ঢাকা-ওয়াশিংটন : রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

আগের সংবাদ

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি : শিক্ষার্থী পায়নি ২০০ প্রতিষ্ঠান

পরের সংবাদ

রাজপরিবারে কালো ঘণ্টা বাজাল হ্যারির ‘স্পেয়ার’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : প্রিন্স হ্যারি অগোছালো জীবনযাপনের নিরন্তর অভিযোগ থেকে স্ত্রী মেগানকে নিয়ে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে ইংল্যান্ডের এই যুবরাজকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। কেউ বলেন, তিনি ব্রিটেনের রাজপরিবারের অচলায়তন ভেঙে দেয়া বজ্রনিনাদ, কেউ বলছেন তিনি শিকল ভাঙার কবি। কেউ কেউ বলছেন রাজপরিবার তো বটেই গোটা ব্রিটেনের সম্মানই ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন তিনি। আর তাই তো সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি হোক, হ্যারি মানেই শিরোনাম। বিশ্ব মিডিয়াজুড়ে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘স্পেয়ার’ এরই মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। গতকাল বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। এক সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ১৬টি ভাষায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে যা আরেকটি রেকর্ড।
বিবিসি বলছে, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে লন্ডনের বইয়ের দোকানগুলো মধ্যরাতেই খোলা রাখে মালিকরা। সরাসরি লাইভ জানার জন্যে এবং বইয়ের একটি কপি সংগ্রহের জন্য দোকানগুলোর সামনে রাতেই লম্বা লাইন পড়ে যায়। স্পেয়ারের বহু অংশ আগেই ফাঁস হওয়া ও গত সপ্তাহে স্পেনে বইটি সময়ের আগেই বাজারে এসে যাওয়ায় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার পর লন্ডনে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
ব্রিটিশ বুক রিটেইলার ওয়াটারস্টোনস জানিয়েছে, গত এক দশকের মধ্যে তাদের সবচেয়ে বেশি আগাম অর্ডার পাওয়া বইয়ের মধ্যে এই বই শীর্ষে উঠেছে। বইটির বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখা লন্ডনের পিকাডেলির দোকানটি মঙ্গলবার নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই খোলা হয়। বইটি ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করছে। এই স্মৃতি কথাটি এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে অনলাইন রিটেইলার অ্যামাজনের বেস্ট সেলারগুলোর শীর্ষে উঠে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে বইটির ফাঁস হওয়া বিভিন্ন অংশ সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। রাজপরিবারের সঙ্গে দ্ব›েদ্বর কথা প্রকাশ করে বহু বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ব্রিটিশ ডিউক অব সাসেক্স হ্যারি বই প্রকাশের আগেই। ৪১০ পৃষ্ঠার এই স্মৃতি কথায় ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত দ্ব›দ্ব ও উত্তেজনার কথা এসেছে। প্রিন্স হ্যারির ভাষ্যে তার বেড়ে ওঠা ও রাজপরিবারের সঙ্গে ঝগড়ার কথাও উঠে এসেছে।
তবে এ পর্যন্ত এসব নিয়ে বাকিংহাম প্রাসাদ ও কেনসিংটন প্রাসাদ কোনো মন্তব্য করেনি এবং কোনো মন্তব্যের অনুরোধে সাড়াও দেয়নি। কিন্তু বইটিতে দাবি করা

হয়েছে, তার বাবাকে (রাজা তৃতীয় চার্লস) দ্বিতীয় বিয়ে না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন প্রিন্স হ্যারি। আফগানিস্তানে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করার সময় তিনি ২৫ জন তালেবান যোদ্ধাকে হত্যা করেছেন। অংশত প্যানিক অ্যাটাক এড়াতে অবৈধ মাদক গ্রহণ করেছেন এবং তার স্ত্রী মেগানের সঙ্গে বড় ভাইয়ের স্ত্রী ক্যাথরিনের (কেট মিডলটন) বনিবনা ছিল না। এই বইয়ের প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে হ্যারির মাকে (প্রিন্সেস ডায়না) হারানোর শোক, যা তিনি আর কাটিয়ে উঠতে পারেছিলেন না। হ্যারি জানিয়েছেন, মাকে হারানোর আঘাত তিনি বহুদিন বয়ে বেড়িয়েছেন। ডায়নাকে অনুসরণ করার জন্য সাংবাদপত্রকে দায়ী করা হয়েছে এবং বইটির প্রচারের জন্য দেয়া বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারের একটিতে প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, গণমাধ্যমের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়া তার ‘জীবনব্যাপী’ কাজ হবে।
বইটিতে প্রিন্স হ্যারি ও প্রিন্স উইলিয়ামের জীবনের অপ্রত্যাশিত কিছু বিবরণ আছে বলে মন্তব্য বিবিসির। বইটিতে প্রিন্স হ্যারি জানিয়েছেন, তিনি তার নিজের পরিবারের কাছ থেকে নয়, বিবিসির ওয়েবসাইট থেকেই প্রথম রানি এলিজাবেথের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলেন।
বইয়ের কৃতজ্ঞতা স্বীকার অংশে রাজপরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তাদের বদলে হ্যারি যুক্তরাজ্যে থাকা তার এক বন্ধুকে ‘বিশেষ ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন। এই বন্ধু বিভিন্ন দুঃসময়েও তার পাশে ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ‘মানসিক আঘাত’ কাটিয়ে উঠতে থেরাপিস্ট তাকে সহায়তা করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেছেন ডিউক অব সাসেক্স।
বিবিসি বলছে, হ্যারি তার সৎ মা কুইন কনসোর্ট ক্যামিলা, বড় ভাই প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়ামসহ রাজপরিবারের সঙ্গে উত্তেজনার কথা প্রকাশ করে বহু বিতর্ক উসকে দিয়েছেন।
হ্যারির ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য ফাঁস হওয়া অবশ্য নতুন নয়। ব্রিটেনের রাজপরিবারের হাজার রকমের নিয়মকানুন। সেই নিয়মের তোয়াক্কা কোনো দিনই খুব একটা করেননি প্রিন্সেস ডায়ানার এই ছোট ছেলে। সমালোচক মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, ব্রিটেনে রাজপরিবারের কঠোর নিয়মকানুনের ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন ডায়ানাও। নিজের আচরণে বার বার ইঙ্গিত দিতেন দ্রোহের। ছোট ছেলে বরাবরই হেঁটেছেন সেই পথে।
বিবিসি বইটির একটি কপি পেয়েছে এবং এটি অনুবাদও করছে। আইটিভিতে হ্যারির দেয়া সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ হয়েছে গত রবিবার সন্ধ্যায়।
রাজপরিবার পতনের ঘণ্টা : রাজ পরিবারের একজন লেখক ক্যাথেরিন মেয়ার। তিনি বলেছেন, হ্যারির বই রাজপরিবারের প্রতি জনগণের ভাবনাকে অবমূল্যায়ন করতে পারে। ডিউক অব সাসেক্সের স্মৃতিগ্রন্থে রাজপরিবারের আচরণের যে প্রকাশ তা একেবারেই বিপর্যকর। বইটি ব্রিটেনবাসীর আবেগ-অনুভূতি, শ্রদ্ধা-ভালবাসার মানদণ্ডে আঘাত করবে। মেয়ার মনে করেন, ‘স্পেয়ার’ রাজপরিবারের মধ্যকার ব্যক্তিগত দ্ব›দ্ব উথলে দিয়েছে। সাংবিধানিক রাজতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই বই ব্রিটিশ রাজপরিবারের উপর ছুড়ে মারা হ্যারির একটি ‘বম্বশেল’।
যদিও ব্রিটিশ জনগণ হয়তো এর পরিবর্তন চান না। তবু এটা রাজপরিবারের শেষের সূচনা হতে পারে। হতে পারে পতনের ঘণ্টা। এটা নিয়ে আমাদের আলোচনা করা উচিত। এর মাধ্যমে হয়তো রাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব তৈরি হবে। এছাড়া ডানপন্থি রাজনীতির উত্থানে সহায়ক হবে।
১৯৯৭ সালে মা ডায়ানা প্রিন্সেস অব ওয়েলসের মৃত্যুর পর মাত্র একবার কাঁদতে পেরেছিলেন প্রিন্স হ্যারি। আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’ প্রকাশ উপলক্ষে দেয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন প্রিন্স হ্যারি। সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ স¤প্রচার মাধ্যম আইটিভির সাংবাদিক টম ব্র্যাডবিকে হ্যারি বলেন, জনসমক্ষে শোক প্রকাশের সুযোগ তাদের ছিল না। যখন তার মাকে সমাহিত করা হয়, তখন তিনি একবারই কাঁদতে পেরেছিলেন।
কিন্তু যে রাজপরিবার এত নিয়মনীতির পাশে আবদ্ধ, সেখানে হ্যারি এমন ব্যতিক্রমী হলেন কিভাবে? হারা হ্যারিকে কাছ থেকে দেখেছেন, তারা বলেন এই পরিবর্তনের পেছনে মূলত দুটি বিষয় রয়েছে। হ্যারির ব্রিটিশ সেনায় যোগদান ও আরো পরে অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের সঙ্গে প্রণয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়