কাগজ ডেস্ক : কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের লড়াই সমাপ্ত হয়েছে। ৩২ দল নিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ এখন ১৬ দলের। হাসি নিয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনাসহ ১৬ দল। আর জার্মানি, বেলজিয়ামসহ বাকি ১৬ দল চোখে জল নিয়ে বিদায় নিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে।
বিশ্বকাপের এবারের আসরে দারুণ একটি রেকর্ডের সাক্ষী হয়েছে ফুটবলবিশ্ব। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শেষ ষোলোয় খেলছে সব মহাদেশের দল। টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো শেষ হয় গত শুক্রবার। পরদিন বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা এই কথা জানিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের রেকর্ড তিনটি দল উঠেছে নকআউট পর্বে। গ্রুপ ‘ডি’ থেকে অস্ট্রেলিয়া, গ্রুপ ‘ই’ থেকে জাপান ও গ্রুপ ‘এইচ’ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া। দ্বিতীয়বারের মতো শেষ ষোলোয় জায়গা করে নিয়েছে মরক্কো ও সেনেগাল। দুদলই আফ্রিকার। এর আগে ২০১৪ ব্রাজিল আসরে আফ্রিকা থেকে নকআউট পর্বে উঠেছিল আলজেরিয়া ও নাইজেরিয়া। এবার কাতার বিশ্বকাপে ফুটবলের পরাক্রমশালী লাতিন আমেরিকা থেকে শেষ ষোলোয় উঠতে পেরেছে মাত্র ২টি দেশ। উত্তর আমেরিকা থেকে ১টি দেশ। বাকি ৮টি দেশ নকআউটে এসেছে ইউরোপ মহাদেশ থেকে।
বিশ্বকাপে সব মহাদেশের প্রতিনিধি থাকাকে বড় করে দেখছে ফিফা। ফিফার গেøাবাল ফুটবল ডেভেলপমেন্টের প্রধান আর্সেন ভেঙ্গারের মতে, এটা বিশ্বজুড়ে ফুটবলের উন্নতি, অগ্রগতির লক্ষণ। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘গ্রুপ পর্বের ফলাফল দেখায় যে সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার জন্য অনেক দেশ কতটা শক্তি অর্জন করেছে। ভালো প্রস্তুতি ও প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ করার ফল এটি। একই সঙ্গে এখানে প্রযুক্তির সুবিধার প্রতিফলন রয়েছে। বিশ্বব্যাপী ফুটবলের প্রতিদ্ব›িদ্বতা বাড়ানোর জন্য ফিফার প্রচেষ্টার ফল এটা।’
বিশ্বকাপ ফুটবলের কোনো আসরেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি এশিয়ার কোনো দেশ। তবে ২০০২ সালের আসরে বিশ্বকে রীতিমতো চমকে দিয়েছিল এশিয়ার দেশগুলো। সেই বিশ্বকাপের পর এবার কাতার বিশ্বকাপেও বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে এশিয়ার দল জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।
এবার এশিয়া মহাদেশ থেকে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলে মূল পর্বের টিকেট পায় ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব ও জাপান। স্বাগতিক হিসেবে ছিল কাতার। আর ষষ্ঠ দল হিসেবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফে পেরুকে হারিয়ে এশিয়ান দল হিসেবে জায়গা নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে হারলেও পরের দুই ম্যাচে তিউনিশিয়া ও ডেনমার্ককে হারায় তারা। তাতেই ‘ডি’ গ্রুপে রানার্সআপ হয়ে ১৬ বছর পর নকআউটে পা রাখে সকারুরা।
এরপর এশিয়ার দ্বিতীয় দল হিসেবে কাতার বিশ্বকাপের নকআউট নিশ্চিত করে জাপান। এ যাত্রায় তারা হারায় চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি এবং একবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে। এশিয়া থেকে তৃতীয় দল হিসেবে নকআউট নিশ্চিত করে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ড্র করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঘানার বিপক্ষে হেরে যায় তারা। তবে শেষ ম্যাচে পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারানো এবং গোল ব্যবধানে উরুগুয়ের চেয়ে এগিয়ে থাকায় নকআউট নিশ্চিত হয় তাদের। এর আগে ২০০৬ বিশ্বকাপে এশিয়ার দেশগুলো তেমন ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। এশিয়া থেকে নকআউটে অংশ নেয় শুধু অস্ট্রেলিয়া। এরপর ২০১০ বিশ্বকাপে আবারো জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া নকআউটে পৌঁছায়।
এদিকে ফিফা জানিয়েছে, গ্রুপ পর্বের ৪৮টি ম্যাচে মোট ২৪ লাখ ৫০ হাজার (ধারণক্ষমতার ৯৬ শতাংশ) দর্শকের উপস্থিতি ছিল। যা ১৯৯৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র আসরের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। লুসাইল স্টেডিয়ামে মেক্সিকোর বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ২-০ গোলে জেতা ম্যাচটি উপভোগ করেন ৮৮ হাজার ৯৬৬ দর্শক। ১৯৯৪ সালে ব্রাজিল-ইতালির ফাইনালের পর যা সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রের রোজ বোলে ইতালিকে হারিয়ে ব্রাজিলের চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলার ম্যাচটি মাঠে বসে উপভোগ করেন ৯৪ হাজার ১৯৪ জন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।