প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : মনছের আলী চুরমুটু ছিলেন একজন ঘরামি। বলতে গেলে তার আদি পেশা ছিল বাঁশ দিয়ে ঘর ও বেড়া নির্মাণ। বাবা কফিল উদ্দিনের হাত ধরে তিনি এসেছেন এই পেশায়। তার পৈতৃক নিবাস উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের পাঠানপাড়ায়। যুগের হাওয়ায় সমাজ সংসারে সর্বত্র পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। বর্তমানে গ্রাম বা শহর সবখানেই ইট-পাথরের ব্যবহার বেড়েছে।
দীর্ঘ টেকসইয়ের জন্য নিদেনপক্ষে মানুষ ইস্পাত ও টিন ব্যবহার করছেন। গত ২০০০ সালেও গরিব, নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা বাঁশ দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করত। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে এ চল ছিল চোখে পড়ার মতো। বলতে গেলে এখন ঘর তৈরির কাজে বাঁশের ব্যবহার সিকিভাগে নেমেছে। এতে করে ঘরামিদের কদর কমে গেছে।
কাজ না থাকায় তারা পেশা বদল করছে বাধ্য হয়ে। ভিন্ন ভিন্ন পেশায় এখন ঘরামিরা। একই অবস্থায় পড়ে মনছের আলী চুরমুটু আদি পেশা বদলে বর্তমানে হাট, বাজার ও পাড়ায় ফেরি করে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। অনেক সময় ক্রেতাদের কাছে টানতে সুরেলা কন্ঠে লোকগীতি ও ভাওয়াইয়া গান গায়। তার সুমধুর কন্ঠের আওয়াজ শুনেই বাড়ির বাইরে চলে আসে শিশু, কিশোরসহ গৃহবধূরা। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি সে ফেরি করে মুখরোচক পণ্য বিক্রি করে।
মনছের আলী চুরমুটুর ভোরের কাগজকে বলেন- বাড়ি-ঘর তৈরিতে বাঁশের ব্যবহার না থাকায় কেউ ডাকে না। কাজ না থাকায় পরিবারসহ প্রায়ই হাভাতে কাটাতে হয়। স্বল্প পুঁজি নিয়ে তিনি ঝালমুড়ির দোকান শুরু করেন। তবে বাড়ির বাহির আঙ্গিনায় ক্রেতা হাতেগোনা কয়েকজন। ফলে পুঁজি গায়েব হতে শুরু হলো। এমন অবস্থায় বিক্রি বাড়াতে শহর, গ্রামগঞ্জের হাট ও পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করে ঝালমুড়ি বেচার চিন্তা করেন। টুকরিতে মাথায় করে ঝালমুড়ির বিক্রির উপকরণ নিয়ে চলাফেরা করা কঠিন তাই বাঁশ দিয়ে বানালেন আধুনিকমানের ঠেলাগাড়ি। এক সময় বাঁশ দিয়ে বাড়িঘর তৈরির পুরনো বিদ্যা কাজে লাগালেন। মনের কল্পনায় শুরু করলেন ঠেলাগাড়ি বানানোর কাজ। অল্পদিনের মধ্যেই তা বাস্তবরূপ পেলো। এখন তার হাতে তৈরি বাঁশের দৃষ্টিনন্দন ঠেলাগাড়িটি সাধারণের কাছে মডেলে পরিণত হয়েছে। নজর কাড়ছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের। প্রতিদিন তার ঝালমুড়ি বিক্রি করে আয় হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এতে করে এখন আর তাকে হাভাতে দিন কাটাতে হয় না। তবে মজার ব্যাপার হলো তিনি জন্মগতভাবেই বঙ্গবন্ধু, নৌকা আর শেখ হাসিনার অন্ধ ভক্ত। ঠেলাগাড়িতে বাঁশ দিয়ে তৈরি করেছেন ছোট একটি প্রতীকী নৌকা।
মনছের আলী চুরমুটু বিবাহিত। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। ইতোমধ্যে বড় ছেলে ও বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিতে গিয়ে বেঁচে দিয়েছেন পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সামান্য ভিটে মাটি। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে থাকেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে। পরের আশ্রয়ে ঘরামি চুরমুটু এখন রাত্রিযাপন করেন। তার দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তার জন্য একটা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করে রাতে শান্তিতে ঘুমানোর সুযোগ চান তিনি।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।