রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

সোনালি দিনের প্রত্যাশা : স্বাগত ২০২৩

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি আর ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানোর মাঝেই ঘাসের ডগায় নতুন শিশির বিন্দু। মধ্যরাতে আতশবাজি ফাটিয়ে পুরনো দিন শেষে নতুনকে স্বাগত জানানো। পুরনো ব্যর্থতাকে পেছনে রেখে নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর হওয়া। পেছনে ফেলে আসা বছরের ভুল, হতাশা, দুঃখ, গøানিকে দূরে ঠেলে নতুন উদ্যমে সাহস নিয়ে পথচলা। সামনে সোনালি দিনের হাতছানি। আরেকটি নতুন বছর, নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্বপ্নে বোনা কাব্য। পৃথিবীর বর্ষপরিক্রমায় আরেকটি পালক। নতুন একটি বর্ষে পদার্পণ করল এই ধরণি। কালের খেয়ায় নথিভুক্ত হলো আরো একটি বছর, আরো ৩৬৫ দিন। সম্ভাবনার অপার বারতা নিয়ে শুরু হলো নতুন বছর। বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বছর ২০২৩। আর বছরের প্রথমদিনটিকে স্বাগত জানাতে ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের মানুষ মেতেছে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ উৎসবে। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও আতশবাজি আর নীল আলোয় বরণ করেছে নতুন বছরকে।
ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, নববর্ষ সবার মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা এবং নতুন সম্ভাবনা। বিরাজমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গের প্রতি দুঃস্থ, অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা মহামারির এবার রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
অপর এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২২ সাল বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের এক স্বর্ণযুগ। আমরা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু চালু করেছি। গত ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার মেট্রোরেল যোগাযোগ চালু করেছি। ২১ ডিসেম্বর দেশের ৫০টি জেলায় উন্নয়নকৃত ১০০টি মহাসড়ক উদ্বোধন করেছি। আমাদের অন্যান্য মেগা ও মাঝারিসহ সব অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজও পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নববর্ষ মানেই সবার মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া।
সভ্যতার ইতিহাস বলে, অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার এই স্পৃহা মানুষকে নিয়ে এসেছে এতদূর। তাই নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে এগিয়ে যাবে বিশ্বের অন্যান্য জাতির মতো বাঙালিও। মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরো একটি বছর। পুরনো বছরটি পেছনে ফেলে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার দুরন্ত আহ্বানে মানুষ স্বাগত জানায় ভবিষ্যৎকে। বিদায়ী বছরের ব্যর্থতাকে সরিয়ে রেখে নতুন বছরে নতুনভাবে শুরু হলো পথচলা। সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিন হলো শুরু। পুরনো বছরের সংশয়, সংকট, উদ্বেগ কাটিয়ে উঠে নতুন আশায় নতুন করে দিনযাপন শুরু আজ থেকে। বিশ্ববাসী প্রবেশ করল একুশ শতকের তৃতীয় দশকের আরো একটি নতুন বছরে।
শিক্ষাঙ্গন, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক নানা ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাবে- এমন প্রত্যাশা দেশের সব মানুষের। গত বছর যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিল তার অনেকখানি হয়তো পূরণ হয়নি। প্যারিসভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড

ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) স¤প্রতি তাদের এক গবেষণায় জানিয়েছে, উচ্চমাত্রার সুদহার, আকাশচুম্বী মূল্যস্ফীতি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক হালচাল হবে ২০২২ সালের থেকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু তাতে কী? নতুন উদ্যম নিয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য ধরা দেবেই।
আর এ লক্ষ্যেই নতুনকে বরণে বর্ণিল আয়োজনের রীতি অনেক পুরনো। এটি শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে। গবেষকদের মতে, মেসোপটেমিয়ান সভ্যতায় নববর্ষ উদযাপনের রীতি শুরু হয়। তবে নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ব্যাবিলনবাসীরা প্রায় ২ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিপুল আয়োজনে বর্ষবরণ শুরু করে। প্রাচীন ব্যাবিলনে নতুন বছর শুরু হতো চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে রোমান সিনেটররা ঘোষণা করেন, জানুয়ারির এক তারিখই হবে বছরের পহেলা দিন। এরপরও খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সাল পর্যন্ত বর্ষপঞ্জি পরিবর্তিত হতে থাকে। সম্রাট জুলিয়াস সিজার এটি আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে একে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও বলা হয়। পরে ১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করে নতুন বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করেন। সেই অনুসারে বিশ্বব্যাপী ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপিত হয়ে আসছে। পৃথিবীর প্রায় সব জাতি নববর্ষের প্রথমদিনটি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী পালন করে। জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে এই বর্ষবরণ সম্পৃক্ত। ইরান, গ্রিস, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের নিজস্ব কৃষ্টি অনুযায়ী নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। শুধু ইউরোপের কিছু দেশ আর আমেরিকা এই দিনটিকে জানুয়ারি মাসে ‘নিউ ইয়ার্স ডে’ হিসেবে পালন করে। ইংরেজি নববর্ষ আয়োজনে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালিও নতুন আনন্দে মেতে ওঠে তথ্যপ্রযুক্তির এই প্রাগ্রসর যুগে। বহু মানুষ এদিন শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা কার্ড, এসএমএস, ফেসবুক, টুইটার, অ্যাপল এবং ই-মেইলে হাজার হাজার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। পুরনো বছর যেমনই কাটুক, নতুন বছর যেন ভালো কাটে সেই কামনা থাকে সবার মধ্যে।
এদিকে নতুন বছরে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছে বাংলাদেশ। নতুন বছরে পুরনো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি বাড়ানো, মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমন করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। নতুন স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে মানুষ।
‘মুকুলিত সব আশা/স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা/জীবনে চির স্মৃতি হয়ে রয়/পুরাতন বর্ষ বিদায় লয়/নববর্ষের আগমন হয়।’ সব আশা-স্নেহ-ভালোবাসা স্মৃতি হয়ে থাকুক। আগামী আসুক পুষ্পশোভিত হয়ে। প্রজ্বলিত সূর্যের আলোকচ্ছটায় আলোকিত হোক বিশ্ব। বিশ্বের যাবতীয় মানুষের কল্যাণ হোক। বাংলাদেশ উত্তরোত্তর সফলতার দিকে এগিয়ে যাক।
স্বাগত ২০২৩।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়