শিমুর মেয়েকে বাবা : ‘মা ভুল করেছি মাফ করে দিও’

আগের সংবাদ

স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি : যে ফর্মুলায় স্মার্ট বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র : পাহারার মধ্যে তালাবদ্ধ ঘর থেকে দামি যন্ত্র চুরি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, বাগেরহাট : বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে সশস্ত্র পাহারার মধ্যে তালাবদ্ধ ঘর থেকে গায়েব হয়ে গেছে কয়লার মান নির্ণয়ের একটি দামি যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের ‘বোম্ব ক্যালরিমিটার’ যন্ত্রটি কয়লার অভাবে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরদিন ১৫ জানুয়ারি চুরি হলেও এখনো তা উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তথ্য জানিয়ে রামপাল থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুদ্দিন জানান, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পরীক্ষার যন্ত্র চুরির ঘটনায় আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) মো. অলিউল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে কারো নাম নেই। বলা হয়েছে, ‘অজ্ঞাতনামা চোর/চোরেরা সকলের অজান্তে ঘটনাস্থল থেকে চুরি করিয়া নিয়া গিয়াছে’।
মো. অলিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, চুরির ঘটনায় আমরা মামলা করেছি, এখন তদন্ত কাজ চলছে। চুরির সময় নির্দিষ্ট ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করলেও সন্দেহভাজনের তালিকায় তাদের নাম না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে এড়িয়ে যান ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ। এ ছাড়া ওই রাতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সম্পর্কে এবং সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘আমি কিছু জানি না’ বলে কল কেটে দেন মামলার বাদী।
ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় গত ১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট থেকে

গড়ে প্রতিদিন ৫৬০-৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। এর মধ্যে সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে এবং বাকিটা খুলনা অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো।
এরপরের দিন চুরির ঘটনাটি ঘটে উল্লেখ করে মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, কেমিস্ট আব্দুল মালেক ল্যাব বন্ধ করার সময় টেস্টিং যন্ত্রটি টেবিলের উপরেই ছিল। আব্দুল মালেক চলে যাওয়ার আগে তালার চাবি ল্যাব-১ এর মুসা পারভেজকে দিয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. সাদ্দাম হোসেন ও তানভীর রহমানকে দিতে বলেন। মুসা পারভেজ তাদের চাবি দেন।
রাত ১০টায় সে স্থানে দায়িত্ব পালন করতে আসেন মো. জাকারিয়া আল রাজী এবং মাসুম বিল্লাহ। তারা ১৫ জানুয়ারি সকাল ৭টায় দায়িত্ব শেষ করেন। এ সময় মো. সাদ্দাম হোসেন এবং মো. মাসুম বিল্লাহ দায়িত্ব নেন। সকাল ৯টার দিকে রুম ক্লিনার আব্দুল নোমান ল্যাব-২ পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন টেবিলে যন্ত্রটি নেই। তারপর তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এরই দায়ের মরা মামলায় যন্ত্রটির মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৪৭ লাখ টাকা।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জিনিসপত্র চুরি যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। বারবার সেখানে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। গত ১৫ মাসে র‌্যাব ও আনসার ব্যাটালিয়নের অভিযানে এই কেন্দ্র থেকে চুরি যাওয়া কোটি টাকা মূল্যের মালামাল উদ্ধার হয়েছে। আটক করা হয় ৫৪ জনকে।
এসব চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাধারণত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু এবার সংরক্ষিত এলাকা ও কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য থেকে দামি যন্ত্র খোয়া যাওয়ার পর কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
চুরির বিষয়ে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কয়লা পরীক্ষার যন্ত্র সাধারণ মানুষের কোনো কাজে লাগার কথা নয়। তাই ছিঁচকে চোর বা কোনো শ্রমিকের এটা চুরি করারও কথা না। বড় কোনো চক্র এবং কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কেউ এতে জড়িত থাকতে পারে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রটির নিরাপত্তার জন্য ১৫০ জন আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্য, ৩০ সাধারণ আনসার, ১৭ জন পুলিশ সদস্য ছাড়াও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভেল-এর নিজস্ব সেন্ট্রি সিকিউরিটি সার্ভিস এবং জেরিন সিকিউরিটি সার্ভিসের ৯৬ জন কর্মী রয়েছেন।
রামপাল উপজেলার সাপমারী কাটাখালী মৌজায় অধিগ্রহণ করা ৯১৫ একর জায়গার মধ্যে ৪৫০ একর জায়গায় সীমানা প্রাচীর রয়েছে। এই প্রাচীরে মোট নয়টি গেট। এর বাইরে প্রায় দুই কিলোমিটার নদীর সীমানাসহ বাকি জায়গা অরক্ষিতই বলা চলে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়