মিজবাউল হক, চকরিয়া : সিংহ ‘রাসেল’ ও সিংহী ‘টুম্পা’। তারা ভাইবোন। উভয়ের জন্ম কক্সবাজারের চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। ২০০৭ সালে রাসেল ও ২০০৮ সালে টুম্পা জন্মগ্রহণ করে। ভালোই কাটছিল তাদের দিনকাল। হঠাৎ নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেয় তারা। শারীরিক ওজন কমতে থাকে ভাইবোনের। দ্বারস্থ হতে হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। শনাক্ত হয় উভয়েই এনাপ্লাজমা ও বিউবমিয়া স্পিসিসে আক্রান্ত।
প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি তাদের। ২১ দিনের ব্যবধানে মারা যায় রাসেল ও টুম্পা। টুম্পা মারা যায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টায়। এর আগে ৩১ জানুয়ারি মারা যায় ভাই রাসেল। এ নিয়ে গত এক বছরে সাতটি প্রাণী মারা গেল। টুম্পার মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, দুই মাস আগে রাসেল ও টুম্পা ওই রোগে আক্রান্ত হয়। প্রথমে পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন চিকিৎসা করলেও দুই সিংহের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। ফলে গঠন করা হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। এই মেডিকেল বোর্ডের নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমল সায়েসেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর।
তাদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলাকালে ৩১ জানুয়ারি রাতে মারা যায় সিংহ রাসেল। টুম্পা মারা যায় ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টায়।
মাজহারুল ইসলাম আরো বলেন, টুম্পার মৃত্যুর পর মঙ্গলবার চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এরপর চকরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও পার্কের ভেটেরিনারি সার্জনের নেতৃত্বে সিংহী টুম্পার ময়নাতদন্ত করা হয়। এদিন বেলা ২টার দিকে সিংহী টুম্পার মরদেহ পার্কে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
বিভাগীয় কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত কারণে সিংহী টুম্পা মারা গেছে। মৃত টুম্পার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
উল্লেখ্য, সাফারি পার্কে গত এক বছরে টুম্পাসহ সাতটি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। তন্মধ্যে চারটি সিংহ, দুটি হাতি ও একটি জেব্রা মারা যায়। বেশ কিছু হরিণ রয়েছে নিখোঁজ। এব্যাপারে পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাফারি পার্কে সাড়ে ৩শর অধিক হরিণ রয়েছে। উন্মুক্ত এসব হরিণ পার্কের সীমানা প্রাচীরের অরক্ষিত ২১টি স্থান দিয়ে নিকটস্থ পাহাড়ে বের হলে শিকারীর কবলে পড়ে আর ফিরতে পারে না। তাই কিছুসংখ্যক হরিণ নিখোঁজ রয়েছে।