আইনমন্ত্রী : মানবাধিকারের উন্নতি হওয়ায় র‌্যাব নতুন নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গি একাকার : স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর যোগসাজস, দুর্গম হওয়ায় অভিযান চালানো কঠিন

পরের সংবাদ

‘মৃত’ ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন হলো দেশেই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’- সর্বশ্রেষ্ঠ এ মানবিক বাণীকে আবারো সত্য প্রমাণ করে চিরবিদায় নিলেন সারাহ ইসলাম। মরণোত্তর কিডনি দানের মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন মাত্র ২০ বছর বয়সি তরুণী। তার দান করা দুটি কিডনি অপর ২ নারীর দেহে স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো মৃত ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপনের ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত দুটি কিডনির একটি প্রতিস্থাপন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। অপরটি প্রতিস্থাপন করা হয় কিডনি ফাউন্ডেশনে।
২০১৯ সাল থেকেই মৃত ব্যক্তির দান করা কিডনি প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিএসএমএমইউ। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন লজিস্টিক সহায়তাসহ প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রিফ কাউন্সিল (শোকার্ত মানুষকে মানসিক সহায়তাদানকারী) গঠন, অন্য হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি ইত্যাদি কাজও শুরু হয়। বিএসএমএমইউ দীর্ঘ প্রস্তুতির পর গত বছরের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো মরণোত্তর দান করা কিডনি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। জরুরি ভিত্তিতে কিডনি প্রয়োজন এমন ৫০ রোগীর তালিকা করে বিএসএমএমইউ। এর মধ্যে অন্তত তিনবার মৃত ব্যক্তির কিডনি পাওয়ার আগমুহূর্তে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের অনীহায় প্রতিস্থাপন করা যায়নি। এছাড়া কিডনি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও এত ভালো নেই। দেশে মাত্র ৬ ঘণ্টা সংরক্ষণ করা গেলেও ভারতে কিডনি ২৪ ঘণ্টা সংরক্ষণ করা যায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
দেশে প্রথম এভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনে অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। সেখানে মিরপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সি শামীমা আক্তারের দেহে সারাহ ইসলামের একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।
গতকাল সকালে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ৩ দিন আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন সারাহ। গত বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করা হয়। তার কিডনির সঙ্গে ম্যাচ করতে কয়েকজন এ ধরনের রোগীর তথ্য মেলানো হয়। এর মধ্যে ৩৪ ও ৩৭ বছর বয়সি দুই নারীর সঙ্গে ২৫-৩০ শতাংশ মিলে যায়। আত্মীয় না হওয়ায় এর বেশি মেলেনি। বাকিটা ওষুধ প্রয়োগে উপযোগী করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউতে কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারদলে আরো ছিলেন হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদ মো. সাইফুল হোসাইন, সহযোগী অধ্যাপক ফারুক হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক কার্তিক চন্দ্র ঘোষসহ ১৫ চিকিৎসক। তারা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দাতার কাছ থেকে কিডনি নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অস্ত্রোপচারে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। এরপর কিডনিটিকে প্রতিস্থাপনযোগ্য করতে আধা ঘণ্টা লাগে। কিডনি প্রতিস্থাপনে সময় লাগে আরো দুই ঘণ্টা।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের অধ্যাপক এ কে এম খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে ৩৭ বছর বয়সি অপর নারীর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। আইসিইউগুলোতে ‘ব্রেন ডেথ’ অনেক রোগী থাকেন, যার অধিকাংশই আর বাঁচেন না। তাদের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস ফ্লুইডের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিছুদিন চালু রাখা যায়। কোনো ব্যক্তি ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষিত হওয়ার পর কিডনি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ বা লিভার, অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) ও খাদ্যনালির মতো অঙ্গগুলো দান করলে অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে হৃৎপিণ্ড থেমে গেলেও কর্নিয়া, অস্থি, অস্থিমজ্জা ও চর্ম প্রতিস্থাপন করা যায়। এগুলোকে ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপন বলা হয়। এমন ব্যক্তিদের কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে দিকনির্দেশনা, তদারকি ও পরামর্শ দেয়ার কাজগুলো করে ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটি।
সারাহ ইসলাম শুধু তার কিডনিই নয়, দান করে গেছেন চোখের কর্নিয়াও। ঢাকার এ বাসিন্দা দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কে টিউমারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য টিউমার স্কেলেলিস রোগে আক্রান্ত হন সারাহ। এ রোগের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করেন তিনি। এ অবস্থাতেই অগ্রণী গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভে (ইউডা) ফাইন আর্টসে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সারাহর শিক্ষক মা শবনম সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, সারা মৃত্যুর আগে তার দেহের সবকিছুই দান করে দিতে বলেছেন। তবে তার কিডনি ও কর্নিয়া নেয়া হয়েছে। সারাহকে বীরের মর্যাদা দেয়া উচিত। মরণোত্তর কিডনি দানে উদ্বুদ্ধ করতে সারার এই দান মানুষের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বিএসএমএমইউয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সারাহ ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শরিক হন। এ সময় উপাচার্য বলেন, ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রথম অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নাম বাংলাদেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার এই মহৎ আত্মত্যাগের মহিমা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভাস্মর হয়ে থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়