কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

সংখ্যার জোট সমর্থনে জোর পাবে কতখানি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নতুন বছর নতুন আশা, স্বপ্ন বাস্তবায়নেও নতুন কৌশল, নতুন সমীকরণ, নতুন জোট, নতুন লাভ-ক্ষতির হিসাব। রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলাধুলা, শিক্ষা-সংস্কৃতি- সবখানেই নতুন বছরের একটা ইতিবাচক নতুন হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নতুন ভোর, নতুন সূর্য, নতুন দিনে, নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন সবার মনেই। ২০২২ ছিল করোনাকে জয় করে টিকা আবিষ্কারের মাধ্যমে একটি নতুন শুরুর বছর, যেখানে মানুষ অতীতের দুঃসহ ব্যথা-বেদনাকে বিদায় দিয়ে ২০২২কে বরণ করে নিয়েছিল। কিন্তু বছর শুরুর পর ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা-পাল্টা হামলা যেন পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দেয়! বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়ে, দেখা দেয় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা আর সংকট। ডলার ও জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক দেশ নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে অর্থনৈতিক মহামন্দার কবলে পড়ে। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়েছে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপড়েনে ব্রিটেন ও পাকিস্তানে পরিবর্তন হয় সরকারপ্রধানের। দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ কিংবা আফ্রিকা বাদ যায়নি কোনো অঞ্চল। সবাই কমবেশি মূল্যস্ফীতির করাল গ্রাসের শিকার। যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হয় তবে এ সমস্যা হয়তো ২০২৩ সালেও ভোগাবে বিশ্ব অর্থনীতিকে। বছরের শেষ দিনগুলোতে বিশ্ববাসী মেতে ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে জমকালো আয়োজন গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ নিয়ে।
ঘটনাবহুল ২০২২-এ সবকিছু ছাপিয়ে সমান উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠও। বিশেষ করে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী দলের কর্মসূচি রাজপথ দখলের নানা কৌশল এবং পাল্টা কৌশল দেশীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজর এড়ায়নি। ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে দেশে-বিদেশে নানা অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্র হয়েছে, যা বাংলাদেশ সফলভাবেই মোকাবিলা করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সাল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বছর হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। বিরোধীদের কূটনৈতিক শিবিরে গমন, কূটনীতিকদের রাজনৈতিক আচরণ, সরকারের সহিষ্ণু আচরণ, বিরোধীদের ছাড় দেয়া বা না দেয়া ইত্যাদি সাংবিধানিক সহজ সুন্দর বিষয়কে জটিল ও কঠিন করে তুলতে পারে।
গোলাপবাগ সমাবেশের পর প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াত ১০ দফা ও ২৭ দফা ঘোষণার মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামত তত্ত্ব ও রেইনবো নেশনের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। রাজনৈতিক নয়া কৌশল হিসেবে ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয় বিএনপি। এরই মধ্যে ৭টি দলের সমন্বয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ; ১২ দলীয় জোট ও ১১ দলীয় জোট ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ গঠিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জোট, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি ও গণফোরামের একটি অংশ মিলে ৩৩টি দল জোট গঠন করে। বিশ্লেষকদের মতে, জোটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের হিসাব মেলাতে স্বাধীনতাবিরোধীদের দল জামায়াতের সঙ্গে জোট থেকে আলাদা হয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিতে সবাইকে এক করতেই বিএনপি এ কৌশল গ্রহণ করেছে। জোটের রাজনীতিতে আমরা ৩৩ দলকে এক হয়ে ১০ ডিসেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বর রাজপথে আন্দোলন করতে দেখলাম, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সংখ্যায় বেশি হলে জোটের শক্তি আদর্শিক শক্তির চেয়ে বেশি হবে তা এখন আর মনে হচ্ছে না।
সরকার ২০২২ সালে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছে; বিশেষ করে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, শত সড়ক, শত সেতু কিংবা মেট্রোরেলের মতো আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা তাতেই হয়তো সবার নজর আটকে আছে বা তাদের চিন্তায় এ ধারা অব্যাহত রাখার বাসনা অব্যাহত আছে। আধুনিক উন্নয়নের এ ধারা নগর জীবনকে শুধু সহজই করেনি বরং তা নাগরিকদের উচ্ছ¡সিত করেছে, যা আমরা মেট্রোযাত্রীদের মাঝে দেখলাম। হয়তো এজন্যই বিরোধী জোটের আন্দোলন বা গণদাবি আসলে হালে পানি পাচ্ছে না। তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংখ্যার জোট সমর্থনে জোর পাবে কতখানি তা আসলে ভাবার সময় এসেছে। কারণ সংখ্যা সর্বস্ব জোটগুলো যদি গণদাবি আদায়ে গণজাগরণ তৈরিতে ভূমিকা না রেখে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে তা ইতিহাস রচনা করতে পারবে বলে মনে হয় না।

তানজিব রহমান
গবেষক ও লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়