এশিয়ান ইনডোর অ্যাথ. : স্বর্ণ পদক জিতে ইমরানুরের ইতিহাস

আগের সংবাদ

কোস্ট গার্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : উপকূলবাসীর প্রকৃত বন্ধু হোন

পরের সংবাদ

শেখ হাসিনার চমক ‘চুপ্পু’ : রাষ্ট্রপতি পদে আর কোনো প্রার্থী না থাকায় মনোনয়ন বৈধ হলে নির্বাচন কমিশন আজই চুপ্পুকে বিজয়ী ঘোষণা করবে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : রাষ্ট্রপতি পদে চমক দেখাবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা- এমন পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিল তার ঘনিষ্ঠ সূত্র। কিন্তু কেউই স্পষ্ট করেননি, সেই চমকটি কী? সঙ্গত কারণেই বিভিন্নজনের নাম ভাসছিল বাতাসে। অবশেষে সব অনুমান, জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার, তৃণমূল রাজনীতিক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেই ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসেবে বেছে নিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দল ও সরকারে বিভিন্ন সময় ‘চমক’ দেখানো শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপতি পদে চমক যে সঠিক সিদ্ধান্ত এতে দ্বিমত নেই কারোরই। বরং ছাত্র রাজনীতি, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কারাবরণ, বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সংখ্যালঘু নির্যাতনে তদন্তে কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সমন্বয়কারী, দুদকে দায়িত্ব পালনসহ ছয় দশকের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার চুপ্পুর। রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব সামলানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনীত স্বস্তির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সামনে দ্বাদশ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চুপ্পুর মতো একজন বিশ্বস্ত, দায়িত্বশীল ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হওয়ায় যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে নজর ছিল সবার। কে হচ্ছেন নতুন রাষ্ট্রপতি- এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু সব আলোচনা ছাপিয়ে অনেকটা চমকের মতো এসেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর নাম। আর কোনো প্রার্থী না থাকায় এখন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণার অপেক্ষা। বিধান অনুযায়ী, আজ সোমবার প্রার্থিতা বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বিবেচিত হলে নির্বাচন কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। এখন শুধু প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পালা। নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের

নির্ধারিত সময় গতকাল রবিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া আর কারো মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনই দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রপতি পদে একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় এখন আর ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
এর আগে গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং তাকে সমর্থন দেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছয় দশকের ক্যারিয়ারে বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে একাগ্রচিত্তে কাজ করছেন চুপ্পু। দুর্নীতিমুক্ত থেকে নিজের ক্লিন ইমেজের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি পদে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে ‘পারফেক্ট চয়েজ’ এর পরিচয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আপসহীন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্মুখসারির যোদ্ধা, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস চুপ্পুর। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা তদন্তে পরবর্তী সময়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান (সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদমর্যাদায়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চুপ্পু। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার কারণ ও সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিশনের দাখিলকৃত প্রতিবেদন সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করে। দুদক কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংক উত্থাপিত কথিত পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তার তৈরি তদন্ত প্রতিবেদন কানাডার আদালতেও সমর্থিত হয়। এমন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপ্রধান করা আওয়ামী লীগের দূরদর্শী রাজনীতির পরিচয়।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, আস্থাভাজন, ত্যাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কারাবরণকারী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সারথী, সাবেক বিচারক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। তাকে মনোনীত করে অত্যন্ত দূরদর্শী রাজনীতির পরিচয় দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আজ দুইভাগে বিভক্ত। একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের। এমন অবস্থায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ্বাসীকে রাষ্ট্রপ্রধান করার সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কর্মদক্ষতার পরিচয় তিনি আগেই দিয়েছেন, আমাদের জাতীয় জীবনে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন রাষ্ট্রপতি দূরদর্শিতার পরিচয় দেবেন, এটি আমার বিশ্বাস।
প্রসঙ্গত, আজ সোমবার রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাছাই এবং প্রত্যাহার আগামীকাল (১৪ ফেব্রুয়ারি)। একক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি পদে চুপ্পুকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। এদিকে সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছরের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী, তার ৫ বছরের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়