কেরানীগঞ্জের দগ্ধ সেই গৃহবধূর মৃত্যু

আগের সংবাদ

অনির্বাচিত সরকার এলে সংবিধান অশুদ্ধ হবে : অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

অনুসন্ধান-উত্তোলনে গুরুত্ব না দেয়ায় গ্যাস সংকট চরমে : অস্থির জ¦ালানি খাত

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : গ্যাস সেক্টরের উন্নয়নে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, অদক্ষ লোকবল, দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও উৎপাদনে গুরুত্ব না দেয়া এবং সর্বোপরি আমদানি নির্ভরতার কারণেই গ্যাস সেক্টরে আজ চরম সংকট বিরাজ করছে। একদিকে গ্যাসের স্বল্পতা, অন্যদিকে ঘন ঘন দাম বাড়ানোর কারণে গ্যাস খাতেও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকার দেরিতে হলেও দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র চিহ্নিত করে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে গ্যাস সংকট অনেকটাই কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার ব্যবসায়ীদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেয়ার কথা বললেও এখনো আশা জাগানোর মতো অবস্থা দৃশমান হয়নি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশীয় গ্যাস খাতেও নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস সেক্টরের সিস্টেম লস, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারলে এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।
এরইমধ্যে সরকার হঠাৎ করে শিল্পে গ্যাসের দাম সমন্বয়ের নামে আরো এক দফা দাম বাড়িয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় রাজধানীবাসী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের অভিযোগ ও ক্ষোভ কবে মিটবে সেই আশ্বাস সংশ্লিষ্টরা এখনই দিতে পারছেন না। গ্যাসের দাম সমন্বয়ের পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই দাম কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে সংগঠনের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকারের ভর্তুকি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম

বাড়ছে। এ কারণে আমরাও দাম বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু গ্যাসের দাম অসহনীয় হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এই সময়েই জ্বালানিতে ভর্তুকি বাড়ানো দরকার। এই সেক্টরে রাজস্ব আদায়েও সমন্বয় জরুরি।
অনুযোগ রয়েছে, গ্যাস সংকট নিরসনে এতোদিন জ¦ালানি বিশেষজ্ঞদের কোনো পরামর্শই সরকার আমলে নেয়নি। তবে দেরিতে হলেও দেশীয় ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনে সরকার জোরালোভাবে কাজ শুরু করেছে। পেট্রোবাংলা ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার গ্যাস কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। ভোলায় ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ কূপের খননকাজ চলছে। এই দুইটি কূপ থেকে আগামী ২ বছরের মধ্যে ৫ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। ভোলার শাহবাজপুরের টবগী-১ গ্যাস কূপ থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। সিলেট এলাকার ওয়াকওভার কূপগুলো খনন করে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এসব গ্যাসকূপের ৭০/৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের জোগান দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্র থেকে খুব শিগগিরই প্রতিদিন প্রায় ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। কূপটিতে ৭০ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুত আছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন। সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ পুনঃখনন কাজ শেষে গ্যাসের চাপ পরীক্ষা (টেস্টিং) শেষ হয়েছে। কূপে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাপ পাওয়া গেছে। কূপটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে। বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় থ্রি ডি সেসমিক জরিপ চলছে। সেই জরিপ থেকে নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। থ্রি ডি সেসমিক জরিপের পর শরীয়তপুর এলাকাতেও গ্যাস অনুসন্ধান সফল হয়েছে।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, অনেক বছর ধরেই গ্যাসের সমস্যা চলছে। কিন্তু গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান বন্ধ রেখে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি সমস্যা বাড়িয়েছে। আমদানি নির্ভরতা আজকের গ্যাস সংকট সৃষ্টি করেছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকায় ২০১০ সাল থেকে দেশের সম্ভাব্য স্থানগুলোতে গ্যাস অনুসন্ধান অব্যাহত রাখলে এখন অনেক গ্যাস পাওয়া যেত। বিশ্বজুড়ে জ¦ালানি সংকট তীব্র হওয়ার পর সরকার নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। ভোলার গ্যাস পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারলে আজ দেশজুড়ে এত বেশি গ্যাস সংকট হতো না। ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনতে হবে। স্থলভাগের অনেক স্থানেই সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গ্যাস অনুসন্ধানে সরকার কাজ শুরু করেনি। বঙ্গোপসাগরের বিশাল সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ অনেক আগেই শুরু করা যেত, কিন্তু তা হয়নি।
তিনি বলেন, বিতরণ সংস্থা তিতাসের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি কারোই অজানা নয়। সরকার সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিতাসের লোকজন অপরিকল্পিতভাবে কাজ করার কারণে রাজধানীতেও গ্যাস সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। রাজধানীতে বসবাস করেও মানুষ এখন মাটির চুলায় রান্না করছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলো এলপি গ্যাসের দাম নিচ্ছে ইচ্ছেমতো।
ভূতাত্ত্বিক ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, দেশে গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার খবরটি সঠিক না। অন্তত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে দেশে এখনো প্রায় ৩৪ টিসিএফ গ্যাসের মজুদ আছে। এই গ্যাস পেতে সরকারকে স্থলভাগে অনুসন্ধান জোরদার করতে হবে, পাশাপাশি সমুদ্রসীমাতেও অনুসন্ধান ও উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। তখন গ্যাসের উৎপাদন বাড়লে বিদ্যুতের উৎপাদনে ঘাটতি থাকবে না। স্থানীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে কিছু গ্যাস আমদানিও করতে হবে। ভোলার গ্যাস শতভাগ ব্যবহারের জন্য দ্রুত পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের গ্যাস আমদানিতে ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে। দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন বাড়াতে পাড়লে এই ব্যয় অনেক কমে যাবে। তাই দেশীয় অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দিতে হবে।
বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী এপ্রিল থেকে কিভাবে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করা যায় সেটার ব্যবস্থা করছি। ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দুই/এক মাসের মধ্যে দিতে পারব। ভোলায় পাওয়া গ্যাস বিকল্প উপায়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি বিদেশি কোম্পানি পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সরকারর কাছে প্রস্তাব দিয়েছে।
তিনি বলেন, আশার বিষয় হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে এক্সপ্লোরেশনের জন্য এখন বাংলাদেশের কাছে বিদেশিদের প্রস্তাব আসছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়ায় গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ শুরু করতে পারব। অথচ কয়েক মাস আগেও এই কাজের জন্য আমরা কোনো পার্টি পাইনি। তবে এজন্য সময় লাগবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়