নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই উত্তরবঙ্গে : শীতে বাড়ছে অগ্নিদগ্ধ রোগী ৬০ শতাংশই গরম পানিতে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : প্রথম ঘটনাটি ফরিদপুরের সালথায়। চলতি মাসের ১২ তারিখের। তীব্র শীত নিবারণে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হন বড়ু খাতুন (৮১)। দগ্ধ হওয়ার পরের দিন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। দ্বিতীয় ঘটনাটি ৯ জানুয়ারি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার। ৪ বছরের ছেলে রায়ানকে গোসল করানোর জন্য বাথরুমে গরম পানির হাঁড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন গৃহিণী নার্গিস বেগম (৩৫)। উল্টো পাশ থেকে রায়ান দৌড়ে এলে ধাক্কা লেগে হাঁড়ি থেকে গরম পানি পড়ে নার্গিস ও রায়ানের গায়ে। নার্গিসের পা ও হাতের বেশ খানিকটা অংশ ঝলসে যায়। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রায়ান। ডান গাল, ঘাড়, বুকের অনেকটা জায়গা ঝলসে গেছে।
বড়ু খাতুন, নার্গিস কিংবা রায়ানের মতো অনেকেই আগুন পোহাতে গিয়ে বা গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। আর অঞ্চল হিসেবে উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুরে পোড়া রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আগুনে পোড়া ও গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া রোগীদের ভিড় বাড়ছে। গুরুতর রোগীদের পাঠানো হচ্ছে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি প্রকল্পের তথ্য বলছে, বছরে আনুমানিক ৫ লাখ মানুষ আগুনে পুড়ে যায়। শিল্পোন্নয়নের পাশাপাশি সচেতনতার অভাবে প্রতি বছর এই সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দগ্ধ হচ্ছেন নানা বয়সি মানুষ। অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে। মৃত্যুর সংখ্যাটিও কম নয়। গত এক বছরে শুধু বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ৫৬ হাজার ৬২৫ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৫ হাজার ১৯৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫ হাজার ১৩, মার্চে ৪ হাজার ৪১৬, এপ্রিলে ৩ হাজার ৯০৪, মে মাসে ৪ হাজার ১২৯, জুনে ৪ হাজার ৬৭৩, জুলাইয়ে ৪ হাজার ২১৬, আগস্টে ৫ হাজার ৩২, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৭৯৪, অক্টোবরে ৫ হাজার ৪৮, নভেম্বরে ৫ হাজার ৮৪ ও ডিসেম্বরে

৪ হাজার ৯২০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৯০৮ জনের। এর মধ্যে এইচডিওতে ১২৪ জনের ও আইসিইউতে ৭৮৪ জন মারা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর শীতের তীব্রতা বেশি। শীত নিবারণের জন্য অনেকে আগুন পোহান। গোসলে গরম পানি ব্যবহার করেন। সচেতনতার অভাবেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। আর দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ৫০০ বেডের বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতালে এখন রয়েছে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০ জন রোগী আসছে। বহির্বিভাগে আসা রোগীর সংখ্যা ২২০ থেকে ২৫০ জন। এর মধ্যে খুবই সংকটাপন্ন ১০ থেকে ১২ জনকে ভর্তি করানো হয়। গুরুতর অবস্থা না হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি প্রকল্পগুলোর সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন ভোরের কাগজকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর শীতের তীব্রতা বেশি। শীত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই আগুন পোহান। গরম পানি দিয়ে গোসল করেন। অসচেতনায় এই সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। এছাড়া বৈদ্যুতিক শক, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো ঘটনাগুলো বাড়ছে। দগ্ধ মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। ৬০ শতাংশ রোগী কোনো না কোনোভাবে গরম পানিতে দগ্ধ।
ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, এই দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রতিবন্ধকতা। সেবা দেয়ার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা খুবই কম। ঢাকার বাইরে কোথাও বার্ন আইসিইউ নাই। যা বড় সমস্যা। তবে খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, রাজশাহী, ফরিদপুর, সিলেট, রংপুর ও বরিশাল মেডিকেলে কলেজ এই ৫ মেডিকেল কলেজে ১০০ বেডের বার্ন ইউনিট বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্প ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী পাস করেছেন। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই টেন্ডার শুরু হবে। কাজ শুরু হলে বেশি সময় লাগবে না। কারণ এই ইউনিট বানানোর জন্য নতুন করে ভবন নির্মাণ করতে হবে না। দ্রুতই কাজ শুরু করে শেষ করা যাবে।
চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চায়না সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মাঝখানে স্থান নির্ধারণ নিয়ে কিছুটা জটিলতা ছিল। কিন্তু এখন তা সমাধান হয়েছে। কিছুদিন আগেও চায়না থেকে আমাকে মেইল করে জানিয়েছে, চায়নায় কোভিডের প্রাদুর্ভাব এখন বাড়তি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আসবে। কাজ শুরু করবে।
সচেতনতার বিকল্প নেই উল্লেখ করে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, যত বড় হাসপাতালই বানাই না কেন সচেতন না হলে আগুনে পোড়া রোগী কমাতে পারব না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে গ্যাস বেলুন নিষিদ্ধ করার পরও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না। আগুন পোহানোর কিংবা গরম পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকছে না। বিদ্যুতের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমাদের আরো অনেকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে আরো একটি শৈত্যপ্রবাহ আসছে। এই সময় যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না হয় সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়