প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতুর নাওডোবা প্রান্তে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মা-মেয়েসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স দ্রুতগতিতে এসে এলপি গ্যাস বোঝাই একটি ট্রাকের পেছনে আছড়ে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সটি দুমড়ে মুচড়ে ট্রাকের নিচে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অ্যাম্বুলেন্সের ছয় আরোহী নিহত হন। নিহতরা হলেন, পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আব্দুল লতিফ মল্লিকের স্ত্রী জাহানারা বেগম, তার মেয়ে লুৎফুন নাহার লিমা (৩০), মাদারীপুর জেলার মোস্তাপুর এলাকার হিরু মৃধার ছেলে বরিশাল বেলভিউ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী ফজলে রাব্বি (২৮), গাড়িচালক জ্বিলানি (২৮), গাড়ির হেল্পার রবিউল ইসলাম (২৬) ও বরিশালের স্থানীয় সাংবাদিক মাসুদ রানা (৩০)। তিনি দৈনিক নবচেতনার বরিশাল ব্যুরো প্রধান।
জাহানারা বেগমকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় তার স্বজনদের সাহায্য করতেই তাদের সঙ্গী হয়েছিলেন সাংবাদিক মাসুদ রানা। মাসুদ রানা সব সময় অপরের উপকার করতে পছন্দ করতেন। তার শেষ যাত্রাও হলো পরোপকার করতে গিয়ে।
পুলিশ বলছে, অ্যাম্বুলেন্সের চালক টানা ২৬ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকায় ক্লান্ত ছিলেন। সম্ভবত গাড়ি চালাতে চালাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এ কারণে চলন্ত ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের নিচে চলে যায়।
জাহানারা বেগমের মেয়ে শিল্পি আক্তার জানালেন, তার মা কোলন
ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ব্রেইন স্ট্রোক করায় প্রথমে বরিশালের বেলভিউ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তার মাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হয় তার আত্মীয়স্বজন। পথে জাজিরার পদ্মা সেতু প্রান্তে দুর্ঘটনার শিকার হলে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন।
পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন জাহানারা বেগম। স¤প্রতি মেয়েকে নিয়ে দেশে আসেন। দ্রুতই আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন মা ও মেয়ে।
দুর্ঘটনার পরই পদ্মা দক্ষিণ থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে এবং লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বরিশাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর স্ত্রী জাহানারা বেগমকে (৫৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তার স্বজনরা। মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টের কাছাকাছি নাওডোবা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে পেছনদিক থেকে এলপিজি সিলিন্ডার বোঝাই একটি ট্রাকের ওপর আছড়ে পড়ে অ্যাম্বুলেন্সটি। এতে ঘটনাস্থলেই ড্রাইভারসহ ৬ জন নিহত হন।
জাজিরা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার এনামুল হক সুমন জানান, ভোররাতে হঠাৎ পদ্মা সেতু এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার খবর আসে। সাথে সাথে সেখানে গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িগুলো নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং লাশগুলো উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করেই থানার পাশে চিৎকার চেচামেচি শুনে উঠে আসি। এসে দেখি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই ৬ জন নিহত হয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে এনে তাদের নিয়ে গাড়ি ও লাশগুলো আমরা উদ্ধার করি।
হাইওয়ে ফরিদপুর সার্কেল এএসপি মো. মারুফ হাসান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও দক্ষিণ থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে সুরতহাল করেছি।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল বলেন, আমরা আমাদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা ফান্ড থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করি। এই সহায়তাটা মূলত তাদের সৎকার কাজে সহযোগিতার জন্য করা হয়ে থাকে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।