যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

তৈরি পোশাকের নতুন বাজার অনুসন্ধান করুন : প্রধানমন্ত্রী > তাঁতশিল্প আমাদের ঐতিহ্য তা ধরে রাখতে চাই

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা পোশাক এবং তা রপ্তানি নিয়ে কাজ করছেন তাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বিভিন্ন দেশের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তা মাথায় রেখে নতুন পণ্য তৈরি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে তিনি ছয়টি জেলায় ছয়টি টেক্সটাইল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও উদ্বোধন করেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বস্ত্র মন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন চিন্তাধারার সম্মিলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে দেশে আমরা একটি ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। ফ্যাশন ডিজাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোন সময়ে কোন রং ও ডিজাইন ব্যবহার হবে, কোনটার চাহিদা বেশি এটা একটা ঘুর্ণায়মান অবস্থা এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তাই এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট বা রপ্তানিকারক তাদের অনুরোধ করব আপনাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পোশাক ব্যবহার হয়ে থাকে সেভাবে আমরা নতুন বাজার খুঁজে বের করতে পারি।
আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বড় ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা উপযুক্ত করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে

তুলছি। আমাদের যুব সমাজ অত্যন্ত দক্ষ। তাদের একটু প্রশিক্ষণ দিলেই তারা উন্নতমানের কাজ করতে পারে। মানুষ যাতে দ্রুত সেবা পায় সেজন্য বস্ত্র অধিদপ্তরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ই-নথির মাধ্যমে বস্ত্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা এখন সহজে ও স্বল্প সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় সেবাগুলো নিতে পারছেন।
নতুন যে ছয়টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট চালু হচ্ছে সেগুলো হলো- শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, গোপালগঞ্জ’, ‘শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, গৌরনদী, বরিশাল’, ‘শহীদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মান্দা, নওগাঁ’, বেগম আমিনা মনসুর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ’, ‘ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট’ এবং ‘শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মাদারগঞ্জ, জামালপুর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক আমরা রপ্তানি করেছি। সেদিক থেকে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে এই খাত। গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের কাজের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে তারা বিশেষ অবদান রাখছে। প্রতিটি পরিবারও আর্থিক সক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে। এ সময় তিনি জাতির পিতার দেয়া ভাষণের অংশবিশেষ তুলে ধরেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার ক্রমেই স¤প্রসারিত হচ্ছে। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে বিনা দ্বিধায় এ আশ্বাস আপনাদের দিতে পারি যে, আমাদের আমদানি নির্ভর অর্থনীতি প্যাটার্ন খুব শিগগিরই পাল্টে যাবে এবং জিনিপত্রের দাম কমানোও সম্ভব হবে।’ আমরাও সেটাই বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁতশিল্প আমাদের ঐতিহ্য। আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। কারণ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প হচ্ছে তাঁতশিল্প। দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ তাঁতশিল্প যোগান দিয়ে থাকে। তাঁতিদের ব্যবহার্য উপকরণে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ও সমুদয় মূল্য সংযোজন কর মওকুফ করে আমদানির সুযোগ দিচ্ছি।
নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে বিখ্যাত ঢাকাই মসলিনের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময়ের শুধুই ধনীদের পোশাক ঢাকাই মসলিন কাপড় নতুন করে সবার সামর্থ্যরে মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। ঢাকাই মসলিন কাপড় সবার কাছে পৌঁছে দিতে যারা কাজ করছেন, তাদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি এই উচ্চমূল্যের পণ্যটি সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য গবেষকদের কাজ করারও তাগিদ দেন তিনি।
পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বে আবার পাট ও পাটজাত পণ্যের কদর বেড়েছে। তবে, পোশাক শিল্পকে যতটা প্রণোদনা দিয়ে থাকি, সেক্ষেত্রে পাট কৃষিপণ্য হওয়া সত্ত্বেও যে সুযোগ পাচ্ছে না। সে সুযোগ দেয়া একান্ত প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর পরিবেশ রক্ষার জন্য পাটজাত পণ্যের বিকল্প কিছু হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা উপকরণের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে একটি কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। তারপরও কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা ব্যয় সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পদক্ষেপও আমরা নিচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়