কাগজ প্রতিবেদক : আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ আসছে ৩০ জানুয়ারির বৈঠকেই বাংলাদেশের জন্য সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে বলে আশা করছেন আন্তর্জাতিক এ ঋণদাতা সংস্থার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে এ আশা প্রকাশ করেছেন আইএমএফের এ কর্মকর্তা। এর আগে রবিবার তিনি অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আলোচনায় আমরা এ ঋণ কর্মসূচির মূল বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েছি। রাজস্ব আহরণ বাড়ানো, আরো দক্ষ একটি আর্থিক খাত গড়ে তোলার মতো দীর্ঘদিনের চালেঞ্জগুলো আলোচনায় এসেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বহুমুখীকরণে উৎসাহ দিলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো সহনশীল করে তুলতে এবং দীর্ঘমেয়াদি, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে গত নভেম্বরে ঢাকায় কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছায় আইএমএফ। সেই ঋণচুক্তির শর্তসহ খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই এখন বাংলাদেশ সফর করছেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বিবৃতিতে আইএমএফ জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি, যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জলবায়ু বিনিয়োগে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণে সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পাশাপাশি আমদানিনির্ভর জলবায়ু বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোও আইএমএফের আরএসএফের (রেজিলিয়েন্স এন্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটি) লক্ষ্য। সব ঠিক থাকলে ৪২ মাসের চুক্তিতে সরকারের নেয়া ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। আর রেজিলিয়েন্স এন্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাবে বাকি ১৩০ কোটি ডলার। প্রাথমিক সমঝোতা অনুযায়ী শেষ কিস্তি বাংলাদেশ হাতে পাবে ২০২৬ সালে। সুদের হার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
এ ঋণের অর্থ দিয়ে যেসব প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নেবে, তার উদ্দেশ্য হবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং দুর্দশায় পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে দৃঢ়, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে।
করোনা মহামারির ধাক্কা পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে; ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে; জ্বালানি সংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অক্টোবরের শেষে ঢাকায় আসেন। দুই সপ্তাহ সরকারে বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি। এ অর্থ বাংলাদেশ পাবে সাত কিস্তিতে। সব ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারিতেই প্রথম কিস্তির ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার তারা ছাড়তে পারে।