ঢাকা-ওয়াশিংটন : রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

আগের সংবাদ

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি : শিক্ষার্থী পায়নি ২০০ প্রতিষ্ঠান

পরের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : এখন বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করার পালা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতির ভালোবাসার ঋণ শোধ করেছিলেন। এখন তার রক্তের ঋণ শোধ করার পালা। দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিতে পারলেই সেই রক্তের ঋণ শোধ হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাবটি আনেন। আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে। সেটা তাকে করতে দেয়া হয়নি। তিনি নিজের জীবনে কিছু চাননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বলেছিলেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ তিনি রক্ত দিয়েই ঋণ শোধ করে গেছেন। এখন আমাদের পালা তার রক্তের ঋণ শোধ করার। সেটা করতে পারব কখন? দেশের প্রতিটি গৃহহীন গৃহ পাবে, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের মানুষকে যখন উন্নত জীবন দিতে পারব, সমৃদ্ধশালী করতে পারব, তখনই সেই রক্তের ঋণ আমরা শোধ দিতে পারব।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াই হবে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা বলে গেছেন এই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস কেউ মুছতে পারবে না। চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। জয় বাংলা বলে আমরা এগিয়ে যাব।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন। বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছিলেন। সাধারণ স্কুল শিক্ষকও ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। মানুষের ভোটের অধিকার মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সংবিধান মোতাবেক ১৯৭৩ সালেই নির্বাচন দেন। বিপ্লব বা যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়ার পর এত অল্প সময়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন দেয়ার ইতিহাস বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপরে তুলেছিলেন। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগে পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আওয়ামী লীগ যে কথা দেয়, সেটা রাখে। জাতির পিতা স্বাধীনতা দেবেন বলেছিলেন সেটা দিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে এই দেশের মানুষের কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। মানুষ অন্তত দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দেশের প্রবৃদ্ধি আট ভাগ থেকে আরো এগিয়ে নেয়া যেত উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, যুদ্ধ ও অতিমারি কারোনার কারণে আমাদের খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। যেখানে উন্নত দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, আমরা সেখানে অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সক্ষম হচ্ছি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু না জন্মালে আমরা বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড পেতাম কিনা জানি না। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই তিনি দেশবাসীকে সব বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার কোনো কিছু না মেনে ২৫ মার্চ কাল রাত্রিতে গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি বাহিনী সে দেশে নিয়ে বন্দি করে রাখে। কিন্তু তাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে অসাংবিধানিক সরকারগুলো। তারা এখনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহতের আহ্বান জানান তিনি।
তোফায়েল আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু না জন্মালে আমরা এ দেশ পেতাম না, স্বাধীন পতাকা পেতাম না। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন এ দেশ (পূর্ব পাকিস্তান) বাঙালিদের না। সে জন্য তিনি বারবার বাঙালি জাতিকে সব দিক থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে তিনি দেশের মানুষের মুক্তির জন্য যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারই নির্দেশে বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। তার ২৪ দিন পরে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, তিনি ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে এলে দেশের জনগণ পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষ বড় ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস না হারাতে। সেই আপন ভাবা মানুষই তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার জেলখানায় বন্দি করে হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভারতসহ বিশ্ব জনমতের চাপে তারা সেটা করতে পারিনি। তারপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করে এই বাঙালিরাই। এরপর অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের করে দেশকে পিছিয়ে নেয়া হয়।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করার বিভিন্ন স্মৃতি চারণ করেন।
রাশেদ খান মেনন মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের বিষয়টি আলোচনায় আনেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষকে খুব বিশ্বাস করতেন। আর তার সেই বিশ্বাসের মূল্য দিতে হয় তাকে জীবন দিয়ে। মেনন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মনন ও দূরদর্শিতার প্রসংশা করেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট মীমাংসিত বিষয়কে অমীমাংসিত করার চক্রান্ত করে চলেছে। এরাই ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, তারা এখনো দেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, এদের বিষদাঁত এখুনি ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী ফিরোজ রশীদ ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মারার রাস্তা তৈরি করেন তারই কাছের মানুষ। একদল বিপথগামী স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী দেশে-বিদেশে চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ওপর আলোচনায় আরো অংশ নেন এডভোকেট কামরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, রওশন আরা মান্নান প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়