মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ডা. নাতাশার মৃত্যু

আগের সংবাদ

৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে বিশ্বব্যাংক এমডি : বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের সর্ম্পক নতুন মাইলফলকে

পরের সংবাদ

ত্রিপক্ষীয় টানাপড়েনে ইউক্রেন : পুতিন বলছেন বিজয় অনিবার্য

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় টানাপড়েন চলছে। বিশ্বাস-অবিশ্বাস ও সন্দেহের দোলায় দোল খাচ্ছে ইউক্রেনের ভাগ্য। ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষ ইতোমধ্যে মাতৃভূমি ছেড়ে শরনার্থীর বেশে দেশে দেশে আশ্রয়ের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খবর দি ইকনমিস্ট, রয়টার্স, সিএনএন।
খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কয়েকমাস আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের টেলিফোনে বাদানুবাদের পরে টানাপড়েন আরো বেড়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনে সামরিক সহযোগিতা দিতে একের পর এক বাহানায় রীতিমতো অসহিষ্ণু করে তুলেছে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কিকে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনকি, জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অবিশ্বাসের পটভূমি তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কিয়েভের জনগনকে রক্ষার জন্য চাহিদা অনুযায়ী ট্যাঙ্ক পাঠাতে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাস্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো। গতকাল ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির একজন সিনিয়র উপদেষ্টা কিয়েভের মিত্রদেরকে তাদের সামরিক সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। গত শুক্রবার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগামি বসন্ত আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য উচ্চ ক্ষমতার যুদ্ধ ট্যাঙ্ক পাওয়ার ইউক্রেনের আশাকে ¤øান করে দিয়েছে। ইউক্রেনকে মার্কিন অস্ত্রের সর্বশেষ সরবরাহ না আসা পর্যন্ত এবং প্রশিক্ষণ না দেয়া পর্যন্ত রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা গত শুক্রবার বাইডেন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা প্রকাশ করেছেন। যে কারণে ন্যাটোর মিত্ররা রামস্টেইন সামরিক ঘাঁটিতে একটি বৈঠকে লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক অনুমোদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।
গতকাল একটি নিবন্ধে রয়টার্স উল্লেখ করেছে, ইউক্রেন তার ‘জীবনের মূল্য পরিশোধ করছে’ ট্যাঙ্ক বিতর্কে। ইউক্রেনকে আরও উন্নত ট্যাংক ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তায় জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে গত শুক্রবার ন্যাটো ও ৫০ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা বৈঠকে বসেন। তবে কিয়েভকে প্রয়োজনীয় জার্মান যুদ্ধ ট্যাংক ‘লেপার্ড’ সরবরাহের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, জার্মানি লেপার্ড ট্যাংক দিলে ইউরোপে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। শুক্রবারের বৈঠকের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ইউক্রেনকে লেপার্ড-২ ট্যাংক দিতে জার্মানির ওপর চাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতে পারেনি কোনো পক্ষ।
ট্যাংক সরবরাহে সম্মত না হওয়ায় ন্যাটোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভাজনের ইঙ্গিত দেখা দিয়েছে। জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, ট্যাংক সরবরাহের পক্ষে যেমন যৌক্তিক কারণ রয়েছে, তেমনি বিপক্ষেও রয়েছে।
জেলেনস্কির অসহিষ্ণুতা : জার্মানিতে কয়েক ডজন পশ্চিমা মিত্রদের এক বৈঠকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার জন্য তাদের প্রতি সরাসরি আবেদন জানিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আপনাদের শত শত ধন্যবাদ দরকার নাই। দরকার হল শত শত ট্যাঙ্ক।
জার্মান যুক্তরাষ্ট্র টানাপড়েন : সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনকে ট্যাংক সরবরাহ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মধ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জার্মান কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে এম১ আব্রামস ট্যাংক সরবরাহ না করা পর্যন্ত লেপার্ড ট্যাংক দেবে না বার্লিন। এমনকি, অন্য দেশের হাতে থাকা জার্মানির তৈরি এসব ট্যাংকও সরবরাহ করতে দেয়া হবে না।
অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেশির অজুহাত দেখিয়ে কিয়েভকে নিজেদের ট্যাংক দেয়ার চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। গত মঙ্গলবার জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হাবেক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠায়, সেটা জার্মানির জন্যও কাজটি সহজ করে দেবে। পরদিন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, আমরা কখনোই নিজেরা একা কিছু করি না; মিত্রদের সঙ্গে নিয়েই করি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ।
জার্মানির এমন অবস্থানে অস্বস্তিতে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা আমাদের জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। জার্মানি ট্যাংকের বদলে ট্যাংক চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অন্যান্য প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে লেপার্ড পাঠানোর বিষয়ে তারা নমনীয় হচ্ছে না।
লাভ নেই বলছে ক্রেমলিন : রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ট্যাংক সরবরাহের ফলে যুদ্ধের বর্তমান গতি প্রকৃতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। বরং এই যুদ্ধে ইউক্রেন জিতবে এমন ‘মতিভ্রমের’ জন্য পশ্চিমারা অনুতপ্ত হবে। গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি, এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনবে না, বরং এটি ইউক্রেন ও দেশটির জনগণের সমস্যা বাড়াবে। রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছে, তার শত্রæ দেশকে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করা হলে এই সংঘাতকে তা অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে দেবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়