কুমিল্লাকে হারের স্বাদ দিল রংপুর

আগের সংবাদ

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য বাড়ানোয় জোর প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

ঢাকা লিট ফেস্টে আবদুলরাজাক গুরনাহ : আমি আমার জন্য বলি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আমি যা দেখি তাই লিখি। আমি আমার জন্য বলি। এ বিষয়ে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে নিজের জন্য লেখার মধ্যে কী যৌক্তিকতা। আমি নিজে যা দেখি ও জানি তাই প্রকাশ করি। ফলে আমি কোনো বৃত্তের ভেতরে থাকি না।
গতকাল শনিবার ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘কেন্দ্রবিহীন এক বিশ্ব’ শীর্ষক সেশনে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ এসব কথা বলেন। সেশনটির সঞ্চালনায় ছিলেন ভারতীয় সাংবাদিক, সাহিত্য-সমালোচক, সম্পাদক এবং লেখক নীলাঞ্জন এস রায়।
গুরনাহ বলেন, লেখার পর পড়ে মনে হয়- হয়তো এটিই লিখতে চাচ্ছিলাম, আবার কখনো মনে হয়- কী আবোলতাবোল লিখলাম! আমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে কারো পক্ষে লেখা নয়, তবে আমি যেভাবে দেখি সেটিকে তুলে ধরা। আমি যখন কোনো কিছু পড়ি তখন আমার মতো করেই পড়ি। আমি সবার উদ্দেশ্যেই বলি, আমি কখনো দেখি না আমার দর্শক কিংবা পাঠক কারা। আমি সবার জন্য লিখি যারা আমার লেখা পড়ে। গুরনাহ বলেন, লেখক হিসেবে আমার শুরুটা ছিল কোনো কিছুর প্রতি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ হওয়া থেকে। এটা এমন না যে আমি মাইগ্রেট করছি, এটি জীবনের একটা সিদ্ধান্ত ছিল। প্রতিশ্রæতিটি এমন ছিল না যে কোনো কিছু লেখার জন্য লিখতে হবে। এটি অতটা সহজ ছিল না, আবার অন্য কিছু করব বলেও হাল ছেড়ে দেইনি। যখন প্রকাশ করতে পারিনি, তখন মন খারাপ হয়নি। তার মানে এই না যে অন্য কিছু করার জন্য বসে থাকব। তখন মনে হতো, ইশ! যদি কেউ আমার বই প্রকাশ করত। তারপর আরেকটা লিখব, যেটা আমি করেছি। একই সময় সেই প্রতিশ্রæতি, আকাক্সক্ষাটা ছিল লেখার প্রতি। গুরনাহ আরো বলেন, সাধারণ জীবনযাপন করতে গেলে কিছুটা জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। আমরা এর মধ্য দিয়েই জীবনযাপন করি। মানুষ হওয়ার মধ্যে অনেক কঠিন বিষয় থাকে।
রুবাইয়াৎ হোসেনের সঞ্চালনায় ‘থ্রো হার লেন্স’ নামে অপর এক সেশনে অংশ নেন তিন নারী নির্মাতা ও এক চিত্রগ্রাহক। তারা হলেন- তাসমিয়াহ আফরিন মৌ, রুবাইয়াৎ হোসেন, এলিজাবেথ ডি কস্টা, হুমায়রা বিলকিস ও সিনেমাটোগ্রাফার রাওয়ান সায়েমা। আলোচনায় তারা বলেন, নারীরা আত্মপ্রকাশ করছেন নির্মাতা-প্রযোজক হিসেবে, এগিয়ে আসছেন সিনেমাটোগ্রাফিতেও। এই অগ্রযাত্রা যে সহজ নয়, তা কমবেশি সবার জানা। মূলধারার ইন্ডাস্ট্রি তথা এফডিসি নয়, বরং স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র-সমাজই তাদের সামনে বড় প্রতিবন্ধকতা।
তাসমিয়া আফরিন মৌ বলেন, পথচলায় খুব একটা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি তিনি হননি। নারী নির্মাতাদের জন্য মূলধারা তথা এফডিসির মানুষজন অত্যন্ত সহযোগিতাপরায়ণ। তারা কখনো নারী-পুরুষ বিভাজন করে না। কিন্তু আমাদের ক্লাসের মানুষরাই একটা মুখোশ পরে থাকেন। যা মাঝেমধ্যে খুলে যায়।
রাওয়ান সায়েমা বলেন, বাবা কলেজের শিক্ষক। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বই পড়ার সুযোগ হয়েছে। এ কারণে বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে বলত, স্ক্রিপ্ট রাইটার হতে। কিন্তু আমি বলতাম, আমি সিনেমাটোগ্রাফার হতে চাই। আমি কারো ওপর নির্ভর করতে চাই না। সেজন্য ফিল্মিং, এডিটিং, সব শিখেছি।
এলিজাবেথ ডি কস্টা জানান, তার জন্ম-বেড়ে ওঠা খ্রিস্টান

পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই বাবা তাকে সমাজের নানান রক্ষণশীলতায় অভ্যস্ত করতে চেয়েছেন। কিন্তু সেটা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি উপলব্ধি করেছেন, মানুষ হিসেবে তারও অনেক কিছু বলার আছে, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার রয়েছে। নিজেকে প্রমাণের জন্যই সিনেমাকে বেছে নেন তিনি।
‘টুম্ব অব স্যান্ড’ শীর্ষক সেশনে রিফাত মুনীরের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুকারজয়ী ভারতীয় ঔপন্যাসিক গীতাঞ্জলী শ্রী এবং অনুবাদক ডেইজি রকওয়েল।
গীতাঞ্জলি শ্রী বলেন, আমাদের চারপাশেই আছে গল্পের উপাদান, এরা আমার মাঝে প্যারালাল ইউনিভার্স তৈরি করে। গল্প হয়ে বেরোতে চায়। তখন আমি লিখতে বসি। একবার লেখা শুরু করলে গল্পই আমার লেখাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
‘আইকনস ফ্রম মেরিলিন টু মাও এন্ড সাম মোর’ শিরোনামে সেশনে সঞ্চালক সারা চার্চওয়েলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন লেখক, সাংবাদিক ও অর্থনৈতিক ডমিনিক জিয়েগলার, সাংবাদিক ও লেখক ফ্লোরেন্স নইভিল্লে এবং প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট সুদীপ চক্রবর্তী।
যৌন শিক্ষা, নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা, সমতা নিয়ে ঢাকা লিট ফেস্টে ‘সম্মতি’ শিরোনামে আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘সেক্স নেয়ার জিনিস। এই নেয়াটা পুরুষ করবে আর নারী দেবে’- এটাই প্রচলিত সমাজে। এখানে নারীর কতটুকু সম্মতি আছে সেটি বিবেচনায় নেয়া হয় না। পরিবার থেকে এ বিষয়ে কথোপকথন জরুরি। আমাদের পরিবার বা সমাজে যৌনশিক্ষা নিয়ে কোন ধরনের আলোচনা হয় না। শিশুরা পপ কালচার, পর্নোগ্রাফি থেকে যৌন বিষয়গুলো নিয়ে জানে। আমাদের পরিবারে এ বিষয়ে আলোচনার কোনো জায়গা নেই।
নারী অধিকার কর্মী মাহফুজা মালার উপস্থাপনায় এতে কথা বলেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জেন্ডার এন্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ক্লাস্টারের গবেষণা সহযোগী শ্রাবস্তী রায় নাথ, পথচলা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা মনীষা মীম নিপুণ, নারীবাদী কর্মী মারওয়া কাজী মোহাম্মদ, বাল্যবিবাহ রোধকর্মী সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া।
এছাড়া ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য সমালোচক অমিতাভ ঘোষের ‘দ্য নাটমেগস কার্স’ বই নিয়ে কথা বলেন মিশেলা চৌধুরী। তিনি বলেন, আমি খুব গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে লিখি। কিন্তু আমার বইগুলো হতাশাজনক নয়। একটু মজা না করে বই লেখা আমার জন্য অসম্ভব।
সকালে গুরুদোয়ারার আধ্যাত্মিক সুরের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তৃতীয় দিনের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর সকাল ১০টায় আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে কোক স্টুডিও বাংলার নেপথ্যের গল্প শোনান সংগীতশিল্পী বুনো, আবির রাজবিন এবং চিত্রনাট্যকার গাওসুল আলম শাওন। একই সময় বাঙালির চিন্তার ইতিহাস নিয়ে কথা বলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান ও তপধীর ভট্টাচার্য। এদিন শিশুদের জন্য ছিল ‘লাল পরী, নীল পরী’ শীর্ষক পাপেট শো।
আজ রবিবার শেষ হচ্ছে চার দিনের এই ব্যয়বহুল সাহিত্য আয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়