ল²ণ চন্দ্র সূত্রধর, চাঁদপুর : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়েছেন। এখন আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথ দেখাচ্ছেন। তাহলে আমাদের নৌকার বিকল্প কোথায়? দেশকে ও মানুষকে ভালোবাসা যদি আমার দেশপ্রেম হয়, দেশকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা যদি দেশপ্রেম হয়, দেশের মানুষের সুখ-শান্তি, উন্নতি- সেটা চাওয়া যদি দেশপ্রেম হয়, তাহলে আমি বলতে বাধ্য শেখ হাসিনাকে অর্থাৎ নৌকাকে ভোট দেয়াটাও দেশপ্রেমেরই অংশ। কারণ এর উল্টো দিকের বিকল্প অর্থ হচ্ছে দেশ ধ্বংস, মানুষ পোড়ানো, দেশের সম্পদ বিনষ্ট করা এবং এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা।
গত মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের ২০২৩ সালের কার্যকরী কমিটির অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সিআইপি জয়নাল আবেদিন মজুমদার এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এম এন মুরাদ খানকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কয়েকমাস আগে বলা হয়েছিল আমাদের সমস্ত বই থেকে ইসলাম ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে বিষয়গুলো ফেলে দেয়া হয়েছে এবং সনাতন ধর্ম সম্পর্কিত সবকিছু নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, আমরা সেটির বিপরীতে আরেকটি ভিডিও করে জবাব দিয়েছি। যে ভিডিওটি দেয়া হয়েছিল সেটির সব তথ্যই মিথ্যা। 
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন যারা মুখের সামনে বলছে সরকারকে উৎখাত করতে চায়, তারা উৎখাত করার কোনো সুযোগ দেখছে না। কাজেই তারা এখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এখন তারা নতুন শিক্ষক্রমের পেছনে লেগেছে। কারণ এই শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আমার শিক্ষার্থী মানবিক, অস¤প্রদায়িক, নৈতিকতা সম্পন্ন এবং সোনার বাংলা গড়ার সোনার মানুষ হবে। এর ফলে তাদের এই বাংলাদেশকে যে পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যাবে, এটা তাদের ভয়। তাই তারা এই শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করছে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে দীপু মনি বলেন, তারা সব সময় ইসলামের নামকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। আমি বলব আমরা যেন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং কেউ যেন ধর্মকে অপব্যবহার না করে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখব এবং যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অপকর্ম করবে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
মন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক, কারিগরি, মাদ্রাসা ও উচ্চ শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসছি। মাদ্রাসা শিক্ষায় বিষয়ের মানের বিন্যাস হচ্ছে। যেখানে ১ হাজারের বেশি হয়, সেটাকে ১ হাজার নম্বরের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য আমরা বিবেচনায় এনেছি। তাদের ধর্মসংক্রান্ত বিষয়গুলো ঠিক রেখে অন্য যেসব বিষয় পড়ানো হয় সেগুলোকে বিন্যাস করা হবে। 
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, চাঁদপুর প্রেস ক্লাব হচ্ছে আমার নিজের একটি প্রতিষ্ঠান। আমি এই ক্লাবের একজন সদস্য। এখানে আমি নিমন্ত্রণ না করলেও আসি। কারণ আমার পিতা ছিলেন সংবাদপত্রের লোক। এই পেশা আমাদের পরিবারে সঙ্গে জড়িত। তাই আমি বলব, আমরা যেন সংবাদপত্রে প্রথম পাতায় ইতিবাচক সংবাদগুলো নিয়ে আসি। কারণ এখন পত্রিকার প্রথম পাতায় নেতিবাচক সংবাদগুলো দেখি। ইতিবাচক সংবাদ পত্রিকার এক কোনায় পাওয়া যায়। তিনি বলেন, পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ পত্রিকা দেখে এবং পড়ে অনেকেই শেখেন।
চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
ফরিদা ইয়াসমিন তার বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকতায় চাঁদপুরের বর্ণাঢ্য ঐতিহ্য রয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের আগের দুজন সভাপতির বাড়ি চাঁদপুরে। আমি ২৪ বছর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কাজ করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এই পত্রিকায় কাজ করেছেন। আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর পিতাও এই পত্রিকায় কাজ করেছেন। সাংবাদিকতা পেশা হচ্ছে মানুষের জন্য, এবং মানুষের জন্য কাজ করার পেশা। সাংবাদিকরা মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছে। এই পেশায় আমাদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে কাজ করতে হবে। এর জন্য আমাদের প্রথম দায়িত্ব হবে সততা ও অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, এটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্বের কাছে বিস্ময়। আমি একজন নারী হিসেবে কীভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছি, সেটি হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস থেকে সাহস নিয়ে। এভাবে আরো যারা নারী আছেন তাদের কাছ থেকে সাহস নিয়ে।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সংক্ষিপ্ত পথে সফলতা অর্জন করা যায় না। এর জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। যেসব নারী সাংবাদিকতা কিংবা অন্য পেশায় আসতে চান, তাদের ইচ্ছাশক্তিটাই হচ্ছে বড়। আমরা দেশের সব প্রেস ক্লাবকে এক ছাতার নিচে এনে কাজ করে এগিয়ে যেতে চাই।
ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ঢাকা থেকে প্রতিদিন ৮১৭টি দৈনিক পত্রিকা বের হয়। এর পাঠক হচ্ছে ২০ লাখ। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হচ্ছে ১৪ কোটি। অর্থাৎ পত্রিকা হিসেবে পাঠকসংখ্যা কম। আর মানুষ এখন টেলিভিশনও দেখছে না। এর কারণ হচ্ছে ডিজিটাল বিপ্লব। ঠিক এই সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা কী হবে, তা আমাদের ঠিক করতে হবে।
তিনি বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন কঠিন হোক আর সহজ হোক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকেই জিততে হবে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মার্কা হচ্ছে নৌকা। এদেশের মাটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত মিশে আছে। আমরা এর বিকল্প কিছু দেখছি না। আওয়ামী লীগ ভালো কাজ করলে প্রশংসা করব। আর জনগণের পক্ষে নয়, সেসব কাজের সমালোচনা করব। কারণ বঙ্গবন্ধুই বলেছিলেন, নীতিহীন সাংবাদিকতা দেশের কল্যাণ হতে পারে না। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আপনাকে যে কোনো নীতির মধ্যে আসতে হবে।
চাঁদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আল-ইমরান শোভনের সঞ্চালনায় সংবর্ধিত অতিথিদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন সিআইপি জয়নাল আবেদিন মজুমদার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওসমান গণি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, পাবলিক প্রসিকিউটার এডভোকেট রঞ্জিত রায় চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আলহাজ মো. ইউসুফ গাজী, ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন (এসডু) পাটওয়ারী।
প্রেস ক্লাব নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, জালাল চৌধুরী, শহীদ পাটওয়ারী, শরীফ চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন মিলন, প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস প্রমুখ।