উকিল আবদুস সাত্তারকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি

আগের সংবাদ

মন্দা মোকাবিলায় দুই চ্যালেঞ্জ : ডলারের দাম যৌক্তিক জায়গায় রাখা > মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা

পরের সংবাদ

সিলেট সিটি করপোরেশনে দুর্নীতি : দুই কর্মকর্তার আর্থিক অনিয়মে ২২ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : সিলেট সিটি করপোরেশন কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সেবা পেতে ঘুষ, ভাণ্ডারের মালামাল চুরি এসব অনেকটাই অলিখিত নিয়ম। তবে এবার রাজস্ব শাখার দুই কর্মকর্তার দুর্নীতি আগের সব খবরকে ছাপিয়ে গেছে। অনিয়মের মাত্রা ছাড়িয়েছে আগের সব ঘটনার। আর এই দুর্নীতিতে নগরভবনকে অন্তত ২২ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হয়েছে।
করপোরেশনের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সিসিকের অভ্যন্তরীণ আয়ের সবচেয়ে বড় খাত নগরবাসী থেকে আদায় করা হোল্ডিং ট্যাক্স। তাই এ খাতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীদেরই নিয়োগ করে প্রশাসন। রাজস্ব বিভাগের দুটি আলাদা উপশাখা কর ধার্য ও কর আদায় শাখার মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ ও আদায় করা হয়ে থাকে। কর ধার্য (এসেসমেন্ট) শাখার কর্মীরা বিভিন্ন হোল্ডিং সরজমিন পরিদর্শন করে মাপজোক শেষে প্রদেয় কর নির্ধারণ করে কর আদায় শাখায় পাঠায়। সেই অনুযায়ী কর আদায় শাখা হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করে। কিন্তু কর ধার্য (এসেমেন্ট) শাখার প্রধান চন্দন দাশ ও কর আদায় শাখার প্রধান মো. রমিজ মিয়া বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে গত ১০ বছরে সিসিকের অন্তত ২২ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন। আর নিজেরা ফুলে ফেঁপে হয়েছেন কোটি টাকার মালিক।
সিসিকের একাধিক সূত্র মতে, কর ধার্য শাখা প্রধান চন্দন দাশ গত ১০ বছর ধরে তার অধস্তন কর্মীদের চাপ দিয়ে দুই হাজারেরও বেশি ভবন রেখেছেন কর আদায়ের বাইরে। নামমাত্র হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন আর্থিক সুবিধা। দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে রাজস্ব শাখায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বলয়। এতে করে এসব অনিয়ম খুব একটা বাইরে প্রকাশও হতো না। তবে গত সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করেই প্রকাশ পায় এই দুর্নীতির কথা। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে গত ৭ সেপ্টেম্বর ওএসডি করা হয় চন্দন দাশকে। একই সময়ে ওএসডি করা হয় কর আদায় শাখা প্রধান রমিজ মিয়াকেও। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় ৬ সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি।
তবে চন্দন দাশের প্রভাবের কাছে তদন্ত কমিটিকেও হার মানতে হয়। ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও সাড়ে তিন মাসেও তা করতে পারেনি কমিটি। উল্টো চন্দনের চাপে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটির দুই সদস্যকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। তবে এসব নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি কেউই।
ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে ১২টি ওয়ার্ডের অন্তত আড়াইশো বাসিন্দার নামে নোটিস জারির জন্য কর আদায় শাখাকে সুপারিশ করেন কর ধার্য শাখা প্রধান চন্দন দাশ। যাদের প্রায় সবারই হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া ১০ বছরের বেশি। এতেই বাঁধে বিপত্তি। নড়েচড়ে বসে নগর ভবন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দুই হাজারের অধিক ভবনে গত ১০ বছর কোনোরকম এসেমেন্টই হয়নি। এমনকি ৫ বছর অন্তর যে বিভাগীয় এসেসমেন্ট হয় তাতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এসব ভবনকে। ঘটনা প্রকাশ পেলে গত ৭ সেপ্টেম্বর সিসিক সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওএসডি করা হয় চন্দন দাশ ও রমিজ মিয়াকে। এর এক সপ্তাহ পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিসিকের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে গঠন করা হয় ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি। তবে নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে আটকে রাখা হয় তদন্ত। এর দেড় মাস পর গত ৩০ অক্টোবর সিসিক সচিব ফাহিমা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় মেয়রের একান্ত সচিব সোহেল আহমদকে। আর মৌখিক নির্দেশে বাদ দেয়া হয় প্রকৌশল শাখার সার্ভেয়ার বিজিত চন্দ্র দেকে। এরপর আরো দুই মাস পেরোলেও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি ৪ সদ্যের কমিটি।
এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. মতিউর রহমান খান।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সিসিককে অন্তত ২২ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তদন্তে যা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া এসব হোল্ডিং থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়ার ব্যাপারটিও

তদন্তে পাওয়া গেছে। তাই আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তিই পেতে হবে অভিযুক্তদের। তবে তদন্ত রিপোর্ট এখনো জমা হয়নি কেন এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে চাননি তিনি।
এদিকে প্রধান অভিযুক্ত কর ধার্য শাখার প্রধান চন্দন দাশ নিজেকে নির্দোষই মনে করেন। ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। আমাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, তবে আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। দুই হাজারের বেশি হোল্ডিং এ ট্যাক্স নির্ধারণে অনিয়মের ব্যাপারটি স্বীকার করলেও এসবের দায় নিতে চাননি তিনি। কর ধার্য বিভাগের প্রধান হিসেবে বিভাগের অনিয়মে নিজেকে দায়মুক্ত বলা যায় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা।
আর দেশের বাইরে অবস্থান করায় অপর অভিযুক্ত কর আদায় শাখার প্রধান রমিজ মিয়ার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, এ রকম একটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা আমি শুনেছি, তবে এটি আমার যোগদানের অনেক আগে হওয়ায় আমি বিস্তারিত অবগত নই। কমিটি রিপোর্ট জমা দিলে বলতে পারব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়