প্রধান শিক্ষককে পিটুনি : আ.লীগ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি

আগের সংবাদ

ভোক্তা অধিদপ্তরের মতবিনিময় সভা : আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে

পরের সংবাদ

ইজতেমা শেষ : মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি-বিশ্বশান্তি কামনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

টঙ্গী প্রতিনিধি : দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, মুক্তি কামনা এবং বিশ্বশান্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে গতকাল রবিবার শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বটি ছিল মাওলানা সাদ অনুসারীদের। এ পর্বে আখেরি মোনাজাতও পরিচালনা করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের প্রধান মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি। টঙ্গীর তুরাগতীরে লাখ লাখ মুসল্লি উপস্থিত হয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করতে আল্লাহর দরবারে রহমত প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
মোনাজাতে কান্ধলভি নিজে কেঁদেছেন, অংশ নেয়া সবাইকে কাঁদিয়েছেন। তাদের অশ্রæভেজা কান্না আর ‘আমিন, আমিন’ শব্দে তুরাগতীরে এ সময় বিরাজ করে অন্যরকম এক ধর্মীয় আমেজ। মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ সাদ কান্ধলভি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্বীনের ওপর সবাই যেন চলতে পারে সেই দোয়া করেন। তার সঙ্গে দুহাত তুলে ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনি তুলে কান্নায় ভেঙে পড়েন উপস্থিত মুসল্লিরা।
এদিন ভোর থেকে শুরু হয় দিকনির্দেশনামূলক বয়ান। শীর্ষস্থানীয় অনেক আলেম ইসলামের পথে সঠিকভাবে চলার জন্য মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হেদায়েতি বয়ান শুরু করেন দিল্লির মাওলানা মোরসালিন। পরে বয়ান শুরু করেন ইউসুফ কান্ধলভি। মোনাজাতের আগ পর্যন্ত আগত তাবলিগভক্তদের উজ্জীবিত করতে বিশেষ নসিহত করেন তিনি। বয়ান শেষে বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আখেরি মোনাজাত। শেষ হয় ১২টা ৪৫ মিনিটে।
মোনাজাত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কেঁদে বুক ভাসান মুসল্লিরা।
প্রায় ৩০ মিনিটের মোনাজাতে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি প্রথম ১৫ মিনিট পবিত্র কুরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষের দিকে ১৫ মিনিট দোয়া করেন উর্দু ভাষায়। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি স¤প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ একসঙ্গে হাত তুলে মোনাজাতে শরিক হন।
তাবলিগ জামাতের আয়োজনে মুসলমানদের অন্যতম সমাবেশের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। গতকাল ভোরে শীতকে উপেক্ষা করে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার লোকজন রওনা হয় ইজতেমা ময়দানের দিকে। সকাল ৮টার আগেই ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকার সড়ক-মহাসড়ক, অলিগলি ও খালি জায়গায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এ সময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো ইজতেমা এলাকা।
ইজতেমাস্থলে পৌঁছতে না পেরে অনেক মুসল্লি আখেরি মোনাজাতের জন্য খবরের কাগজ, পাটি, বস্তা বা পলিথিন বিছিয়ে কামাড়পাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং অলিগলিসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। নানা বয়সি মানুষের পাশাপাশি নারীদেরও মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়। এমনকি বাসাবাড়ি ও কারখানার ছাদ, নৌকা, বাসের ছাদসহ যে যেখানে পেরেছেন সেখানেই বসে দুই হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন। আয়োজকরা জানায়, বিশ্বের ৬৪টি দেশের প্রায় ১০ হাজার মুসল্লিসহ দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে দেশ-বিদেশের প্রায় ১৫ লাখ মুসল্লি অংশ নেন।
ইজতেমা নিয়ে জটিলতার কারণে কয়েক বছর ইজতেমায় আসেননি তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি। তবে এবার এসেছেন তার তিন ছেলে ও এক জামাতা। বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলভি গত শুক্রবার জুমার নামাজের ইমামতি করেন এবং আখেরি মোনাজাতও তিনিই পরিচালনা করেন। মেজো ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ সাঈদ বিন সাদ কান্ধলভি ও তৃতীয় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস বিন সাদ কান্ধলভি এবং জামাতা মাওলানা মোহাম্মদ হাসান দ্বিতীয় পর্বের ৩ দিনই বেশির ভাগ সময় বয়ান করেছেন। মোনাজাতের আগে বিশ্বব্যাপী তাবলিগ জামাতের সাথিদের উদ্দেশে হেদায়েতি বয়ান পেশ করেন মাওলানা ইউসুফ।
আখেরি মোনাজাতের প্রথমেই মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন। অতঃপর প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরুদসহ কুরআনের অসংখ্য দোয়ার আয়াত ও হাদিসের অসংখ্য মাসনুন ও ফজিলতপূর্ণ দোয়া পাঠ করেন।
বারবার তাওবা-ইস্তেগফার করে নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে নিরাপদে থাকার জন্যও তিনি প্রার্থনা করেন। আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
ফেরার পথে বিড়ম্বনা : আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পর একসঙ্গে লাখো মানুষ ফিরতে শুরু করলে সর্বত্র যানজটের সৃষ্টি হয়। টঙ্গী স্টেশনে ফিরতি যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমাণ ট্রেনগুলোয় উঠতে মানুষের জীবনবাজির লড়াই ছিল উদ্বেগজনক। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে ও দরজা-জানালায় ঝুলে শত শত মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে দেখা যায়। একপর্যায়ে মানুষের জন্য ট্রেনই দেখা যাচ্ছিল না। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কালিগঞ্জ ও আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ফিরতি মুসল্লিদের বিড়ম্বনা ও কষ্টের সীমা ছিল না। বিকালে সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু হলে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সন্তোষ প্রকাশ : দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুসল্লিদের আসতে এবং ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সরকারের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটি। এছাড়া ময়দান ও এর আশপাশে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটায় তারা সন্তুষ্ট।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়