প্রধান শিক্ষককে পিটুনি : আ.লীগ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

আগের সংবাদ

ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভা : আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে

পরের সংবাদ

ভয়াবহ বায়ু দূষণের শিকার ঢাকার ৯০ শতাংশ বাসিন্দা : দূষিত শহরের তালিকায় ফের শীর্ষে ঢাকা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আবারো প্রথম স্থানে ঢাকা। গতকাল রবিবার সকালে সুইস বায়ুমান পর্যবেক্ষক সংস্থা আইকিউএয়ারের শহরভিত্তিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার বাতাসের স্কোর ছিল ২৭১, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে দুপুরের পর ঢাকার বাতাসের মানের কিছুটা উন্নতি হয়। একিউআই কমে তখন হয় ২০৫, দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় তখনও অবস্থান তৃতীয়। রাজধানী নগরীর ৯০ শতাংশ মানুষই ভয়াবহ বায়ু দূষণের শিকার। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন। বায়ু দূষণের কারণে বছরে নি¤œ ও মধ্যআয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়।
বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা সুইজারল্যান্ডের প্রযুক্তি কোম্পানি আইকিউএয়ারের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ ছিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালেও বাংলাদেশ এই তালিকায় শীর্ষে ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এক ঘনমিটার বাতাসে বছরে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) ২ দশমিক ৫ এর উপস্থিতির গড় পাঁচ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আইকিউএয়ারের রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশের বাতাসে পিএমএর উপস্থিতির গড় ছিল ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
আর ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’-এর তথ্য মতে, রাজধানীর ৯০ শতাংশ মানুষ ভয়াবহ ধুলা দূষণের শিকার। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ধূলিকণা থাকলে সহনীয় হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু শীতের সময় রাজধানীর বাতাসে এর পরিমাণ থাকে ২২০ থেকে ৩০০ মাইক্রোগ্রাম বা তারও বেশি। ফলে শীত মৌসুমে ঢাকার বাতাস হয়ে পড়ে চরম অস্বাস্থ্যকর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ধুলাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগ-জীবাণু মিশ্রিত ধুলা ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও য²াসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করছে। আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
বায়ুদূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের গবেষণা প্রবন্ধটিতে বলা হয়, বাতাসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতির কারণে সৃষ্টি হয় দূষণ; আর এতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয় অন্তত ৬৭ লাখ মানুষের। বাতাসে কার্বন ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণার মিশ্রণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে গবেষণায় বলা হয়। দূষণের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে, শ্বাসতন্ত্রের রোগে এবং ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলেও গবেষণায় তুলে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বায়ু দূষণের দাপট আরো বাড়বে। আর এ কারণে নগরবাসী আক্রান্ত হবে শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, গলা ও ফুসফুসের নানা অসুস্থতায়। জানতে চাইলে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, বায়ু দূষণে শ্বাসকষ্ট, হাঁচি-কাশি, ঠাণ্ডা, এলার্জি, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায় এবং এক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়। য²া রোগীর কফ মাটিতে শুকিয়ে বাতাসে উড়ে বিস্তার ঘটায়। বায়ুদূষণ কালো কফ তৈরি করে যা খুবই ভয়ঙ্কর।
গবেষণায় জানা যায়, বাহ্যিক বায়ু দূষণের কারণ হলো- নির্মাণ কার্যক্রম (৩৮ শতাংশ), প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো (২২ শতাংশ), শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ (১৭ শতাংশ), ইটভাটা (১০ শতাংশ), জীবাশ্ম জ্বালানি দহন, সড়ক পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮ শতাংশ। এছাড়া রান্নার চুলা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া ৪১ শতাংশ, সিগারেট থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া ২৫ শতাংশ, নর্দমা নিষ্কাশন ১৫ শতাংশ, রেডন গ্যাস ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ ১০ শতাংশ।

জনস্বাস্থ্যের জন্য বায়ু দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ আইন অনুসারে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। তিনি বলেন, বায়ু দূষণের উৎস বন্ধ করতে হবে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়