়। পরে ছেলের অসুস্থতার কথা জানতে পেরে ভয়েস মেসেজে দেয়া নম্বরে বিকাশ ও নগদে ৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পাঠান শামসুন্নাহার। টাকা পাঠানোর দুদিন পর ছেলের সঙ্গে কথা বলে মা জানতে পারেন, সামছুল হকের ইমো আইডি হ্যাক হয়েছে। আর তিনি অসুস্থও না, এমনকি হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন না। পরে তারা বুঝতে পারেন ইমো আইডি হ্যাক করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রতারকরা তাদের টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে। পরে এ ঘটনায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির হাজারীবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন প্রবাসী সামছুল হকের মা শামসুন্নাহার। ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, হাজারীবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলার সূত্র ধরে চক্রটিকে গ্রেপ্তার করার পর দুদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ ধরনের আরো বেশ কয়েকটি প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে।
ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, প্রতারকরা ভিকটিমের নম্বর দিয়ে তাদের ডিভাইসে একটি ইমো অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করত। এতে করে ভিকটিমের কাছে যাওয়া ওটিপি নম্বর বিভিন্ন কৌশলে নিয়ে নিত। ওটিপি পাওয়ার পর তারা প্রবাসীর ইমো অ্যাকাউন্টটি আয়ত্তে নিয়ে প্রথমে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলে। পরবর্তীতে ইমো-বেটা ব্যবহার করে প্রবাসীর অ্যাকাউন্টের নম্বর পরিবর্তন করে প্রতারণা করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়