উকিল আবদুস সাত্তারকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি

আগের সংবাদ

মন্দা মোকাবিলায় দুই চ্যালেঞ্জ : ডলারের দাম যৌক্তিক জায়গায় রাখা > মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা

পরের সংবাদ

ছাত্রীদের যৌন হয়রানি : অভিযুক্ত সেই প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : ছাত্রীদের যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত চট্টগ্রামের সেই প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-চসিক। অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছেন চসিক কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেয়া হয়। তবে ঘটনার দিন গত রবিবার তাকে কেবল অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করে এবং একটি তদন্ত কমিটি করেই দায় সেরেছিল চসিক। এতে চট্টগ্রামের সচেতন বিশিষ্ট নাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের ক্ষোভের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করতে বাধ্য হয় চসিক।
জানা যায়, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেকবার যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩ সালের ১১ জুলাই ছবি সত্যায়িত করতে গেলে ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ করেন এক ছাত্রী। এ নিয়ে তৎকালীন মেয়র মনজুর আলমকে লিখিত অভিযোগ দেন ছাত্রী। যৌন হয়রানিসহ একাধিক অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আহমেদকে ওই বছরের ১৭ জুলাই সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। একই সময় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় বিভাগীয় মামলা। কিন্তু ২ বছর পর অভিযোগকারী ছাত্রী বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চাকরি ফিরে পান তিনি। সচরাচর কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠলে ওএসডি বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় বা আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। ২০১৯ সালে একইকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে পেয়েছিলেন সর্তকতার নোটিশ। সেই ঘটনার তিন বছর পর আবার একই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। কিন্তু একের পর এক অভিযোগ ওঠার করার পর কোনো ধরনের শাস্তি না হওয়ার অপরাধে প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেছেন সচেতন মহল। অভিযোগ রয়েছে, চসিকের শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে ম্যানেজ করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে বারবারই রেহাই পেতেন। এমন গুরুতর ঘটনা নিয়ে চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তাও কুলুপ এঁটেছেন মুখে। প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। চসিকের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল আলম হোসাইনীকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে ওএসডি বা বরখাস্ত না করে বদলি করার বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি মূলত মেয়র মহোদয় এবং প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা দেখছেন। ওনাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে গত রবিবার সকালে নগরের চকবাজারে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রবিবার সকাল থেকে বিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং অভিবাবকরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তাকে উপর্যপুরি বই খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ছুড়ে মারতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা জানায়, শিক্ষক আলাউদ্দীন বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের হয়রানি করে থাকেন। অনেক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মেসেজও দিতেন। কিন্তু তার বিভিন্ন অসৎ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিতেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তফা টিনু ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় তিনি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে ওএসডি করে তদন্তের আশ্বাস দেন। এ আশ্বাসের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। রবিবার বিকেলে চসিক প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনকে কাপাসগোলা থেকে নগরের দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। তার স্থলে পদায়ন করা হয় হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোমা বড়–য়াকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়