আইনমন্ত্রী : মানবাধিকারের উন্নতি হওয়ায় র‌্যাব নতুন নিষেধাজ্ঞায় পড়েনি

আগের সংবাদ

পাহাড়ে সন্ত্রাসী-জঙ্গি একাকার : স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর যোগসাজস, দুর্গম হওয়ায় অভিযান চালানো কঠিন

পরের সংবাদ

জাহালম বাদ : ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতে দায়ী ২০ জন

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ৩ বছর কারাভোগ করা আলোচিত সেই ভুল আসামি জাহালমকে বাদ দিয়ে অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোনালী ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ৩৩ মামলার সবকটিতে জাহালমকে বাদ দিয়ে জালিয়াতির মূল হোতা মো. আবু ছালেককে প্রধান আসামি করে ২০ জনের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই চার্জশিট দিতে যাচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী সংবিধিবদ্ধ সংস্থাটি। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সম্ভাব্য আসামিরা হচ্ছেন- প্রধান আসামি মো. আবু ছালেক, সোনালী ব্যাংকের মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট শাখার সাবেক সাপোর্টিং সাব-স্টাফ মইনুল হক, মতিঝিল স্থানীয় কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ অফিসার মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মো. লুতফর রহমান, আমিনুল হক সরকার, মো. নজরুল ইসলাম, মো. হায়দার আলী ও মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট শাখার সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার নুর উদ্দিন শেখ। আরো রয়েছেন- মো. শহীদুল ইসলাম ও ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগের বর্তমান প্রিন্সিপাল অফিসার এস এম কামরুল ইসলাম, ঝালকাঠি শাখা ব্যবস্থাপক মো. সাইয়্যেদুর রহমান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নাজমুল হুদা সিরাজী, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড মোহাম্মদপুর শাখার এফএভিপি শামীম আল মাসুদ ও মনিরুজ্জামান সোহাগ।
এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, জাহালমের বিষয়টি আলোচিত। মূল আসামিকে শনাক্ত করতে না পেরে জাহালমকে আসামি করে ৩৩ মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা তদন্ত করে জাহালম যে নির্দোষ এর সত্যতা পাই। এর ভিত্তিতেই জাহালমকে বাদ দিয়ে প্রকৃত আসামি ছালেককে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ছালেককে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। যেখানেই থাকুক ধরা পড়ে যাবে। দুদকের খাতায় পলাতক আবু ছালেক ভারত কিংবা নেপালে রয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালের শুরুতে ভুল আসামি হিসেবে জাহালমের ঘটনা বের হওয়ার পরই আবু ছালেক দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করতে তার আত্মীয়স্বজনদের অন্তত ২০-২৫টি মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করেছি, বিভিন্ন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়েছি। তবে তাকে এখনো পাওয়া যায়নি।
দুদক সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিসের তৎকালীন ডিজিএম এ কে এম সাজেদুর রহমান বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় ২০১০ সালে প্রথম মামলা দায়ের করেন। যেখানে সোনালী ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ১৮টি ক্লিয়ারিং প্রক্রিয়ায় জাল-জালিয়াতির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে উদ্ঘাটিত হয়। এর কিছুদিন পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক লেনদেন বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নেয়, একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। জাহালমের মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মো. আমিনুল হক সরকারকে ২০১৯ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার করে দুদক। এই প্রতিবেদনই দুদকে পাঠানো হয়, যার ওপর ভিত্তি করেই অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পরবর্তীতে ২০১২ সালে তৎকালীন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ৩৩টি মামলা করা হয়। কিন্তু তদন্তকালে ঠাকুরগাঁওয়ের ছালেকের বদলে টাঙ্গাইলের জাহালমকে আসামি করা হয়। আসামি হিসেবে তাকে আবু ছালেক ওরফে জাহালম হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ফলে ছালেকের স্থলে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন বছর কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।
বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি হিসেবে জেলে থাকার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ ৪ জনকে তলব করেন হাইকোর্ট। একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে’, ‘স্যার, আমি জাহালম, ছালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনা হয়।
প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনলে নিরীহ জাহালমকে দুদকের সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওই দিনই মুক্তির নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে ভুল তদন্তের জন্য জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই দিনই গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম। এরপর বিচারিক আদালত থেকে ওইসব মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। সাড়ে তিন বছর পর সব মামলা থেকে জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করতে তদন্তের দায়িত্বে থাকা ৯ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় দুদক।
এ ঘটনায় দুদকের তদন্তকালে জাহালমের মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মো. আমিনুল হক সরকার ওরফে মো. আমিনুল হক ওরফে ‘হক সাব’কে ২০১৯ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার করে দুদক। সংঘবদ্ধ জালিয়াত ও প্রতারক দলের অন্যতম এই হোতা দুদকের ৩৩টি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। গ্রেপ্তার হওয়ার পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে আত্মসাৎ করা ১৮ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা লোপাট করার কথা স্বীকার করেছিলেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়