ক্রোয়াট দাপটে ‘হেক্সা’র স্বপ্নভঙ্গ : টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে ব্রাজিলকে বিদায় করে সেমিতে ক্রোয়েশিয়া

আগের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : জলবায়ু অভিযোজনে আমাদের প্রয়োজন ২৩০ বিলিয়ন ডলার

পরের সংবাদ

১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন : ঢাকার গণসমাবেশ থেকে বিএনপির ঘোষণা > ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণমিছিলের কর্মসূচি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সরকারের পদত্যাগ, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি, গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিসহ যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে এ ঘোষণা দেন দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ সময় ওই ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে গণমিছিলের ডাক দেয়া হয়। 
এর আগে ১৩ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে আরো একটি বিক্ষোভ মিছিল করবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেপ্তার নেতাদের মুক্তি দাবি এবং নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে মকবুল হোসেন আলমগীরের মৃত্যুর বিচার দাবিতে। এটা হবে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি। এই গণমিছিলে যোগ দিতে সব সমমনা দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এই ১০ দফা উপস্থাপন করার কথা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই দফাগুলোর বিষয়ে যুগপৎ আন্দোলনকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত ও সম্মতি নেয়া হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এই ১০ দফার প্রতি একাত্মতা ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করি, এই দফার সঙ্গে তারাও একাত্মতা ঘোষণা করবেন। আগামী দিনে এই ১০ দফা আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি আন্দোলন কর্মসূচি আমরা যুগপৎভাবে পালন করব। এই সরকারকে বিদায় দেয়ার জন্য ধৈর্য সহকারে আপনারা আমাদের এই আন্দোলন-কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগেই বেলা ১০টা ১৫ মিনিটে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়।

কুরআন তেলাওয়াত করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নেছারুল হক। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমানসহ বিএনপির সব পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বক্তৃতা করেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু।
গোলাপবাগ মাঠে সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বক্তব্যে শেষে বক্তৃতা করতে আসেন আসেন ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন। সেই মূহর্তেই ‘মুক্তি চাই মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ স্লোগানে মুখতির হয়ে ওঠে গোলাপবাগ মাঠ প্রাঙ্গণ। এ সময় বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আজকের এই সমাবেশ পণ্ড করতে সরকার হেন কোনো ষড়যন্ত্র নেই, করেনি। আপনাদের মনোবল ভেঙে দিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়েছে। কিন্তু আপনারা প্রমান করেছেন, নেতারা জন্য নয় আপনার নিজেদের দাবি আদায়ে রাজপথে আছেন। তিনি বলেন, আপনারা অসাধ্যকে সাধন করেছেন। ইতিহাস বলে, শুধু বল প্রয়োগ করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মানুষকে দমিয়ে রাখা যায় না। আপনারা তারই প্রমাণ দিয়েছেন।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আজকে এই গণসমাবেশ মহাসমাবেশে রূপ নিয়েছে। চারদিকে মানুষে আর মানুষ। এই সমাবেশ এই বার্তা দিচ্ছে দেশের জনগণ আর প্রতারিত হতে রাজি নয়। তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়, যেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভয় পেয়েছেন। তাই আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছেন। আমাদের একজন কর্মীও নিহত হয়েছেন। ঢাকায় আমাদের ৫ থেকে ৬ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মিলিয়ে ১২ হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আজকে শেখ হাসিনা ভয় পেয়েছেন। কারণ, জোর করে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আছেন। তাই তো ফ্যাসিস্ট সরকার গণতন্ত্রের মূল্য বোঝে না। গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সিনিয়র নেতারা যা বললেন : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে গণতন্ত্র মানে ‘ফর দ্য আওয়ামী লীগ, বাই দ্য আওয়ামী লীগ’। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারকে অবলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি, নইলে তাদের গদি থেকে নামিয়ে গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারে দেশের জনগণ আবারো একটি মুক্তিযদ্ধ করবে। ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, কোনো স্বৈরাচারী সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। এই সরকারও পারবে না। তিনি বলেন, এই সরকার মুখে যা বলে কাজে উল্টোটা করে। তাদের ভাষায়- আমার ভোট আমি দেব, দিনের ভোট রাতে দেব’। তাই এ সরকারকে হটাতে গণআন্দোলনের বিকল্প নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করতে বাধ্য করব। এবার কেউ পিছু হটব না। আজকের ঘোষণার পর একদফা আন্দোলনে যাব। জনগণকে নিয়ে সরকার পতনের লড়াই করে যাব।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, কোনো বাধা দিয়ে এই জন¯্রােতকে রুখে দেয়া যাবে না। সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা রাজপথে স্বোচ্চার থাকবো। সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপির পার্টি অফিসে হামলা করে তারা ভয় দেখাতে চেয়েছিল। আমাদের কেউই ভয় পায়নি। আপনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, উজ্জীবিত হয়েছেন। এটি ধরে রাখুন। সামনে কাজে লাগবে। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা ১০টা মিটিং করেছি। আজকে শেষ মিটিং। এ মিটিংকে আমরা বলব ওয়ার্মওয়ার্ক। তারপর শুরু হবে রাজপথের সংগ্রাম। এরপর হবে আমাদের শেষ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করব।
বিএনপির ১০ দফা দাবিতে যা আছে : ১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। ২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারা বন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করা। ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।
৬. বিদুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল। ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা। ৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সবক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন ও দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা। ১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া। ১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে বড় জমায়েত : চারপাশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নানা নাটকীয়তা, সংঘাত-সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা, শীর্ষ নেতাসহ গণগ্রেপ্তার ও আতঙ্কে উত্তেজনা আর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ঢাকার শান্তিপূর্ণভাবেই হয়ে গেল বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ। দেশব্যাপী বিভাগীয় গণসমাবেশের পর এটিই ছিল দলটির শেষ বড় সমাবেশ। এই সমাবেশ ঘিরে গত কয়েকদিনে উত্তাপ ছিল রাজনীতির মাঠ। সমাবেশে এই সরকারের বিদায়ের জন্যে বিএনপি কয় দফা দাবি ঘোষণা করল বা দলীয় কী নির্দেশনা দিল তা ছাপিয়ে বড় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে ‘সফল সমাবেশ’। গোলাপবাগ মাঠে তাই বিএনপির শীর্ষ নেতারা বারবারই নেতাকর্মীদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মাঠ ছাপিয়ে রাজপথে জন¯্রােত : গোলাপবাগ মাঠে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকে দলে দলে বিএনপি নেতাকর্মীদের গোলাপবাগ মাঠের দিকে আসতে দেখা যায়। দুপুর নাগাদ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে মাঠে জায়গা না হওয়ায় আশপাশের সড়কগুলোতে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেন। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কমলাপুর-মুগদা এলাকার সড়কে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড়। সমাবেশস্থলে জায়গা না হওয়ায় কর্মী-সমর্থকরা মুগদা মানিকনগর কমলাপুরের সড়কেও অবস্থান নেন। মাঠে জায়গা না হওয়ায় গোলাপবাগ মানিকনগর অঞ্চলের রাস্তায় অবস্থান নেন অনেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উপস্থিতি। দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে মানিকনগর, কমলাপুর, মুগদা অঞ্চলের আশপাশের রাস্তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
যুগপতের সঙ্গীদের ডেকেও পেল না বিএনপি : বিএনপি গোলাপবাগে যে সমাবেশ করেছে, তাতে যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাব্য সঙ্গীদেরকেও যোগ দেয়ার আহ্বান ছিল। কিন্তু দেখা যায়নি কাউকেই। সমাবেশের আগের দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে যুগপৎ আন্দোলনে যে সব দল, ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আগামীকাল গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য আপনারাও উপস্থিত হবেন। অথচ বিএনপির এই উদাত্ত আহ্বানের পরও কোনো দলের নেতা তাতে যোগ দেননি। এই সমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণার যে কথা জানানো হয়েছিল, সেটিও ঘোষণা হয়নি।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সমাবেশে ইশরাক : গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দলবলসহ সকাল ১০টায় সমাবেশে উপস্থিত হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির প্রথম সদস্য ইশরাক হোসেন। তিনি রাজধানীর মতিঝিলে গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে গত কয়েকদিন আতœগোপনে ছিলেন। এ সময় মঞ্চে ও মাঠের বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানায়। মঞ্চের আশপাশের নেতাকর্মীরা ইশরাককে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দেন, ‘ইশরাক ভাই, ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’।
সমাবেশ শেষে কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ : সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ পালনের আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এমনকি সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন তারা। এ সময় মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এখানে সমাবেশ করেছি, শান্তিপূর্ণভাবেই এই সরকারের পতন ঘটাবো। কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমাবেশ শেষ হলে শান্তিপূর্ণভাবেই যে যার বাড়িতে ফিরে যাবেন।
মুখোমুখি হলেও সংঘাতে জড়ায়নি কোনো পক্ষই : সমাবেশ শেষে ফেরার পথে মুখোমুখি হলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের বাধা দেননি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি লাঠিসোটা নিয়ে দিনভর অবস্থান নিলেও সংঘর্ষে জড়াননি সরকারদলীয় কর্মীরা।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গণসমাবেশের শেষে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। সকাল থেকে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করায় ফেরার পথে সংঘাতের আশঙ্কা করছিলেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। তাই অধিকাংশ নেতাকর্মী দলবদ্ধভাবে সমাবেশস্থল ছাড়েন। আওয়ামী লীগের নেতারা পথে পথে মিছিল শোডাউন করার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মুখোমুখি হলেও কোনো ধরনের উসকানি বা সংঘাতে জড়াতে দেখা যায়নি কোনো পক্ষকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়