আলমগীর কবীর, যশোর : ফুল উৎসব এবং ছুটির দিন একসঙ্গে মিলে যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী ও পানিসারা। হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত গোটা এলাকা। নানা বয়সের মানুষের উপস্থিতি যেন পর্যটন কেন্দ্রকে হার মানিয়েছে পানিসারার ফুল মোড়। ফুল উৎসবের দ্বিতীয় দিনে গতকাল শুক্রবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ফুল চাষিদের সন্তানদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১ম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রত্যেক শ্রেণি থেকে তিনজন শিক্ষার্থীকে বিজয়ী করা হবে। এছাড়া গদখালি অঞ্চলে নারী ফুল চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে গতকাল শতাধিক নারীকে ফুল চাষের উপর বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম শাহিন, ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুল হকসহ জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও সহকারী কমিশনার

এবং উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল ছুটির দিন এবং উপজেলা প্রশাসনের ফুল উৎসব দর্শনার্থীদের মাঝে ভিন্ন ইমেজ সৃষ্টি করে। ফুলের স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ফুলের ক্ষেত, ফুলের সেড, প্রদর্শনী এলাকা ও পার্কগুলো ছিল আনন্দে মুখরিত। এ সময় প্রিয় মানুষের সঙ্গে ছবি তোলা, ফুল পরিয়ে দেয়া এবং ঘুরে বেড়ানো ছিল আনন্দের খোরাক। ফুল উৎসবে আসা পল্লী চিকিৎসক মোস্তফা আসাদুজ্জামান, মাস্টার এনামুল কবীর, ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান, মাস্টার আব্দুল আলিম ডালিমের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, গদখালী ও পানিসারার ফুলের সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে মানুষ ছুটি পেলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে বেড়াতে আসে। এবার ফুল উৎসব বাড়তি আয়োজন। যা উপজেলা প্রশাসনকে প্রসংশিত করেছে।
সলেমান হোসেন নামে এক ফুলচাষি জানান, এমনিতে জানুয়ারি ফেব্রুয়ারিতে গদখালিতে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। কিন্তু এবার তিন দিনব্যাপী মেলার সঙ্গে ফুল উৎসব হওয়ায় পর্যটন দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি। তারা দলে দলে জারবারা গøাডিয়াস ক্ষেতে সুন্দর মুহূর্তটি তাদের মোবাইল ফোনে বন্দি করছেন। অন্য সময় ফুল ক্ষেতে ঢুকতে বাঁধা দিলেও এখন তাদের বাঁধা দিচ্ছি না।
ঝিনাইদহ থেকে একদল দর্শনার্থী তরুণ যুবকরা বলেন, প্রতিবছরই গদখালিতে ঘুরতে আসি। এবার ঘুরতে এসে অন্যরকম দেখছি। জায়গাটি পর্যটনের মতো লাগছে। রাস্তার দুধারে নানা রঙের ফুল নিয়ে ছোট ছোট দোকান বসিয়েছে। সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজন তাদের পছন্দমতো ফুল কিনছে। ঢাকা থেকে আসা নার্গিস আক্তার নামে এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে গদখালিতে এসেছিলাম। গত বৃহস্পতিবার বেনাপোলে একটি কাজে এসে ঘুরতে এসেছি। এসে এতো ভালো লাগছে। চারিদিকে তাকালেই ফুল আর ফুল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ঝিকরগাছার ফুল চাষের সফলতাকে সারাদেশসহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কথায় বলে, প্রচারেই প্রসার। এছাড়া ফুলের জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে, মানুষের বেকারত্ব দুর হবে এবং চাষিদের ফুল চাষে আগ্রহ বাড়বে।