ঢাকা মহানগর আ.লীগ : দক্ষিণে সমাবেশ উত্তরে বিক্ষোভ আজ

আগের সংবাদ

১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন : ঢাকার গণসমাবেশ থেকে বিএনপির ঘোষণা > ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণমিছিলের কর্মসূচি

পরের সংবাদ

পল্টন ছেড়ে গোলাপবাগে বিএনপি : বিকাল থেকেই সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের অবস্থান, রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে টানটান উত্তেজনার পর অবশেষে সমঝোতার পথেই হাঁটালো বিএনপি। নয়াপল্টন নিয়ে অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে গোলাপবাগ মাঠে। আজ (শনিবার) সমাবেশ করবে দলটি। এ বিষয়ে পুলিশের অনুমতি মিলেছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বেলা ১১টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে সমাবেশের কার্যক্রম। বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এ সমাবেশ থেকেই ১০ দফা দাবি তুলে ধরে ‘সরকারের পদত্যাগের’ লক্ষ্যে নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে তুলে ধরা হবে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা’। সূচনা হবে যুগপৎ আন্দোলনেরও।
বিএনপির নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, আমাদের মহাসচিবসহ গুরত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে নেয়া হয়েছে। তবুও বিএনপির সমাবেশ হবেই। তারা বলছেন, এ সমাবেশ নিয়ে যদিও দলকে ‘উচ্চমূল্য’ দিতে হয়েছে; তবুও যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল- এর মধ্যেও সমাবেশ যে হচ্ছে এটা ‘মন্দের ভালো’। কারণ সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করা। যদিও নেতারা স্পষ্ট করেছেন, এই সমাবেশ ঘিরে আর কোনো সংঘাত চান না তারা। তাদের প্রত্যাশা, পুরো রাজধানী আজ সমাবেশের নগরীতে পরিণত হবে। নেতারা জানিয়েছেন, মঞ্চে না থাকলেও মাঠে থাকবেন জোট ও সমমনা দলের নেতারা।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের স্থান নিয়ে কয়েক দিনের টানাপোড়নের পর সমাবেশের মাত্র ১২ ঘণ্টা আগে শুক্রবার দুপুরে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেনও বলেন, গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি তাদের জানিয়েছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গোলাপবাগ মাঠ পরিদর্শন করে। তারা মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরপরই বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন। রাত বাড়ার আগেই গোলাপবাগ মাঠ

ও আশপাশের এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
এদিকে অনুমতি মেলার পরপরই বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। সেখানে খন্দকার মোশাররফ বলেন, কাল (শনিবার) বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হবে। গোলাপবাগ মাঠে মঞ্চ তৈরি, মাইক লাগানো এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চাই আমরা। এই সমাবেশে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনগণকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানান খন্দকার মোশাররফ। বিশেষ করে ঢাকাবাসীকে সমাবেশে উপস্থিত থেকে সরকারের জুলুম, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরিকদেরও যার যার অবস্থানে থেকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ। পাশাপাশি সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে যে ১০ দফা রূপরেখা দেয়া হবে তার প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বানও জানান।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর গোলাপবাগ মাঠে যান বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান-উল্লাহ আমান বলেন, টালবাহানা করে পুলিশ বিকালে অনুমতি দিয়েছে। জন¯্রােত ঠেকাতেই সরকার হামলা মামলা করেছে। কারাবন্দি সবার মুক্তি চাই, হামলা মামলা করে জন¯্রােত থামানো যাবে না। কাল সমাবেশেই উচিত জবাব দেয়া হবে।
প্রায় তিন মাস আগে বিএনপি ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করতে নয়াপল্টনের জন্য অনুমতি চেয়ে গত ১৩ নভেম্বর ও ২০ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করে দলটি। কিন্তু ডিএমপি নয়াপল্টনে অনুমতি না দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলে। পরে নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বিকল্প ভেন্যু নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়। বিএনপির সিনিয়র নেতারা দৃঢ় কণ্ঠে নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় সিদ্ধান্তের কথা জানান।
একপর্যায়ে বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীরা জমায়েত হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল হোসেন নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন মারা যান। আহত হন অনেকে। এরপর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীসহ প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে উত্তরার বাসা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং শাহজাহানপুরের বাসা থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক করে পুলিশ। পরে শুক্রবার বিকালে ডিবি কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর পল্টন থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাদের। আদালতে তোলার পর জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানো হয় দুই নেতাকে। এরপর বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। তবে শুক্রবার বিকালে অবশেষে বিএনপি ও পুলিশ সমঝোতায় পৌঁছে। বিএনপির প্রস্তাবিত গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।
সমাবেশ ঘিরে সর্তক পুলিশ : বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সতর্ক রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। রাজধানী ঘিরে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বিএনপির সাত লাখ লোক এসেছে কিনা, তা খোঁজ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। শুক্রবার বিকালে ডিবি কার্যালয়ের সামনে তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে গত কয়েকদিনে সাত লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা খোঁজ নিচ্ছি।
ডিবিপ্রধান বলেন, সমাবেশের শর্ত আগেরগুলোই থাকবে। নিরাপত্তায় আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সেখানে রয়েছে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশের সমন্বয়ে যেভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা গোলাপবাগ মাঠেও থাকবে। আমাদের টিম ইতোমধ্যে কাজ করছে। আমরা তদারকি করছি, যেন এ সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের অরাজকতা না হয়।
নাশকতার শঙ্কা আছে কিনা- জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তারা একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চান। এজন্যই তারা গতকাল এসে কথা বলেছেন, আজও এসেছেন। আজ তারা কাগজ জমা দিয়েছেন, সেখানে তারা চেয়েছেনই গোলাপবাগ মাঠ। আমরা গোলাপবাগ মাঠই দিয়ে দিয়েছি, অতএব আর কোনো সমস্যা নেই। আমরা মনে করি তারা একটি সুন্দর সমাবেশ করবেন, কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা করবেন না। পুলিশ গোলাপবাগ মাঠসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে কাজ করছে।
হারুন বলেন, আমরা যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি, মনে করি না কোনো হামলা হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ রেখেছি, যেন দুর্বৃত্তায়নের মতো ঘটনা না ঘটে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ ওই এলাকা, বিভিন্ন ছাদে ও আশপাশের মহল্লায় কাজ করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়