সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল : শান্তিপূর্ণ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ

আগের সংবাদ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে > উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দেবেন না

পরের সংবাদ

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি চাই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথম দিকেই। এছাড়া বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর তালিকায় ঘুরেফিরে প্রথম স্থান দখল করে আছে রাজধানী ঢাকা। জাতিসংঘের এক তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। দেড় কোটিরও বেশি মানুষের আবাসস্থল ঢাকা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ রোধে যেখানে পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে, সেখানে ঢাকা ব্যর্থ। বায়ুদূষণে ঢাকায় ভয়ংকর পরিস্থিতি চলছে। গত ৭ বছরের কোনো একটি মাসও ভালো বায়ু সেবনের সুযোগ হয়নি রাজধানীবাসীর। ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় অস্বাস্থ্যকর এবং এতটাই ধুলাময় যে প্রতিদিন রাজধানীর গাছের পাতায় জমছে প্রায় ৪৫০ টন সমপরিমাণ ধুলাবালি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত চার কারণে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন রাজধানীবাসী। প্রথমত, পুরনো যানবাহনের আধিক্য। দ্বিতীয়ত, অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ। তৃতীয়ত, শহরের আশপাশের ইটভাটা ও শিল্প-কলকারখানার দূষণ। চতুর্থত, শহরের ভেতরে যে ময়লা-আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া। সরকার এই চার কারণের ওপর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী এক থেকে দুই বছর পর সুস্থ থেকে ঢাকায় বসবাস করা সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একিউআই স্কোর ২০১-৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। একিউআই স্কোর ১৫১-২০০ হলে নগরবাসীর প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। শীতে শিশুদের নিমোনিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই ধুলাবালি। অতিরিক্ত ধুলাবালিতে মানবদেহে সর্দি, কাশি, এলার্জি, হাঁপানিসহ শ্বাসযন্ত্রের খুব সহজে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে থাকে। ঢাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণে ভুগছে।
ঢাকাবাসীর চার দেয়ালের বাইরে শ্বাস-নিশ্বাস নেয়া মানে জেনে-বুঝে দুষিত বায়ু গ্রহণ করা। প্রতিনিয়ত কী পরিমাণ দূষিত বাতাসের মধ্যে এই শহরের মানুষ বসবাস করছে, তা সহজে বুঝতে পারে একজন মানুষ যখন ২-৩ ঘণ্টা বাইরে থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখে পানি দেয়। সাম্প্রতিককালে ঢাকার অন্যান্য স্থানের মতো দেশের বিভাগীয় শহরেও পরিবেশগত ইস্যুগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণ অধিকতর প্রাধান্য লাভ করেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, বগুড়া, ফরিদপুর এবং রাজশাহী অঞ্চলের নগর এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া ঢাকার তুলনায় কম হলেও খুব দ্রুতগতিতে প্রভাব পড়ছে সেসব স্থানে। ইটের ভাটা, সার কারখানা, চিনি কল, কাগজ কল, পাটকল, বস্ত্র কারখানা, স্পিনিং মিল, ট্যানারি শিল্প, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, রুটি ও বিস্কুট কারখানা, রাসায়নিক ও ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট কারখানা, মেটাল ওয়ার্কশপ, করাত কল প্রভৃতি শিল্প কারখানা প্রধানত বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন চলাচলকারী ৯০ শতাংশেরও অধিক যানবাহন ত্রæটিযুক্ত, যেগুলো প্রতিদিন সহনীয় মাত্রার অধিক ধোঁয়া নির্গত করে চলেছে। ডিজেলচালিত যানবাহনগুলো কালো ধোঁয়া নির্গত করে যাতে দহন সম্পূর্ণ না হওয়া সূ² কার্বন কণা বিদ্যমান থাকে। ফলে এসব উৎস থেকে অধিক বায়ুদূষণ হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পরিবেশ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ১৯৯৫ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭-এর আলোকে দেশব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের লক্ষ্যে সরকারকে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মো. রাসেল হোসাইন : মিরপুর-১০, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়