কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

তৃতীয় লিঙ্গের ইউপি চেয়ারম্যান ঋতুর কথা এখন পাঠ্য বইয়ে

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রোকনুজ্জামান মিলন, ঝিনাইদহ থেকে : পাঠ্য বইয়ে স্থান করে নিয়েছেন ঝিনাইদহের তৃতীয় লিঙ্গের ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া নতুন জাতীয় পাঠ্যক্রমের মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের স¤প্রদায় অধ্যায়ের ৫২ পৃষ্ঠায় তার একটি ছবি ছাপা হয়েছে। একই অধ্যায়ে সমাজ ও পেশাগত জীবনে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী লিনিয়া শাম্মি রানী চৌধুরী ও বিপুল বর্মনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 
নজরুল ইসলাম ঋতু দেশের প্রথম নির্বাচিত তৃতীয় লিঙ্গের ইউপি চেয়ারম্যান। ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানাকে পাঁচ হাজার ২৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নির্বাচনে নজরুল ইসলাম ঋতু ৯,৫৫৭ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম ছানা পান ৪,৫২৯ ভোট। ভোটে নির্বাচিত হওয়ার আগে-পরে বিবিসি ও সিএনএনসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে উঠে আসে ঋতুর নাম। তারা ফলাও করে তার জীবন সংগ্রামের নানা দিক তুলে ধরেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী কয়েকজনের ছবি সংবলিত বই তুলে দেয়া হয়। বইয়ে তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, জন্মের পর খুব অল্প বয়সে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে ‘গুরু মা’র কাছে চলে যেতে হয়। যেখানে বসবাস করা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে একটি পরিবারের মতো বসবাস করে। তারা শিশু আর নতুন বর-কনেকে আশীর্বাদ করে টাকা উপার্জন করে। তারা স্বাভাবিক মানুষের মতো লেখাপড়া ও চাকরি করতে চাইলেও অন্যরা নিতে চায় না। পৃথিবীর অন্য দেশে ট্রান্সজেন্ডাররা স্বাভাবিক জীবনযাপন করলেও আমাদের দেশের চিত্র ভিন্ন। তবে, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়ে কাজ করছে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরো তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকায় থাকেন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাওয়ায় মাত্র সাত বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যেতে হয়। লেখাপড়ার হাতেখড়ি শুরু করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনো হয়নি।
ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানায় দলের গুরুমার কাছেই বেড়ে ওঠা। এখন তার বয়স ৪৪ বছর। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে গুরুমার পরের দায়িত্বটা তিনি দেখভাল করতেন। বর্তমানে নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থেকে স্থানীয় বিভিন্ন উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকায় থাকলেও পরিবারের টানে প্রায়ই বাড়িতে আসতেন ঋতু। তার কষ্টার্জিত জমানো অর্থ দিয়ে জন্মস্থান দাদপুর গ্রামসহ ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নে আর্থিক সহযোগিতা করতেন। এ পর্যন্ত তার এলাকায় দুটি মসজিদ করেছেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন মন্দিরের উন্নয়নে অর্থ দান করেছেন। এলাকার কেউ অসুস্থ বা কন্যাদায়গ্রস্ত হয়ে তার কাছে গিয়ে কখনো বিমুখ হতে হয়নি। কয়েক বছর আগে গ্রামের বাড়ি দাদপুরে তার বাবার জমিতেই বানিয়েছেন একটি পাকা বাড়ি। বর্তমানে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। নজরুল ইসলাম ঋতু ভোরের কাগজের এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ে আমার ছবিসহ নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এটা আমার জন্য বিশাল একটা পাওয়া। আমি অনেক খুশি হয়েছি। এত বেশি খুশি হয়েছি যে, আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। আমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। আমি মানুষের উন্নয়নে আরো ভালো কিছু করতে চাই। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ বলেন, তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের আমাদের সমাজে অবহেলার চোখে দেখা হয়। তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে সফলতা পাওয়া ট্রান্সজেন্ডারদের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা পিছিয়ে রয়েছেন। তারা তাদের জীবনমান উন্নয়ন করতে পারছেন না। সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়