রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় এমপিরা : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ফের ক্ষমতায় আসার প্রত্যয়

আগের সংবাদ

বরিশালে ড্রেজিং করা বালু ফের নদীতে, খোয়া যাচ্ছে টাকা!

পরের সংবাদ

অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু : কার জন্য, কাদের জন্য আমি বেঁচে থাকব

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : শীতের রাতে গভীর ঘুমে ছিলেন সবাই। চুলায় হয়তো আগুন ছিল তা আর কারো খেয়াল নেই। সেখান থেকেই আগুন লেগে ঘুমে থাকা শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত ৫ জন মানুষ প্রায় কয়লা হয়ে গেল। গৃহকর্তা খোকন বসাক (৪২) আগুনে পুড়েও সৌভাগ্যক্রমে কোনোভাবে প্রাণে বেঁচেছেন। কিন্তু এই বেঁচে থাকাটাও এখন অর্থহীন। শরীরের প্রায় ২০ শতাংশেরও বেশি পুড়ে যাওয়া ক্ষত নিয়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের খোকন। কিন্তু তার কাছে দুই সন্তান, স্ত্রী, মা-বাবা হারানোর বেদনাই সবচেয়ে বেশি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বেডে তিনি শুধুই কাঁদছেন আর হা-হুতাশ করছেন। তার কাছে এখন বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন মনে হচ্ছে। মাঝরাতে হঠাৎ সন্তানরা আগুন আগুন করে চিৎকারে ঘুম থেকে বাবাকে ডেকে তুললেও তাদের কাউকেই বাঁচাতে পারেননি খোকন বসাক। এই না পারার কষ্টটিই তাকে বেশি ভোগাচ্ছে এখন। হাসপাতালের বেডে বসে শুধু বলছেন, আমি কেন বেঁচে আছি? কার জন্য, কাদের জন্য বেঁচে থাকব?
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের মহাজনপাড়ায় রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন লেগে বসাক পরিবারের ৫ জনই মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারাল। এ ঘটনায় গৃহকর্তা খোকন বসাক (৪২) আগুনে পুড়ে কোনোভাবে বের হতে পেরেছেন। তবে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা তার বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললীতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকী বসাক (৩২), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শায়ন্তী বসাক (৬) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। পুরো পরিবার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজনপাড়া এলাকার বাসিন্দা খোকন বসাকের পরিবারে এ নির্মম ঘটনা ঘটে। বসতঘরসংলগ্ন রান্নাঘর থেকেই ভয়াবহ এ আগুনের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। রাঙ্গুনিয়া ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ কামরুজ্জামান সুমন জানান, রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে টিনশেড ঘরে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। দরজা ভেঙে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ভোররাত ৪টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুন লাগার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) ও রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মাহবুব মিল্কীসহ পুলিশ ফোর্স এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় বসতঘরের জানালার গ্রিল কেটে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ৫ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক খোকন বসাকের বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেমিপাকা (পাকা ওয়াল ও টিনশেড) ঘরে বসবাস করতেন। তিন কক্ষবিশিষ্ট ঘরটিতে একটিমাত্র দরজা ছিল। সেই দরজার কাছে ছিল তাদের রান্নাঘর। স্থানীয়দের ধারণা, রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন লেগে সেখানে মজুতকৃত বিপুল পরিমাণ কাঠের লাকড়ির মাধ্যমে তা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু ঘরে দরজা ছিল একটাই, আর সেই দরজা ঘিরেই ছিল আগুনের মূল উৎসস্থল। তাই গৃহকর্তা খোকন বসাক আহত অবস্থায় বের হতে পারলেও ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা ঘরের অন্যরা বের হতে পারেননি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভেতরে আটকেপড়া দুই শিশুসহ পাঁচজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের চেষ্টা করি। কিন্তু তার আগেই আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ায় তাদের মৃতদেহই উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়