মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৭০

আগের সংবাদ

রাজশাহীর জনসভায় শেখ হাসিনা : আ.লীগ কখনো পালায় না

পরের সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্যাতনে ফের কৃষ্ণাঙ্গ যুবক হত্যা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : জর্জ ফ্লয়েডের গলায় মার্কিন পুলিশের বুটের ছবি দৃশ্যপট থেকে এখনো মিলিয়ে যায়নি। এরই মধ্যে নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাপিয়ে আবারো গোটা দুনিয়ার চোখ ঝাপসা করে দিল মিসিসিপি রাজ্যের মেমফিসের টায়ার নিকোলস। বিশ্বের বিবেককে নাড়িয়ে দিল আবারো। মনে করিয়ে দিল সেই পুরনো মর্মবেদনার কথা।
গত ৭ জানুয়ারি ২৯ বছর বয়সি নিকোলসকে ট্রাফিক আইন অমান্য করার অপরাধে আটকায় পুলিশ। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ভয়ে তিনি দৌড় দিলে পুলিশ সদস্যরা তাকে পাকড়াও করে বর্বর নির্যাতন চালান। তার মুখে একাধিক লাথি ও ঘুসি মারেন তারা। ৫ জন পুলিশের দীর্ঘ নির্যাতনের শিকার হন নিকোলস। এর ৩ দিন পর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ পুলিশ সদস্যকে এরই মধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক টায়ার নিকোলসকে ৫ পুলিশ কর্মকর্তার নির্মম মারধরের ভিডিও গত শুক্রবার প্রকাশ করেছে মেমফিস শহর কর্তৃপক্ষ। ভিডিওতে দেখা যায় নির্যাতনের সময় ‘মা মা’ বলে আর্তনাদ করছিলেন নিকোলস। চিৎকার-আর্তনাদের পরও তার ওপর সংঘবদ্ধ নির্যাতন হয়।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

বলেছেন, এই ভয়ানক ভিডিওটি দেখার পর তিনি ক্ষুব্ধ এবং অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন। তিনি মেমফিসের প্রতিবাদকারীদের শান্ত থাকারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোয় নিকোলসকে আটক করা হয়। যে ৫ পুলিশ সদস্য নিকোলসের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন তারাও সবাই কৃষ্ণাঙ্গ। মেমফিস পুলিশের পক্ষ থেকে সব মিলিয়ে ৪টি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ নিকোলসকে গাড়ি থেকে বের করে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলছে। এ সময় নিকোলস বলেন, আমি কিছু করিনি। আমি বাড়ি যাচ্ছি। এ সময় এক অফিসার তাকে গালাগাল দিয়ে বলেন, মাটিতে শুয়ে পড়ো। আরেকজন নিকোলসকে টেজার দিয়ে ইলেকট্রিক শক দিতে বলেন। অন্য আরেকজন অফিসার চিৎকার করে বলেন, আমি তোমার হাত ভেঙে দেয়ার আগে হাত পেছনে রাখ। পুলিশের এমন আচরণে ভয় পেয়ে যান নিকোলস। তিনি বলেন, আপনারা এখন অনেক বাড়াবাড়ি করছেন। আমি বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ওই মুহূর্তে নিকোলসকে ইলেকট্রিক শক দেয়া হলে তিনি দৌড় দেন।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিকোলসকে আবার আটক করে মাটিতে ফেলে দেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ভিডিওতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিকোলসকে চেপে ধরে রাখতে এবং একজনকে তাকে লাথি মারতে দেখা গেছে। এ সময় বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। চতুর্থ আরেক কর্মকর্তাকে সম্ভবত লাঠিজাতীয় কিছু একটা দিয়ে আঘাত করতে ও পরে ঘুসি মারতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে তাকে মাটিতে পড়ে নড়াচড়া করতে দেখা যায়। পরে নিথর অবস্থায় নিকোলসকে পুলিশের একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপর এক পুলিশ কর্মকর্তার শরীরে থাকা ক্যামেরাতেও নির্যাতনের চিত্র উঠে এসেছে। ওই ভিডিওতে মারধরের সময় নিকোলসকে ‘মা মা’ বলে ডাকতে শোনা যায়। সব শেষ একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নিকোলস মারাত্মক আহত হয়েছেন এবং তার মাথায় রক্ত। এ সময় তিনি কোনো কথা বলছিলেন না।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে প্রথম জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী পৌঁছানোর প্রায় ১৯ মিনিট পর সেখানে স্ট্রেচার পৌঁছায় বলেও ভিডিওতে প্রমাণ মিলেছে।
নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে নিকোলসের মা রোভন ওয়েলস জানান, তার ছেলেকে বাড়ি থেকে মাত্র ২৩০ ফুট দূরে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, কোনো মায়েরই যেন সেই অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়। যে সহিংসতার মধ্য দিয়ে আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি, এমনভাবে কোনো মা যেন তার সন্তানকে না হারান।
ভিডিওটি প্রকাশের পর বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী মেমফিসে জড়ো হয়ে ‘পুলিশের বিচার নেই, জীবনে শান্তি নাই’, স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা ‘পুলিশি সন্ত্রাস বন্ধ কর’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে মহাসড়ক ইন্টারস্টেট ৫৫-র এক স্থানে যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেন।
ভিডিও প্রকাশের আগে মেমফিসের পুলিশপ্রধান সেরেলিন ডেভিস ও নিকোলসের পরিবারের আইনজীবীরা ভিডিওতে থাকা নির্মমতা এবং এর কারণে সৃষ্ট ক্ষোভ নিয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি জনগণকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। নিকোলসের পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করা নাগরিক অধিকার আইনজীবী বেন ক্রাম্প এর আগে মেমফিসের পুলিশের প্রতি তাদের ‘স্করপিয়ন ইউনিট’ বিলুপ্ত করে দেয়ার আহ্বান জানান। সড়কে সহিংস অপরাধ নিয়ে কাজ করা এই স্কোয়াডের কয়েকজন ৭ জানুয়ারির ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
৪ বছর বয়সি এক সন্তানের পিতা নিকোলস দক্ষ স্কেটবোর্ডার ছিলেন, স¤প্রতি তিনি ফটোগ্রাফি ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার সেক্রেমেন্টোতে বেড়ে উঠলেও করোনা ভাইরাস মহামারির আগে নিকোলাস মেমফিসে চলে যান এবং মা ও সৎ বাবার সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। তিনি ফেডএক্সে কাজ করতেন এবং প্রতিদিন বিরতিতে মায়ের বানানো খাবার খেতে বাসায় যেতেন।
৬ লাখ ২৮ হাজার অধিবাসীর শহর মেমফিসের ৬৫ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাইডেন তার সহমর্মিতা প্রকাশে নিকোলসের মা রোভন ওয়েলস এবং সৎবাবা রডনি ওয়েলসের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। বিক্ষোভ যদি সহিংস আকার ধারণ করে, তাহলে কী করতে হবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডও নিকোলসের মৃত্যু নিয়ে ‘ফেডারেল সিভিল রাইটস’ তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। নিউইয়র্ক, আটলান্টা, ওয়াশিংটনসহ একাধিক বড় শহরের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা নিকোলসকে মারধরের ভিডিও প্রকাশের পর সম্ভাব্য বিক্ষোভ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২০২০ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনেয়াপোলিস শহরে পুলিশের নির্যাতনে আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। গ্রেপ্তারের সময় ৪৮ বছর বয়সি ফ্লয়েডের গলার ওপর মিনিটের বেশি সময় হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন। বিচারে শভিনকে ২২ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জে আলেকজান্ডার কুয়েংকে সাড়ে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়