মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৭০

আগের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

পরের সংবাদ

হুজির ৬ সদস্য গ্রেপ্তার : লাদেন ও মোল্লা ওমরের যুদ্ধসঙ্গী ছিলেন ফখরুল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গাজীপুর জেলার টঙ্গীর এক মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন মো. ফখরুল ইসলাম। পরে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান তিনি। পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মুফতি জাকির হোসেন পাকিস্তানের করাচিতে একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল-কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
মুফতি জাকির হোসেনের কাছ থেকে জিহাদি দাওয়াত পেয়ে সমরাস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে রাজি হন ফখরুল। এরপর আফগানিস্তানে গিয়ে শেখেন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা। ওই সময়ে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন ফখরুল। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধেও অংশ নেন তিনি। পরে দেশে এসে যোগ দেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি

সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে (হুজি-বি) । সবশেষ সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি। দাওয়াতি কার্যক্রমসহ অ্যাপসের মাধ্যমে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন ফখরুল। একই সঙ্গে ঘরে বসেই বোমা তৈরি করে দেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেছিল তার নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়া হুজি সদস্যরা। ওই হামলার মাধ্যমে তিনি জানান দিতে চেয়েছিলেন যে হুজি এখনো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।
গত শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফখরুলসহ ৬ হুজি সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ফখরুল ছাড়াও গ্রেপ্তার অন্য হুজি সদস্যরা হলেন- ফখরুলের ছেলে সাইফুল ইসলাম, সুরুজ্জামান, হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, দীন ইসলাম ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত নয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানে হুজির মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। এর ফলে সংগঠনটি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এই ফখরুল ইসলাম হুজির সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেন। ওই হামলার মাধ্যমে তিনি জানান দিতে চেয়েছিলেন হুজি এখনো নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।
ফখরুলের বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ওই বছর কাজের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান। সেখানে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। মুফতি জাকির আল কায়েদার জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করতেন।
ফখরুল ইসলামকে তিনি জিহাদের দাওয়াত দিলে ফখরুল তা গ্রহণ করেন। পরে জিহাদি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে যান ফখরুল। সেখানে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। ফখরুল ওই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন অস্ত্র চালনা শেখার পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন। প্রশিক্ষণকালে কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে-৪৭ সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় ৪ ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা ডিউটি করতেন।
তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি প্রশিক্ষণ নেয়ার পর আবার করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে অবস্থান করেন। এরপর করাচি ফিরে তিনি পরে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে এসে হুজিতে যোগ দেন। ২০০৫ সালে প্রথম গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর থেকে পলাতক ছিলেন। সা¤প্রতিক সময়ে ফের হুজির হাল ধরেন ফখরুল।
সিটিটিসির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, সশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগমাধ্যম ব্যবহার করে সাংঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন ফখরুল। তিনি সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী এবং বাংলাদেশের অন্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করতেন। এভাবে তারা যে কোনো সময়ে বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন।
পাশাপাশি বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ফখরুল ও তার ছেলে গ্রেপ্তার মো. সাইফুল ইসলাম অন্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। তারা রোহিঙ্গাদের সংগঠনে সম্পৃক্ত করতে মাঠে নামেন। ওই কার্যক্রমের অংশ হিসাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে তাদের বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা অনুদান দেন।
গ্রেপ্তার অপর আসামি হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ ‘মোরা সত্যের সৈনিক’র অ্যাডমিন ‘অস্থায়ী মুসাফির’ হিসেবে ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি পরিচালনা করেন। পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতি’র কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট শেয়ার করে। একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানো সংক্রান্ত বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করে। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড অ্যাপসের চ্যানেল থেকে পাওয়া কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুই-একজনকে হাতে-কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, তারা ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) দেয়া-নেয়া করত। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছে সিটিটিসি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়