যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

অগ্রগতির যাত্রায় সংস্কৃতির সংকট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা নিয়ে কিছু বলতে গেলে প্রথমইে অগ্রযাত্রা শব্দটির মৌলিক অর্থকে বোধগম্যে আনা দরকার। অগ্রযাত্রা মানে সম্মুখযাত্রা, সামনে এগুনো। যে গমন করে সে অগ্রপথিক, যে এগিয়ে থাকে সে অগ্রগামী এমনি অগ্র মানে সম্মুখ মানে সামনে অর্থাৎ একটা পজিটিভ ধারণা সম্বলিত শব্দ। এই যাত্রা সংকুচিত নয়, অ-স্বাচ্ছন্দ্যের নয়, বরং প্রতিমুহূর্তে নতুনের দিকে শোভন গমন সুন্দরের দিকের । আমরা বলতে পারি প্রগতির দিকে গমন মানে আধুনিকতার দিকে যাত্রা। সেখানে সংকট অতিক্রমণের প্রবণতা থাকে। নানাবিধ বিপত্তি থাকাও স্বাভাবিক। কিন্তু অগ্রযাত্রা তাতে থেমে থাকেনা বা মুখথুবড়ে পড়েনা। তার শক্তি সাহস যাত্রার প্রস্তুতি ও উদ্যম সবই পরিকল্পিত রীতি ও নীতির মধ্যদিয়ে এগিয়ে যায়, এগিয়ে নেয় মানুষ।
‘নৃ-বিজ্ঞানীরা বলেন মানুষের জীবনের সাংস্কৃতিক বিকাশ ও মনন-উৎকর্ষ জীবিকা-পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। জীবিকা-পদ্ধতি আবার প্রকৃতিক প্রতিবেশের সংগে যুক্ত। দুনিয়ার সর্বত্র সে-প্রতিবেশ অভিন্ন নয়।’ [ড.আহমদ শরীফ, সমাজ সংস্কৃতির স্বরূপ] । একথা যেমন সত্য তেমনি এও সত্য যে সংস্কৃতি স্থবির কোনো বিষয়ও নয়। এক জাতির সংস্কৃতি সেই যুগ থেকে এই যুগ পর্যন্ত জাতিতে জাতিতে আদান-প্রদান হয়ে পরষ্পরের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ ও নতুন ভাবনার সুযোগ করে দিচ্ছে। আবার চক্রান্তমূলক ভাবে উৎকট উগ্র-সংস্কৃতি আধিপত্যবাদী টাইপ চালান দিয়ে কোনো একটি জাতির সুদীর্ঘকালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দুর্বল করে নিজস্ব ফায়দা লুটছে। ফলে আমরা আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিক জীবনবোধে ভাঙন দেখছি।
জাতির সুদীর্ঘকাল ধরে ব্যবহারিক জীবনের ভাবনা, চিন্তা,অভ্যেস,রুচির মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা মানস যা একই সমাজে রাষ্ট্রে বসবাসরত মানুষকে পরস্পররের সাথে যুক্ত করে এবং জাতির অস্তিত্বের ভিত্তিভূমি সুদৃঢ় করে। তাই একটি জাতিকে পদানত করতে হলে তার সংস্কৃতির অহংকে বিনাশ করতে হয়। সে কাজটি যত নিপুণ ভাবে চক্রান্তকারী শক্তি করতে পারে ততই জাতির আত্মিক পরিচয়ে ক্ষয় ধরে এবং দুর্বল হয়ে পড়ে । সমায়ন্তরে পদানত হয়। জাতীয় অহংকে চূর্ণ করে জাতিকে অন্যের সেবাদাসে পরিণত হবার মানসিকতা তৈরি কারে দেয়। জাতীয় জীবন টেরই পায়না কখন কিভাবে তার সিন্দুকের চাবিটি ম্যাজিকের মতো তার হাতছাড়া হয়ে গেছে।
০২.
সংস্কৃতি যদিও নিজ পরিমণ্ডলের ব্যবহারিক রীতিনীতি, অভ্যেস-রুচি, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ধর্ম ও সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে প্রতিমুহূর্তে বিবর্তিত হয়, হচ্ছে আর এতে করে নতুন চিন্তা নতুন ভাবনা নতুন বোধও গড়ে উঠছে সমাজ রাষ্ট্র পরিমণ্ডলে। এই যে বিবর্তন এতে রয়েছে পারস্পরিক যোগাযোগ, পরস্পরের সংগে প্রতক্ষ-পরোক্ষ রাষট্রীয় সংযোগ। যা অতীতে বেশি ঘটেছে গ্রেট এক্সসোডাসের কালে আবার মধ্যযুগে দখলবাজদের আগমন অবস্থানের মধ্যদিয়ে। এ ছাড়া ব্যবসায়িক ক্রিয়ায়ও এক স্থান থেকে অন্যস্থানে একদেশের মানুষ অন্যদেশে, গমনাগমন সূত্রে স্ব-সংস্কৃতিতে নতুন উপাদান যোগ করেছে। তাই মূল ভিত্তিটি সুদৃঢ় থাকলেও কিছুনা কিছু রদবদল ঘটে গেছে সময়ের ব্যবধানে, তবে রাজনৈতিক কারণেও অনেক সময় শাসকের সংস্কৃতি জনগণের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। ভারতের আর্য আগমন মোঘল আগমন আফগান ও তুর্কি দখল কেবলমাত্র ব্যক্তিকেই স্থাপন করেনি, তাদের সংস্কৃতিকেও অনেকটা স্থানদিতে হয়েছে আর তা কেবল হুবহু নয়, খানিকটা মিশ্র-আকারে। তেমনি বাঙালি সংস্কৃতি যার ধারাবাহিকতা আর্য-অনার্য সংস্কৃতি তাতেও স্থানীয় সংস্কৃতির রূপটি মিলে তৈরি করেছিল জাতীয় বোধ। আবার বৃটিশরা এসে তাদের সংস্কৃতিও যুক্ত করে ভারতীয় সংস্কৃতির রূপের খানিকটা বদল ঘটিয়েছে। সনাতনী মহাভারতীয় সংস্কৃতি আর টিকে থাকেনি হুবহু, বরং তাও যুক্ত থেকে মিশে গেছে বৃহত ¯্রােতে। নানা ভাবেই একটি জাতীয় সংস্কৃতি কলুসিত আবার অন্যধারায় বিকশিত হয়েছে, আর এভাবেই গ্রহণ বর্জনের মধ্যদিয়ে রীতি, রীতি থেকে নীতি আর নীতি থেকে যেটুকু অটুট টিকে গেছে তাই হয়েছে ঐতিহ্য। হ্যা যদি নিজ সংস্কৃতি মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষের মনে মননে স্থায়িত্বেও রূপ পায় সে ক্ষেত্রে বাহ্যিক এই আক্রমণগুলো খুব বেশি শক্তিশালী হয়ে দেহকাণ্ডকে দুর্বল করতে পারেনা ঐতিহ্যের সুঠাম দেহ কাণ্ডের কারণে। বরং অই সকল প্যারাসাইড ও সংকুচিত সম্প্রসারিত হয়ে মূল সংস্কৃতির কাণ্ডে পুষ্টি জোগায়। ক্রমাগত এই সংস্কৃতির বিবর্তণ ধারা জাতির সমাজজীবনকে আধুনিকায়নের দিকে প্রসারিত করে। যুক্ত করে জ্ঞান-বিজ্ঞান চেতনায়।
০৩.
আসলে ‘সংস্কৃতি সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনসংগ্রাম থেকে জন্ম নেয়। সমাজজীবনে মানুষের টিকে থাকবার লড়াইয়ে তার বেদনা ক্ষোভ ক্রোধ বীরত্ব জীবনতৃষ্ণা আনন্দ ও সৃজনশীলতার যে বোধ তার চেতনায় আলোড়িত হয়, তারই নানামুখি প্রকাশ সংস্কৃতি’। এর ব্যবহারিক দিক যা সমাজের মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে নিত্য ব্যবহারে, অভ্যেসে আচরণে প্রয়োগকরে, অন্যটি নানা মাধ্যমে চেতনা জগতে যে ভাব বিরাজমান তার প্রকাশ ঘটায় সৃষ্টিশীল কাজে। যদিও আমরা শিল্প-সাহিত্য-কাব্য-সংগীত-নৃত্য-অঙ্কন-নির্মাণে ব্যবহার করি তার শুভদিকগুলো প্রতিফলিত হয় জাতীয় চরিত্রে এবং সংস্কৃতির মূলধারাকে বলবান করে। সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা আকস্মিক নয়, ধারাবাহিকতা জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত হয় এবং রাষ্ট্রীয় ঐক্যে, সংহতিতে অবদান রাখে। আবার রাষ্ট্রীয় নীতি, সুশাসন, যদি জনলগ্ন না হয়, জনকল্যাণে উন্মুখ না থাকে, তা হলে বুঝতে হবে অপসংস্কৃতির ছায়া ঘনো হয়েছে এবং জাতীয় জীবনে তা আছড় করেছে। ফলে লুট, পাচার, আত্মসাৎ, দখল, অসততা, টাউটবাজি, ভেজাল ইত্যাদির আধিক্য বেড়ে যায। এবং দেখা যায় উন্নয়ণ মানব লগ্ন না হয়ে একশ্রেণির প্রকৌশলী ও ঠিকাদার ও রাজনৈতিক দলবাজীর লোকদের উন্নয়ণে খরচ হয়ে যায়। কারণ সংস্কৃতি যে নৈতিকতা যে ঐতিহ্য এতোকাল জাতির মানসে একটা বর্মহিসেবে কাজ করেছিল তাতে ক্ষয় ধরেছে এবং এর ফাক দিয়ে কতিপয় যেমন উগ্রধনলোভে ঝাপিয়ে পড়েছে অন্যদিকে জনগণ চেতনা হারিয়ে প্রতিবাদ প্রতিরোধ নতুন নির্মাণে তাদের করণীয় ভুলে গেছে। সংস্কৃতি যে কতশক্তিশালী একটি বিষয় রাষ্ট্রশক্তি যতদিন গুরুত্ব সহকারে উপলব্ধি করতে না পারবেন ততদিন নানা জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় মুখোমুখি হতে হবে বিব্রতকর পরিস্থিতির।
০৪.
আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গনটি একসময় কতটা শক্তিশালী ছিল তা আমরা বিগত ৬০ বছরের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর দিকে আলোকপাত করলে সহজেই উপলব্ধি করতে পারবো। ভাষা, সংস্কৃতি বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যার মধ্যদিয়ে আমরা পরস্পরের সংগে যোগ বিয়োগ ঘটাই। এই ভাষা নির্মাণে কবি সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদদের যে অক্লান্ত শ্রম রয়েছে রাষ্ট্রশক্তি তার দিকে নজর দিয়েছে সব কালেই ভাসা ভাসা। না দিলে যেন নয় এমন একটা ভাব থেকে। বঙ্কিম, মাইকেল, রবীন্দ্র, নজরুল এই মহাত্মারা বাংলাভাষাকে সমাজ মানসের সংগে সঙগতি রেখে স্তরিক উন্নতিতে অবদান রেখে গেছেন। ফলে ভাষার গম্যতাও মানুষকে সংস্কৃতি লগ্ন করেছে। রবীন্দ্রনাথই ভাষার গতিবেগ সৃষ্টিতে, বলার বেগ তৈরিতে ভাষার আরষ্টতাকে মুক্ত করে আমাদের সংস্কৃতিকে বলবান করে গেছেন। তাদের এই বর্ম পরবর্তিতে আমাদের আত্মরাক্ষা ও নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টিতে যে ঐক্য ও একাত্মবোধ সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল তা গড়ে তুলেছিল। পাকিস্তানিরা যখন প্রথম অগণতান্ত্রিক আধিপত্যবাদী মনেবৃত্তিদ্বারা বাঙালি সমাজকে ভেঙে সংস্কৃতিহীণ এবং ভাষাহীন করার পায়তাড়া করেছিল, এই ভাষা সংস্কৃতিই তাকে রুখতে পেরেছিল। যদি সেদিন এই মহান মানুষদের তৈরি সংস্কৃতির বর্মটি আমাদের সামনে রক্ষাব্যুহ হয়ে না দাঁড়াতে পারতো তা হলে আমরা পাকিস্তানিদের পদানতই থাকতাম।
সুতরাং সংস্কৃতির অখণ্ড রূপটির মধ্যে শিল্প-সাহিত্য-নাটক-কাব্য-অঙ্কন-স্থাপত্য-জারি, নৃত্য, ধর্ম-দর্শন, যোগাযোগ, টেকনোলজি, সংগীত- কীর্তন-ভাবসংগীত এমন কী শরীর ভঙি, শিক্ষা ও ব্যবহার, লোকজ জনপ্রিয় বিষয় ও বিশ্বাস সবগুলোর যুক্ততায় সংস্কৃতির ভূমি। এবং এগুলোই সংস্কৃতির পুষ্টি। চলন-বলন-পরন-কথন-অভ্যেস-রুচি-লেনদেন-ক্রয়-বিক্রয়-ঘুম, আহার বিশ্রাম এসবই হচ্ছে সংস্কৃতির ব্যবহারিক রূপ। মোট কথা কোনো একটা মানব গোষ্ঠীর একই সমাজে রাষ্ট্রে বসবাসরত আকারে প্রকারে সকল কাণ্ডই সংস্কৃতির গোটা অবয়ব। যেমন একজন মানুষ সমাজ সত্তার একটি ক্ষুদ্রতম অংশ তেমনি একজন মানুষ আবার গোটা সমাজেরই অংশ। এমনি ভাবে উল্লেখিত ক্রিয়াগুলো সংস্কৃতির একটি ক্ষুদ্র এককের তেমনি মিলে-মিশে আবার সংস্কৃতিরই বৃহতরূপের তল একই তলের।
০৫.
অনস্বীকার্য সংস্কৃতির এই রূপটি একদিনে এককালে একসমাজের আবদ্ধতায় গড়ে ওঠেনা। একটি জাতির গঠন ক্রিয়ায় এর যেমন গুরুত্বপূর্ণ এবং অনস্বীকার্য ভূমিকা থাকে তেমনি এর রূপটি নানা কিছুর সংগে যুক্ত হয়ে নানা ব্যবহারিক ও প্রয়োজনীয় ক্রিয়ায় বদলাতে থাকে। এই বদল যখন সমাজবদ্ধ মানুষের সম্মতি পায়, গ্রহণের সীমায় উপনীত হয় তখন সে মূলধারার সংগে যুক্ত হয়ে চলমান সংস্কৃতিতে পুষ্টি জোগায়। আর্য সমাজের আধিপত্যে যারা নিজ সংস্কৃতি হারিয়েছিল কালধারায় আর্যসংস্কৃতিও প্রাগ-সমাজের চলমান সংস্কৃতির সংগে মিলে একটা নতুন সংস্কৃতির জন্মদিলে ও এই দেশের এই মাটির সন্তানরা তাকে আত্মিকরণ করে নিয়েছিল এক শাসকের অভিপ্রায়, দুই নতুন সংস্কৃতিতে সহজতর কতগুলো উপাদান বিদ্যমান থাকায় ব্যবহারিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছিল বলে। অবশ্য তা না করে তো তাদের উপায়ও ছিলনা। বিশ্বের বহু জনগোষ্ঠী এরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে উপনিবেশিক শাসনের কারণে। বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশ ও জাতি ভৌগলিক স্বাধীনতা পেয়েছে কিন্তু লুক্কায়িত রয়েছে সেই সব সংস্কৃতির বীজ যা মোচন খুব শিঘ্র এবং দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে তড়িৎ নিদান সম্ভব নয়। সামন্তবাদী সংস্কৃতি দাসভিত্তিক সংস্কৃতির চেয়ে উন্নতছিল। প্লাটো বা এরিস্টেটল যে সমাজের দার্শনিক সে সমাজটি ছিল দাস সমাজ। ফলে সেই সমাজের মধ্যের চিন্তাগুলোও আরো পরিপূর্ণরূপে বাঁধনহারা হয়ে উঠতে পারেনি এবং দর্শনচিন্তাও ভাববাদকে মুক্ত করে বস্তু ও বস্তুজগৎকে মৌলিক ভাবতে দ্বিধান্বিত ছিল। যদিও এরিস্টেটল বলেছেন প্রেরণা বস্তু লগ্ন, কিন্তু তিনি নানা রূপ দেবদেবীতে বিশ্বাস রেখে গেছেন। বিশ্বাস রেখেছেন অভিজাত শ্রেণির শাসনের উপর। দাসদের তিনি নিকৃষ্ট মানুষই মনে করেছেন। সে সময়ও অভিজাত শ্রেণির বিরুদ্ধে কোন মত প্রকাশ প্রচার খুব একটা সুনজরের বিষয়ও ছিলনা।
সমাজ বদলের সংগে সংগে সংস্কৃতির রূপটিরও বদল ঘটে, বহু কিছু ঝরে পড়ে, বহুকিছু যুক্ত হয়। এই যুক্ততাকে গ্রহণ করায় সংস্কৃতি লাভবানই হয় বটে কিন্তু ভয়ও থাকে। যদি সমাজ কাঠামোটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিতে দাঁড়িয়ে না থাকে যদি ভিক্ষাবৃত্তি জাতীয় চরিত্রের উপাদান হয়, তা হলে ভিক্ষাদাতা তার সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার জন্য দাস্যবৃত্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে উগ্র-নোংরা-আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির সংযোগ ঘটায় কৌশলে। কারণ এটা না করলে একশ্রেণির দালাল তৈরিতে পারঙ্গম না হলে তার ভিক্ষার প্রদানের সুফলটি সে ঘরে তুলতে পারেনা। যেমন বৃটিশ এসে তার শাসনের শিখণ্ডি তৈরি করেছিল সামন্ত শ্রেণির বোধবুদ্ধিতে তার সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে এব ং যদিও কালধারায় তার বহুকিছু আমাদের মূল সংস্কৃতির ¯্রােতে মিশে আছে, যাকে আমরা শনাক্তও আজ আর করতে পারিনা, এবং এর জন্য জাতিগত ভাবে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে, তেমনি সা¤্রাজ্যবাদী উগ্রসংস্কৃতিও মূল সংস্কৃতির ভেতর ঢুকে পড়ছে, যা দেখতে অনেকটা প্রগতিশীল কিন্তু তার ভিতর চরিত্রটির ধার অনেক খানি ক্ষতিগ্রস্থ করছে আমাদের সংস্কৃতির কর্মকাণ্ডকে। সে কারণেই মূল্যবোধের অবক্ষয় তীব্র হয়েছে এবং সৃষ্টিতে তার প্রতিফলন ঘটছে।

মতিন বৈরাগী
কবি ও লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়