সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল : শান্তিপূর্ণ গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৫ শতাংশ

আগের সংবাদ

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী : নির্বাচনের আগে দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে > উদ্ভট ধারণা প্রশ্রয় দেবেন না

পরের সংবাদ

জঙ্গি ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার : সুরঞ্জিতের এপিএস ফারুককে নিয়ে তোলপাড় সুনামগঞ্জ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের এপিএস সুনামগঞ্জের ধরমপাশার ওমর ফারুক তালুকদার, তার স্ত্রী তানজিলা আক্তারসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থেকেই সুনামগঞ্জে জোর আলোচনা হচ্ছে- কিভাবে এই ফারুক দুদক মামলার আসামি থাকাবস্থায় ধরমপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে স্থান পেলেন।
যেভাবে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের এপিএস হলেন : ২০০১ সালে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সুনামগঞ্জ ১ আসন থেকে নির্বাচন করলে ধরমপাশার নেতাকর্মীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এসময় ফারুকের চাচাতো ভাই তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল হাইয়ের মাধ্যমে সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় ফারুক ও তার বন্ধু বাচ্চুর। সেই সুবাদে পরে সুরঞ্জিত মন্ত্রী হলে ফারুক নিজেকে মন্ত্রীর এপিএস পদে উন্নীত করতে সমর্থ হন। বিভিন্ন অপকর্মের পাশাপাশি বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে সুরঞ্জিতের গাড়িসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হন ফারুক। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় প্রায় ৬ মাস তিনি কারাগারে ছিলেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন যেভাবে : ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ধরমপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবা উদ্দিন সিরাজ। উদ্বোধক ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নুরুল হুদা মুকুট, উপস্থিত ছিলেন জেলার আরেক নেতা প্রয়াত আয়ুব বখত জগলুসহ অন্য নেতারা।
সম্মেলনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। পরে জেলা সদরে এসে শামীম আহমদ বিলকিসকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়, যদিও শামীম আহমদ মুরাদ অন্যতম প্রার্থী ছিলেন। এর প্রায় এক বছর পর ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফারুকের নাম দেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী অবাক হয়ে যান।
এ ব্যাপারে শামীম আহমদ মুরাদ বলেন, এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রভাব ও চাপে সব কাউন্সিলরের সমর্থন থাকার পরেও আমাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়নি। এমপির চাপেই তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলার নেতারা তাকে আমার উপরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে বসায়। তখনই আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিনের যুক্ত স্বাক্ষরে কমিটি অনুমোদিত হয়। এ ব্যাপারে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আমরা শুধু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি বানিয়েছে জেলা কমিটি। এটা তাদের ব্যাপার।
তবে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, জঙ্গিরা দেশ ও জাতির শত্রæ। এদের বিচারে সরকার আন্তরিক। আমিও এই জঙ্গির বিচার চাই। আর সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট বলেন জঙ্গিদের নেপথ্যে যারা ছিল তাদের খুঁজে বের করা হোক।
যেভাবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন ফারুক : ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় প্রায় ৬ মাস কারাগারে ছিলেন ফারুক। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকা এবং হাজতবাসের অভিযোগে ওই সময় ধরমপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে ফারুককে অব্যাহতি দেয়া হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় ফারুকের সঙ্গে পরিচয় হয় ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি সোহেলের সঙ্গে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে কারাবাসে থাকায় একসময় ফারুক ও সোহেলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর জেল থেকে বের হয়ে গত বছরের ২৫ এপ্রিল প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সোহেলের বোন তানজিলাকে বিয়ে করেন ফারুক। সেই থেকেই ফারুক নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। গত ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের প্রধান গেটের সামনে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জঙ্গি সোহেল ও শামীমকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সঙ্গীরা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওমর ফারুক ও তার স্ত্রী তানজিলাসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ফারুকের বাড়ির লোকজন যা বললেন : গত বুধবার সকালে সুনামগঞ্জের ধরমাপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কয়েক শতক জায়গা নিয়ে ফারুকদের বিশাল বাড়ি। কয়েক মাস আগে ফারুক একটি মাদ্রাসার নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মাদ্রাসা নির্মাণ এবং ফারুকের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা- দুইয়ে মিলে ফারুকের গ্রামের বাড়ি মির্জাপুর ও উপজেলা সদরে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। এর কোনো সমাধান মিলছে না কারো কাছেই। ফারুকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম তালুকদার ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ। এলাকায় অনেক বিত্ত-বৈভবের মালিকও ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। এলাকার লোকজনের সঙ্গে তার সম্পর্কও ছিল ভাল। এবং তার পুরো পরিবার জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
কিন্তু ওমর ফারুক সুরঞ্জিতের এপিএস হওয়ার পরই তার চাচাতো ভাই বিএনপি কর্মী মিল্টন মাদক ব্যবসাসহ বিভিন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েন। জানা যায়, মিল্টনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত ২০/২২টি মামলা রয়েছে।
ওমর ফারুক ও তার আত্মীয়দের দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন ভোরের কাগজকে বলেন, ফারুকের অপকর্মের জন্য তাকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়