রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় এমপিরা : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ক্ষমতায় আসার প্রত্যয়

আগের সংবাদ

বরিশালে ড্রেজিং করা বালু ফের নদীতে, খোয়া যাচ্ছে টাকা!

পরের সংবাদ

উদ্বোধন করলেন নরেন্দ্র মোদি : দীর্ঘতম নৌপথে যাত্রা শুরু গঙ্গা বিলাসের > উত্তরপ্রদেশ থেকে বাংলাদেশ হয়ে যাবে আসাম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ভারত ও বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম নৌপথে যাত্রা শুরু করেছে প্রমোদতরি ‘এমভি গঙ্গা বিলাস’। গতকাল শুক্রবার সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করেন। তার নির্বাচনী এলাকা বারানসি থেকে ‘গঙ্গা বিলাস’ যাত্রা শুরু করে, যাবে আসামের ডিব্রুগড় পর্যন্ত।
প্রমোদতরির মতো এত দীর্ঘ যাত্রাপথ বিশ্বের আর কোথাও নেই। ‘গঙ্গা বিলাস’-এর যাত্রাপথে পড়বে ভারত এবং বাংলাদেশ মিলিয়ে মোট ২৭টি নদ-নদী এবং ৫০টি পর্যটনক্ষেত্র। বিশ্বের বৃহত্তম নদী-দ্বীপ মাজুলি, বৌদ্ধতীর্থ সারনাথ, বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া সুন্দরবন, ষাট গম্বুজ মসজিদ, সোনারগাঁও ছাড়াও ভারতের কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের মতো দর্শনীয় স্থান ছুঁয়ে যাবে এই তরি। ৫১ দিনের ভ্রমণে প্রমোদতরিটি ভারতের ৫টি রাজ্য এবং বাংলাদেশের কিছু অংশের ভেতর দিয়ে মোট ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে। উদ্বোধনী বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটারের এই নদীপথ ভারতের পর্যটনকে শক্তিশালী করবে এবং ভারত সম্পর্কে বিশ্ববাসীর কাছে কৌতূহল বাড়াবে। এর ফলে পূর্ব ভারতের বহু পর্যটনস্থল বিশ্বের পর্যটন ম্যাপে স্থান করে নেবে। একটি সমীক্ষার উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘জলপথ শুধু পরিবেশের জন্যই উপকারী নয়, অর্থও সাশ্রয় করে। সড়কপথের তুলনায় নৌপথ পরিচালনার খরচ আড়াই গুণ কম এবং রেলওয়ের চেয়ে এক-

তৃতীয়াংশ কম।’
তিনি বলেন, এই ক্রুজ যেখান দিয়ে যাবে, সেখানকার বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। হবে উন্নয়ন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর গঙ্গা শুধু অবহেলিতই হয়নি, তার দুই পাশের জনগণও বঞ্চিত হয়েছে। পেটের তাগিদে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই ক্রুজ নদীপথের বিশেষত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে তাকে বিকাশের সঙ্গে যুক্ত করবে।
নরেন্দ্র মোদি একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় ‘মাল্টি মোডাল টার্মিনাল’, গুয়াহাটিতে ‘মেরিটাইম স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ ও আসামের পান্ডুতে জাহাজ সারানো কেন্দ্র, উত্তর প্রদেশ ও বিহারে দুটি কমিউনিটি জেটি এবং আসামে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অথবা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে হলদিয়া মাল্টিমোডাল টার্মিনাল ভারত ও বাংলাদেশের জলপথ সংযুক্ত করবে।
এছাড়া তিনি বারানসির গঙ্গা তীরবর্তী এক ‘টেন্ট সিটি’ বা তাঁবু শহরেরও উদ্বোধন করেন। দেশ-বিদেশের ৮০০ পর্যটক থাকতে পারেন- এমন বিলাসবহুল ২৬৫টি তাঁবু গঙ্গা তীরে স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটকরা এই তাঁবু শহর থেকে গঙ্গা আরতি প্রত্যক্ষ করা ছাড়াও যোগ ও আধ্যাত্মিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। এই তাঁবু শহর পুরোপুরি আমিষ খাদ্য ও মদবিবর্জিত।
ধনী বিদেশি পর্যটকদের জন্যই প্রমোদতরি ‘গঙ্গা বিলাস’। নরেন্দ্র মোদির কথায় তারই আভাস মেলে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্ব যত বাড়ছে, ততই বেড়ে চলেছে ভারতকে জানা ও বোঝার আগ্রহ। এই ক্রুজ সেই আগ্রহ মেটাবে।
গঙ্গা বিলাসে নৌবিহারের খরচ শুধু ধনীদের পক্ষেই বহন করা সম্ভব। কারণ, ক্রুজ পরিচালক রাজ সিংয়ের মতে, ৫১ দিন ভ্রমণে মাথাপিছু খরচ পড়বে প্রায় ২০ লাখ রুপি। প্রমোদতরিতে রয়েছে মোট ১৮টি বিলাসবহুল স্যুইট। প্রতিটিতে দুজনের থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। প্রথমদিন এই ক্রুজে যাত্রাসঙ্গী হন ৩২ জন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক। এছাড়া এতে ৪০ জন ক্রু সদস্যের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক এই প্রমোদতরিটির দৈর্ঘ্য ৬২ মিটার এবং প্রস্থ ১২ মিটার।
এনডিটিভি বলছে, এমভি গঙ্গা বিলাস ভারতে তৈরি প্রথম ক্রুজ জাহাজ। প্রথম যাত্রার অংশ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের ৩২ জন পর্যটককে বারানসি বন্দরে মালা এবং সানাইয়ের সুর দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ক্রুজে যাত্রা করার আগে তারা বারানসির বিভিন্ন ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন।
পাঁচ তারকা হোটেলের সুবিধা পাবেন পর্যটকরা : বিলাসবহুল গঙ্গা বিলাসে পাঁচ তারকা হোটেলের মতো বিভিন্ন সেবা মিলবে। মোট ৮০ জন যাত্রী থাকতে পারবেন এতে। রয়েছে ১৮টি লাক্সারি স্যুট। এসব স্যুটে শাওয়ারসহ বাথরুম, রূপান্তরযোগ্য বিছানা, ফ্রেঞ্চ ব্যালকনি, এলইডি টিভি, স্মোক ডিটেক্টর, লাইভ ভেস্ট, স্প্রিঙ্কলারসহ নানা সুবিধা রয়েছে।
প্রমোদতরিটিতে বিশাল রেস্তোরাঁ, স্পা এবং সানডেকও রয়েছে। রেস্তোরাঁয় ইন্ডিয়ান ও কন্টিনেন্টাল খাবার পাওয়া যাবে। রিয়েল টিক স্টিমার চেয়ার এবং কফি টেবিলও রয়েছে জাহাজে। ‘গঙ্গা বিলাস’ নৌবিহারে জিমের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে নদী দেখতে দেখতে শরীরচর্চা করতে পারবেন পর্যটকরা।
গঙ্গা বিলাসে দৈনিক মাথাপিছু ভাড়া ২৫ থেকে ৫০ হাজার রুপি। অর্থাৎ ৫১ দিনের ভ্রমণে খরচ পড়বে সর্বনি¤œ সাড়ে ১২ লাখ রুপি। পর্যটকরা অনলাইনেই আসন বুক করতে পারবেন।
যে পথে যাবে ‘গঙ্গা বিলাস’ : ‘এমভি গঙ্গা বিলাস’ ভারতের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। বারানসির রবিদাস ঘাট থেকে যাত্রা শুরুর পর বুক্সার, রামনগর ও গাজিপুর হয়ে ৮ম দিনে পাটনা পৌঁছাবে। সেখান থেকে নৌযানটি কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে এবং ফারাক্কা-মুর্শিদাবাদ হয়ে ২০তম দিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় পৌঁছবে। পরের দিন সেটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। পরবর্তী ১৫ দিন প্রমোদতরিটি বাংলাদেশের জলসীমায় থাকবে। বাংলাদেশের বাগেরহাট, বরিশাল, ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ বেশ কয়েকটি জেলা অতিক্রম করবে। এরপর গুয়াহাটি দিয়ে সেটি আবারো ভারতে ঢুকবে এবং শিবসাগর হয়ে ডিব্রুগড়ে শেষ গন্তব্যে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশে ১ হাজার ১শ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেবে এই প্রমোদতরি। সোনারগাঁও যাবে, ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখানো হবে। ঢাকা ও টাঙ্গাইল ছাড়াও প্রমোদতরি যাবে বাগেরহাট, হাড়বাড়িয়া, কটকা, মোড়লগঞ্জ, বরিশাল, মেঘনাঘাট, সিরাজগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ, চিলমারি ও রংপুরে। পর্যটকরা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি দেখে নিতে পারবেন দু’ধারে থাকা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য স্থানও।
ভারতের সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব অবশ্য এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। ক্রুজের ছবিসহ হিন্দিতে টুইটারে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘এখন বিজেপি কি নাবিকদের চাকরিও কেড়ে নেবে? ধর্মীয় স্থানকে পর্যটন স্থান বানিয়ে অর্থ উপার্জনের বিষয়ে বিজেপির নীতি নিন্দনীয়। মানুষ কাঁশীর আধ্যাত্মিক জাঁকজমক অনুভব করতে চায়, এখানে বিলাসিতা নয়। বিজেপি আর বাহ্যিক চাকচিক্য দিয়ে আসল সমস্যা লুকিয়ে রাখতে পারবে না।’
অন্যদিকে আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা সর্বানন্দ সোনোয়াল অবশ্য এই ক্রুজটিকে দেশের জলপথের উন্নয়নের উৎস করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের চূড়ান্ত পরিণতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উন্নয়নের সুবিধার্থে ভারতজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ১০০টিরও বেশি জলপথ তৈরি করা হচ্ছে। তার দাবি, এটি আরো বেশি ক্রুজ পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। নদীর তীরে স্থানীয় ব্যবসাকে উৎসাহিত করবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ভারতে যেভাবে বিলাসী রেলপথ ‘দ্য প্যালেস অন হুইলস’ সাফল্য পেয়েছে, সেইভাবে নদীপথে এই প্রমোদতরিও ব্যবসায়িক দিক থেকে সফল হবে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা। তবু জনমানসে প্রশ্ন উঠেছে, ৫১ দিন অতিবাহিত করার মতো সময় কতজনের রয়েছে। ২০ লাখ রুপি খরচের ক্ষমতাও বা আছে কতজনের। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়