চকরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক : ভাই ‘রাসেলের’ ২১ দিন পর মারা গেল বোন ‘টুম্পা’

আগের সংবাদ

দেশের চিকিৎসায় অনাস্থা কেন : চিকিৎসকদের ইমেজ সংকট, টেস্ট রিপোর্টের রকমফের, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং নেটওয়ার্ক

পরের সংবাদ

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে জোর : হালনাগাদ তথ্য নেই দেড় লাখ বৈধ অস্ত্রের, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির বিশেষ অভিযান

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : রাজধানীসহ সারাদেশে উঠতি মাস্তান, পেশাদার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী এমনকি কিশোর গ্যাংয়ের হাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। বিভিন্ন সীমান্তপথে আসছে এসব অস্ত্র। নানা কৌশলে এর চালান হাতবদল করছে একাধিক চক্র। চক্রগুলো অস্ত্রের ভুয়া লাইসেন্সও তৈরি করছে। যশোর, খুলনা, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রিক ভারতীয় অস্ত্র চোরাচালান চক্র তৎপর রয়েছে। আর বান্দরবান ভিত্তিক গ্রুপগুলো অস্ত্র আনছে মিয়ানমার থেকে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযানে জোর দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাগিদে পুলিশ সদর দপ্তর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অভিযানে ধরা পড়ছে অস্ত্রের চালান।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান গতকাল বুধবার ভোরের কাগজকে জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চলছে। বিশেষ দিবস বা দিনকে সামনে রেখেও বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মুখপাত্র, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অস্ত্র উদ্ধার অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান জোরদার করতে সম্প্রতি সবকটি ব্যাটালিয়ানে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত রবিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বলা হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সরকার জানতে পেরেছে, বর্তমানে দেশে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র আসছে। অবৈধ ও বেআইনি এসব অস্ত্র উদ্বেগজনক। এজন্য সেগুলো উদ্ধারে অভিযান চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি। কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম

মোজাম্মেল হক জানান, অনেকেই অস্ত্রের জাল লাইসেন্স বানিয়ে নিয়েছে। সেজন্য লাইসেন্স যাচাই-বাছাই এবং অবৈধ অস্ত্র ধরার জন্য বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে আছে, সেসব অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। যাদের বিষয়ে তথ্য থাকবে, তাদের ঘিরেই অভিযান হবে। সাধারণ মানুষ যেন ভীতসন্ত্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে গত রবিবার রাতে র‌্যাব-২ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চা?লি?য়ে অবৈধ অস্ত্র কারবারি চক্রের চক্রের ৬ সদস?্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হ?লেন- চ?ক্রের মূল?হোতা মো. পলাশ শেখ (৩৮), তার সহযোগী মো. মনোয়ার হোসেন (৩২), রশিদুল ইসলাম (৪০), নাজীম মোল্লা (৩৫), মারুফ হোসেন (২৪) ও মো. নাইমুল ইসলাম (২২)। তা?দে?র কাছ থে?কে বিপুল পরিমান দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও ভুয়া লাইসেন্স উদ্ধার করা হ?য়। এই চক্রটির মূল কাজ ছিল পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ এবং ভুয়া লাইসেন্স তৈরী করে বিভিন্ন বেসরকারী সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার প্রলোভনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে অবৈধ অস্ত্র বিক্রয় করা। চক্রটি ভারত থেকে রিভলবার, পিস্তল ও এক নলা বন্দুকসহ বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র অবৈধ পথে দেশে নিয়ে আসে। পরে আগ্রহী চাকরি প্রার্থীদের কাছে জাল লাইসেন্সসহ অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করে এবং চাকরি দিয়ে থাকে।
জানা গেছে, সীমান্ত পাহারার দায়িত্ব বিজিবির। তবে বিশাল এলাকার অনেক অংশ এখনো অরক্ষিত। এই সুযোগে চলছে চোরাচালান। এর মধ্যে ভারতীয় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বড় বাজার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। আর ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশে পাচারের জন্য অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কারখানা আছে। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার গাবতলী থেকে একটি প্রাইভেটকারসহ পাঁচজনকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ম্যাগজিন ও গুলিসহ আটটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ভারতীয় অবৈধ অস্ত্রের বাংলাদেশে চোরাচালান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ। তিনজন ভারতীয় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীর বিস্তারিত সেখানকার কর্তৃপক্ষকে জানায় বাংলাদেশ পুলিশ। আটকদের কাছ থেকে পাওয়া ফোন নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন গোয়েন্দারা।
তারা গোয়েন্দাদের জানায়, যত প্রয়োজন তত অস্ত্র দেয়া যাবে। ভারত থেকে যেসব অস্ত্র আসে তা ওয়েল ফার্নিসড বলে জানান পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা। এসব আগ্নেয়াস্ত্র বাংলাদেশে সর্বনি¤œ ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। চক্রটি ২০১৪ সাল থেকে ভারত থেকে অস্ত্র আনছে। ওইসময় আটকদের একজন আকুল হোসেন যশোরের ছাত্রলীগ নেতা। যশোর সীমান্ত দিয়েই প্রধানত ভারতীয় অস্ত্র আসে। বেনাপোল সীমান্তের কাছে পুটখালী নামে একটি গ্রাম আছে। তার অপরদিকে ভারত। ভারতের ওই এলাকায় কমপক্ষে তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ী আছে যারা বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠায়। ভারতে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে অবৈধ অস্ত্রের কারখানা আছে।
সূত্রমতে, সীমান্তের ওপারে ভারতীয় গ্রামগুলোতে খড়ের গাদা, মাটির গর্ত, পুকুরের মধ্যে পলিথিন নিয়ে সুরক্ষিত করে অস্ত্র জমিয়ে রাখা হয়। এরপর সুযোগ বুঝে সীমান্তের গ্রামগুলোতে যারা ফসলের ক্ষেতে কাজ করেন তাদের মাধ্যমে কাঁটাতারের বেড়ার এপাশে একটি একটি করে অস্ত্র পাঠানো হয়। বাংলাদেশে যারা সেগুলো গ্রহণ করে তারাও সীমান্ত এলাকায় খড়ের গাদা, মাটির গর্ত বা পুকুরের মধ্যে প্লাস্টিক মুড়িয়ে লুকিয়ে রাখে। এরপর চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। এই অস্ত্র যশোর ও খুলনা হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়।
মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, অবৈধভাবে জমি দখলকারী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এসব অস্ত্রের মূল ক্রেতা। নির্বাচনের সময়ও এই অস্ত্রের চাহিদা বাড়ে। বাংলাদেশে ভারতীয় অস্ত্র চোরাচালানের যশোর ও খুলনা ভিত্তিক অন্ততঃ পাঁচ-ছয়টি চক্র আছে। এই চক্রগুলো আবার পারস্পরিক যোগাযোগ রাখে। তবে স্বার্থের দ্ব›দ্ব হলে একটি চক্র আরেকটি চক্রের তথ্য ফাঁস করে দেয়। ধৃত চক্রটি ২০১৪ সাল থেকে দুইশরও বেশি অস্ত্র ভারত থেকে আনার কথা স্বীকার করেছে। তারা শুধু পিস্তল নয়, রিভলবার ও বন্দুকও আনে। গুলিও ভারত থেকে আসে। প্রতিটি গুলি বাংলাদেশে বিক্রি হয় ১১-১২’শ টাকায়। চাহিদার ওপর নির্ভর করে আগাম অর্ডারের ভিত্তিতে তারা এইসব অস্ত্র আনে। যশোর সীমান্তের পাশে ইছামতিসহ আরো কয়েকটি ছোট ছোট জায়গা দিয়ে অস্ত্র ঢুকে।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৩১২টি অস্ত্রের লাইসেন্স আছে। তবে মাত্র ৪৩ হাজার ৩১২টি অস্ত্রের হালনাগাদ তথ্য পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি এবং সিআইডির কাছে রয়েছে। বাকিগুলোর কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। সেগুলো কী লাইসেন্সধারী ব্যক্তির হাতে রয়েছে না অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে সংশয়ে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দীর্ঘদিন সেই অস্ত্রগুলোর হালনাগাদ তথ্য না থাকায় হাতবদলের আশঙ্কা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়