ঢাকা-ওয়াশিংটন : রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

আগের সংবাদ

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি : শিক্ষার্থী পায়নি ২০০ প্রতিষ্ঠান

পরের সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী : আওয়ামী লীগকে উৎখাত করা এত সহজ নয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১১ জানুয়ারির গণঅবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের সঙ্গে জুটে অতি বাম, অতি ডান, সব অতিরা এক হয়ে গেছে। আতিপাতি নেতা হয়ে একেবারে আমাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতই করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল। আওয়ামী লীগকে উৎখাত করা এত সহজ নয়।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফারজানা ইসলাম, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তারানা হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, বর্তমান সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ ডিসেম্বর নিয়ে। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে। এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। তাদের সঙ্গে জুটেছে অতি বাম, অতি ডান। তারা নাকি একেবারে ক্ষমতা থেকে আমাদের উৎখাত করবে। আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় বিএনপি ও তাদের পক্ষে ভাড়াটিয়ারা দেশে-বিদেশে বসে সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা জানে না, কেউ যদি ভোট চুরি করে তাকে আওয়ামী লীগই ক্ষমতা থেকে হটাতে পারে। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বারবার। আমরা গণতন্ত্রের চর্চা নিজের দলে করি, দেশেও গণতন্ত্রের চর্চা করি।
বিএনপি জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত : ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি এবং আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর জনগণের স্বার্থে কাজ করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে, আর্থসামাজিক উন্নতি করে জনগণের কল্যাণ সাধন করেছি বলেই আজ জনগণ ভোট দেয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। খালেদা জিয়ার অধীনে দু-দুটি নির্বাচন। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আর ২০০৬ সালের জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ, জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। বারবার যারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, বিতাড়িত, তারা গণতন্ত্র চর্চা করল কবে? 
আওয়ামী লীগ ওয়াদা রাখে : গণতন্ত্র রক্ষার নামে বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ওদের জন্ম গণতন্ত্রের জন্য হয়নি। হয়েছে ক্ষমতা দখলকারী, সংবিধান লঙ্ঘনকারী সামরিক শাসকের পকেট থেকে। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল গঠন করা হয়েছিল সেই দল ভাসমান। এদের বাংলাদেশের প্রতি কোনো দরদ নেই। এজন্যই তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ খুন করে। হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে তারা আনন্দ পায়। নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা ও

ইভিএম আওয়ামী লীগ চালু করেছে।
আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ যে কী ছিল, এখনকার ছেলেমেয়েরা সেটা ধারণাই করতে পারবে না। তারা চিন্তাই করতে পারবে না। তাদের জানা উচিত, আওয়ামী লীগ এটা ওয়াদা দিয়েছিল। ওয়াদা দিয়েছিল বলেই সেটা পূরণ করেছে। আওয়ামী লীগ যেটা বলে, সেটা রাখে।
বঙ্গবন্ধু সেদিন দেশ গড়ার রূপরেখা দিয়েছিলেন : ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। কিন্তু সেটা অধরা ছিল। বাঙালির মুখে কিন্তু সেই রকম হাসি ফোটেনি। ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা দেশে ফিরে আসার পরই আমাদের বিজয় সম্পূর্ণ হলো। স্বাধীনতা অর্জন সার্থক হলো। মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছে আসেননি, বাংলার মাটিতে ফিরে বঙ্গবন্ধু যান মানুষের কাছে, রেসকোর্স ময়দানে। লাখো জনতার সামনে তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন কীভাবে, কী নীতি-আদর্শে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চলবে। রূপরেখা দিয়েছিলেন দেশ গড়ার। ঘোষণা দিয়েছিলেন, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, খুব আশা ছিল তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন। ১০ জানুয়ারি তিনি যে কথাগুলো বলেছিলেন, একে একে সবই করেছিলেন। মাত্র ৯ মাসে সংবিধান দেন আমাদের। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে কেউ এত দ্রুত গড়ে তুলতে পারে, এ নজির বোধহয় কেউ দেখাতে পারবে না। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কেবল বঙ্গবন্ধুর আমলেই ৯ শতাংশের বেশি হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজের হাতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই স্বাধীন সার্বভৌম দেশের উপযোগী করে গড়ে তুলেছিলেন। সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর কয়েকটা বছর সুযোগ পেলে স্বাধীনতার ১০ বছরেই বাংলাদেশ হতো উন্নত দেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য! স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ওইসব দেশও থেমে থাকেনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির হুকুম দেয়া হয়েছিল। এমনকি, জেলাখানার পাশে কবরও তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ভারতীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী দেশে দেশে ধরনা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের চাপেই শেষ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়