আইনমন্ত্রী : মানবাধিকারের উন্নতি হওয়ায় র‌্যাব নতুন নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গি একাকার : স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর যোগসাজস, দুর্গম হওয়ায় অভিযান চালানো কঠিন

পরের সংবাদ

সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি, প্রাণ নিয়ে ছুটছে রোহিঙ্গারা : পুড়ে গেছে জিরো পয়েন্টের অধিকাংশ ঝুপড়ি ঘর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে : বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্ত এলাকার মিয়ানমার অংশে আবারো গোলাগুলি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে কেউ হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনের মাঝে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় উখিয়ার বালুখালী টিভি টাওয়ার, উখিয়ার ঘাট কাস্টমসসংলগ্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতাও বেশি ছিল। তল্লাশি করা হয়েছে বিভিন্ন যানবাহন।
এদিকে বুধবার বিকালে সন্ত্রাসীদের দেয়া আগুনে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অধিকাংশ ঝুপড়ি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখানে বসবাসকারী যেসব রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা কেউ এখনো ফিরে যাননি। নারী-শিশুসহ সবাই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গতকাল সকালে ফের গোলাগুলি শুরু হলে শূন্যরেখার শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রামের দিকে ছোটাছুটি শুরু করেন।
জানা যায়, মিয়ানমারের আরকানের স্বাধীনতাকামী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বুধবার ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দুপক্ষের গোলাগুলি চলে। এতে উভয়পক্ষের তিনজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। যদিও কোনো দায়িত্বশীল সূত্র থেকে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগের দিন গণমাধ্যমে একজনের মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছিল।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আগুন লাগায় নারী, শিশুসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেয়। পরে তাদের সেখান থেকে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। আবার অনেকে আশপাশের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এলাকায় বিজিবি, র?্যাব ও পুলিশের কড়া নজরদারি রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে কোনো মানুষকে রাস্তাঘাটে বের হতে দিচ্ছে না প্রশাসন।
রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, গোলাগুলি ও রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিসংযোগের পর তীব্র শীতের রাতে রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষরা দিগি¦দিক ছুটে গেছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মিয়ানমারের ভেতর পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। রাতভর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। গতকাল সকালেও কয়েক ঘণ্টা গোলাগুলি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুটি পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে সীমান্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি, র?্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক অবস্থানে আছে।
ইউএনও আরো বলেন, কোনারপাড়া আশ্রয়শিবির

ছেড়ে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দিকে আশ্রয় নিয়েছে। আর কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ভেতর চলে গেছে। যারা বাংলাদেশের দিকে এসেছে, তাদের অধিকাংশ নারী, বৃদ্ধা ও শিশু। তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরো কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। সে সময় ছয় হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া খালের দক্ষিণে শূন্যরেখায় বসতি শুরু করে। ওই আশ্রয়শিবিরে কয়েক গজ দূরত্বে মিয়ানমার সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নজরদারিতে কাঁটাতারের বাইরে পাহাড়চূড়ায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক চৌকি স্থাপন করেছে। এর বাইরে তুমব্রুর কোনারপাড়া শূন্যরেখা আশ্রয়শিবিরে ৬২১টি পরিবারে ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা বসবাস করছিল।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটির (আইসিআরসি) অফিস সূত্রে জানা যায়, তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পটিতে ৫৩০ ঘর ছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়