দূতাবাস কর্মীদের নিরাপত্তা চাইল বাইডেন প্রশাসন

আগের সংবাদ

যানজটে ঢাকায় বছরে ক্ষতি ৮৭ হাজার কোটি টাকা : মেট্রোরেলে ক্ষতি কমবে ৯ শতাংশ

পরের সংবাদ

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আজ : আসছে নির্বাচনমুখী স্মার্ট নেতৃত্ব

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

** ১০ম বারের মতো সভাপতি হচ্ছেন শেখ হাসিনা **  সম্মেলন থেকেই ভোটের মাঠের যাত্রা **
মুহাম্মদ রুহুল আমিন : ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আজ শনিবার। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে সম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কৃচ্ছ্রতা সাধনের লক্ষ্যে এবার সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজন থাকছে। প্রতি বছর বিদেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার তা হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ১৪ দলের শরিকসহ অন্যান্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো।
এরইমধ্যে সারাদেশের নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। এবারো সম্মেলনে টানা ১০ম বারের মতো সভাপতি হতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদগুলোতে কারা আসছেন তা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। তবে সারাদেশের কাউন্সিলররা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার ওপরই অর্পন করবেন। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তবে বরাবরের মতো এবারো শেখ হাসিনা কাউকেউ কোনো সবুজ সংকেত দেননি বা কারো কাছেই মুখ খুলেননি। তাই সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েই গেছে। তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আজ সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন পর্যন্ত।
জানা গেছে, এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।’ সেই অনুযায়ী স্মার্ট নেতৃত্বও তৈরি করা হবে সম্মেলনে। আজকের সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত দিয়েই আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চায় আওয়ামী লীগ। সেজন্য নানা হিসাব-নিকেশ করেই নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য পদগুলোতে কারা আসবেন, তা নির্বাচন করার এখতিয়ার কাউন্সিলরদের। তবে সারাদেশের কাউন্সিলররা একবাক্যে নেতৃত্ব তৈরির সব ক্ষমতা অর্পণ করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর।
এদিকে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক নিয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ আছে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ বলছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান যিনি সাধারণ সম্পাদক আছেন, তিনিই পুনরায় থাকতে পারেন। তাদের মতে, ওবায়দুল কাদের সুস্থ্য আছেন, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও বর্তমানে তিনি খুব সক্রিয়। নির্বাচন সামনে রেখে তাকেই আবার একই পদে রাখা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওবায়দুল কাদের হ্যাট্রিক করতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, এবার সম্মেলনে বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে জাতীয় নির্বাচনের পর বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সে সম্মেলনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। দলের আরেকটি অংশ বলছে, পরপর তিনবার একই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার নজির নেই। তাছাড়া এই দায়িত্ব পালন করার জন্য দলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আছেন। তাদের মধ্য থেকে কাউকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হতে পারে। যিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবেন- তাকেই সাধারণ সম্পাদক করা হতে পারে।
এছাড়া, সভাপতিমণ্ডলীসহ সম্পাদকীয় ও অন্যান্য সদস্যপদে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও মেধাবী নেতৃত্ব আনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বড় চমকই থাকছে সম্মেলনে। কমিটিতে জায়গা পেতে পারেন সাবেক পরীক্ষিত ও মেধাবী ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ।
যা বলছেন বিশ্লেষকরা : রাজনৈতিক বিশ্লেকদের মতে, আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জিং। এই সম্মেলনে যারা নেতৃত্বে আসবেন, দলকে বিজয়ী করতে তাদেরই আগামী নির্বাচনে মূখ্য ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ দলীয় কোন্দল নিরসন করে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন গোছানো বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের আন্দোলন মোকাবিলাও করতে হবে নতুন নেতৃত্বকে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দলকে নির্বাচনমুখী করতে স্মার্ট নেতৃত্ব আনতে হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রাচীনতম একটি রাজনৈতিক দল। নিয়মিত সম্মেলন আয়োজন এই দলটির বৈশিষ্ট। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই দলের সভাপতি থাকছেন- এটা নিশ্চিত বলা যায়। তবে সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদগুলির নেতৃত্ব গঠন নিয়ে যেসব আলোচনা আসছে, আমার মনে হয় সেগুলো কোনোটিই খুব একটা নির্ভরযোগ্য না। সম্মেলনের পরে শেখ হাসিনা কমিটি ঘোষণা করার আগে অনুমাননির্ভর কিছু বলা ঠিক না। কারণ, সারাদেশের হাজার হাজার নেতার মধ্য থেকে তিনি অতীতের মতো সময়োপযোগী নেতৃত্বের কমিটি গঠন করবেন।
তিনি বলেন, সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু প্রকৃত সৈনিকরাই নেতৃত্বে আসবেন- সেটাই আশা করি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আওয়ামী লীগকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রেই প্রকৃত বঙ্গবন্ধুপ্রেমীরা দেশপ্রেম ও সততা নিয়ে কাজ করে চলেছেন, তারা এই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন : এদিকে একদিন আগেই গতকাল ২২তম জাতীয় সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপকমিটি কাজ করছে। প্রথা অনুযায়ী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্যসচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ যথাসময়ে শেষ করেছেন। সারাদেশের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে কাউন্সিলর-ডেলিগেটসহ নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের বাসায় উঠেছেন। তারা অপেক্ষা করছেন আজকের সম্মেলনের। শেখ হাসিনাকে সভাপতি পদে বহাল রেখে আর কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে?
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতি জাতীয় পতাকা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। একইসঙ্গে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিজ নিজ জেলার জন্য নির্ধারিত দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উঠে আসন নেবেন। আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে।
এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে ৭৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর ও লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
সম্মেলনের সব প্রস্তুতি শেষ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, এবারের সম্মেলন সাদামাটা হলেও সোহরাওয়াদী উদ্যানে নেতাকর্মীদের ঢল নামবে। দেশের মানুষ কষ্টে আছে ভেবেই এবার সম্মেলনে সাজসজ্জা করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভেবেই এবারের সম্মেলন সাদামাটাভাবে করা হচ্ছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের মূল মঞ্চের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে চার সারিতে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথম সারিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাকি দুইটিতে বসবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। মঞ্চে মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে। পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট বাই ৪৪ ফুট মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। মূল মঞ্চের উচ্চতা ৭ ফুট। মূলমঞ্চে চার ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলইডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। সর্বশেষ সম্মেলনের বাজেট ছিল ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এবারের সম্মেলনের জন্য বাজেট ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়