আরো এক মামলায় রফিকুল মাদানীর বিচার শুরু

আগের সংবাদ

নাশকতার শঙ্কায় সতর্ক আ.লীগ : ষড়যন্ত্র ঠেকাতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের, ‘পাল্টা কর্মসূচি’তে অস্বস্তি বিএনপির

পরের সংবাদ

পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতির দায় কার?

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্কুল পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি, বানান ভুল, লেখা পরিবর্তন, পরিমার্জন ইত্যাদি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা নতুন কিছু নয়। বিতর্কিত এসব তথ্যে বিভ্রান্তিতে পড়েছে নবম-দশম শ্রেণির অন্তত ৩০ লাখ শিক্ষার্থী। পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি ও বাক্য গঠনের ভুলগুলো শুধু অদক্ষতাই নয়, এটি অমার্জনীয় অপরাধ। জানা গেছে, চলতি বছর প্রকাশিত নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ১৮১ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি বড় ভুল ধরা পড়েছে। এখানে বলা হচ্ছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে। অথচ এখানে হবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে। ওই বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ১২ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মাদ সায়েমের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ বঙ্গবন্ধুকে শপথ পড়ান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। এছাড়া বইটির ২০২ নম্বর পৃষ্ঠায় সংবিধান প্রণয়ন ও পটভূমিতেও অনেক তথ্য বাদ দেয়া হয়েছে। নবম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ‘ক্যাম্প’ ও পিলখানা ইপিআর ‘ক্যাম্প’ ছাপা হয়েছে। অথচ এখানে হবে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর। নবম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের ৫৭ নম্বর পৃষ্ঠায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কাজ অংশের ১ নম্বর অনুচ্ছেদেও প্রকৃত তথ্য বাদ দেয়া হয়েছে। একই বইয়ের ৫৯ পৃষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কাজের বিষয়েও অসঙ্গতি তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করা হয়েছে। এই অভিযোগ সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এর দায়ও স্বীকার করেছেন। গত বছরও এমন চিত্র দেখছি। ‘বঙ্গবন্ধু’কে বঙ্গবন্ধু এবং পুরো নাম না লেখে শুধু ‘শেখ মুজিব’ বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। সংবিধানে এক তথ্য থাকলেও পাঠ্যবইয়ে দেয়া হয়েছে মনগড়া তথ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সরকারের সময় একই ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার মেরুদণ্ড ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। এর আগেও স্কুল পাঠ্যবইতে ভুলের ছড়াছড়ি হয়েছে। কৌশলে হয়েছে তথ্য বিকৃতি। বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিপরীতে দেশের যাত্রা। রাজনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষা, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রেই এই পরিবর্তন আনার চেষ্টা হয়। পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িক চিন্তা ও বিকৃত ইতিহাসের অনুপ্রবেশের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মগজ ধোলাই চলে। এর ফলে কয়েকটি প্রজন্ম বড় হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার প্রকৃত ইতিহাস বঞ্চিত হয়ে। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় পাঠ্যপুস্তকে এই বিকৃতির ধারা আরো জোরালো হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পাঠ্যবইয়ে যে পরিবর্তন করে সেই পরিবর্তন এই খাতে স্মরণকালের মধ্যে বড় সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ সময় পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তুলে ধরা হয়। কিন্তু আমরা দেখছি, ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর কোনো না কোনো বইতে ইতিহাস বিকৃতি দেখা যায়। এর দায় কার? এনসিটিবির দায়িত্ব কী? নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। এমন তথ্য বিকৃতির সঙ্গে যুক্তদের কোনোভাবে আর ছাড় নেই। আমরা দোষীদের শাস্তির আওতায় দেখতে চাই। না হয় বারবার এমন বিকৃতি ঘটেই যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়