ভ্রাম্যমাণ আদালত : বাকেরগঞ্জে তিন দোকানদারকে জরিমানা

আগের সংবাদ

নতুন শিক্ষাক্রম বুঝতে নোট-গাইড চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা : শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, লাগবে না

পরের সংবাদ

ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভা : আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে বাজার মনিটরিং আরো জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তাছাড়া নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময়ে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি, এনএসআইয়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক। এছাড়াও জুমে সংযুক্ত ছিলেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক। উল্লেখ্য মতবিনিময় সভাটি অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আদা, রসুন, হলুদ ও শুকনো মরিচের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়দের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজার অস্থির হয়ে যায়। আসন্ন রমজান মাসে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে ভোক্তা অধিদপ্তর। তিনি বলেন, রমজানের আগে আমাদের দেশি পেঁয়াজ উঠবে। এতে করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর কোন সম্ভাবনা নেই। ৫০ টাকার মধ্যেই থাকবে দাম। কিন্তু আদা-রসুনের বাজার অস্থির। রমজান আসার আগেই দাম বাড়তে শুরু করেছে।
হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বাড়ছে। কিছু পণ্য হয়তো আমদানিনির্ভর, ডলারের দাম বৃদ্ধি অনুসারে ২৫ শতাংশ দাম বাড়তে পারত। কিন্তু ডলারের বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম আরো বেশি বাড়ানো হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাজার আরো অস্থির হয়ে যাবে।
আদা-রসুনের দাম বাড়ানো নিয়ে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, গত সপ্তাহে আমাদের টিম আদা-রসুনের বাজার নিয়ে কাজ করেছে। আমরা কাওরান বাজারসহ শ্যামবাজার পাইকারি, খুচরা এবং আড়তে খোঁজ নিয়েছি।
আন্তর্জাতিক এলসি খোলার বিষয়েও খোঁজ নিয়েছি, যেমন- আদা, রসুন, শুকনা মরিচ এবং হলুদ এগুলো কিন্তু ইম্পোর্ট (আমদানি) নির্ভরতা আছে। সম্পূর্ণভাবে দেশি উৎপাদন দিয়ে বাজার চালানো সম্ভব না। সেক্ষেত্রে এখানে যদি আমদানি কমে যায় দেশীয় যে উৎপাদন সেখানে কিন্তু ঘাটতি পড়বে। সামনে রমজানের পরে কুরবানি। তাই এসব পণ্য যদি ‘ইম্পোর্ট স্মুথ’ (আমদানি সচল) না রাখতে পারি তাহলে স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে এই বাজার ধরে রাখা যাবে না। তাই আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারকরা জানান, আমদানি না হওয়ায় আদা-রসুনের দাম বাড়ছে। ভারত থেকে রসুন আমদানি বন্ধ ছিল। চায়না থেকেও আমদানি হচ্ছে না। আদা-রসুন আমদানিতে এলসি স্বাভাবিক না হলে দাম আরো বাড়বে। ব্যবসায়ীদের এলসি চাওয়ার বিষয়ে ক্যাবের সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য একেক সময় একেক বাহানা দেয়। এক সময় ডলার সমস্যা, আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এবার এলসি সমস্যাকে অজুহাত হিসেবে এনেছেন।
তিনি বলেন, রমজানের জন্য যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রয়োজন সেগুলো ইতোমধ্যেই এলসি করা হয়েছে। কারণ পণ্য আসার দুই থেকে তিন মাস আগে এলসি করতে হয়। সে অনুসারে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ইতোমধ্যেই পোর্টে এসে পৌঁছেছে। এলসি ইস্যুটা একটা অজুহাত মাত্র। তবে ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বেশি হতে পারে। তবে এর বেশি হওয়ার কথা নয়।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে এফবিসিসিআইর সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, অসাধু ব্যবায়ীরা খুবই নগণ্য। তবে তাদের জন্য সবার ওপর দায় পড়ে। আমরা সব ব্যবসায়ী সরকারের সব আইনকানুন মেনে ব্যবসা করতে চাই। এলসি এবং ডলারের দাম সমন্বয় করে বাজার ব্যবস্থাকে সুস্থ রাখতে হবে।
কাওরান বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, কিছু কিছু করপোরেট কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে। চালের প্যাকেটে বাড়তি দাম বসিয়ে দিচ্ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির উছিলায় প্রতিনিয়ত দাম বাড়াচ্ছে। যখন বাজারে পণ্য থাকে না তখন কোম্পানিগুলোও পণ্য সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। বাজার অস্থির করে দেয়। এদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর তেমন কোনো ব্যবস্থা না নিলেও আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের গিয়ে জরিমানা করে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মনিটরিং আরো জোরদার করতে হবে। বাজারে অভিযান চালালে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার প্রমাণ আমরা আগেও পেয়েছি।
সবশেষ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, মতবিনিময় সভায় যেসব বিষয়ে পরামর্শ এসেছে, সেসব বিষয়ে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আকারে সুপারিশ করব। এ সময় রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা চান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়