ঢাকা কলেজে কমিটির দাবি : ছাত্রলীগ সভাপতির গাড়ি আটকে দিল বিক্ষুব্ধ নেতারা

আগের সংবাদ

প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে > ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : বিএনপি-জামায়াত যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে

পরের সংবাদ

দেশের অর্থনীতি নিয়ে গুজবে কান দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশবাসীকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকে তারল্য নিয়ে কোনো অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক উন্নত দেশ বিপদের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থনীতি নিয়ে কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না। গতকাল সোমবার মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ ও ‘আমর্ড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স’-এর গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে যখনই দেশ একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যায় তখন স্বার্থান্বেষী মহলের এটা পছন্দ হয় না, এটা হলো বাস্তবতা। জাতির পিতা একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর কোভিডের আগে আওয়ামী লীগ তুলেছিল ৮ শতাংশের ওপরে। কিন্তু কোভিড-১৯ ও এর পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনে অনেক উন্নত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। ধনী দেশগুলোও আজকে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায়ও বাংলাদেশকে এখনো আমরা স্থিতিশীল অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।
এ সময় নানা কথা বলে ভয়ভীতি ছড়ানোর অপচেষ্টায় কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন এই সংকটে অনেক ধনী দেশ জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরাও নানা পদক্ষেপ নিই। অথচ জ্বালানি নিয়ে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে পক্ষে টানা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনার সময় যাতায়াত ও আমদানি বন্ধ ছিল। এজন্য রিজার্ভ জমে যায়। পরে সব চ্যানেল খুলে গেলে আমাদের আমদানিতে রিজার্ভ ব্যয় করতে হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনা, টিকা গবেষণায় অর্থ দেয়াসহ করোনা চিকিৎসা সরঞ্জম কিনতে অনেক টাকা লেগেছে। এগুলোর জন্য আমাদের ডলার খরচ হয়েছে।
যে কোনো দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এজন্য দেশে যেমন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে, তেমনি বিদেশের শান্তি রক্ষা মিশনে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, সব সময় মনে রাখতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে। কাজেই আমাদের দেশের মানমর্যাদা সব সময় সমুন্নত রাখা এবং তাদের পাশে থাকা ও সহযোগিতা করা সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। ভূমিহীন ৩৫ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। এ কাজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর অবদান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সফলতার সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করার জন্য ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২২-এ অংশগ্রহণকারী সবাইকে অভিনন্দন জানান। জাতির নিরাপত্তার নিশ্চিতকল্পে এনডিসির পাঠ্যক্রমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত থাকায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়াও কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করে কোর্স কার্যক্রম স¤পন্ন করায় তিনি এনডিসির কমান্ড্যান্ট এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান। তিনি এনডিসিতে বিদেশি কোর্স মেম্বারদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে এনডিসির ভূমিকার প্রশংসা করেন। জাতীয় উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের ভূমিকার কথা আলোকপাত করে তিনি বলেন জনগণ, সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে রচিত সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরো সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হবে। এ বছর বাংলাদেশ

সেনাবাহিনীর ৩৩ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৫ জন কমডোর ও ১ জন ক্যাপ্টেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৬ জন এয়ার কমডোর, সিভিল সার্ভিসের ১ জন অতিরিক্ত সচিব, ৯ জন যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের ২ জন ডিআইজি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১ জন ডিজিসহ বাংলাদেশের সর্বমোট ৫৮ জন প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তা ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২২ এ অংশ নেন। এছাড়া আমাদের বন্ধুপ্রতিম ১৭টি দেশের ৩০ জন বিদেশি প্রশিক্ষণার্থী এই কোর্সে অংশ নেন।
আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২২ এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩ জন কর্নেল, ৪০ জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২ জন ক্যাপ্টেন ও ৮ জন কমান্ডার, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৬ জন গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও ১ জন উইং কমান্ডার অংশ নেন।
এনডিসি-ডিএসসিএসি পরিচালনা পর্ষদের ১৯তম যৌথসভা : ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ পরিচালনা পর্ষদের ১৯তম যৌথ সভা গতকাল সোমবার মিরপুর সেনানিবাসস্থ শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স অনুষ্ঠিত হয়। প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরিচালনা পর্ষদের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমান বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রি›িসপাল স্টাফ অফিসার, কমান্ড্যান্ট এনডিসি এবং ডিএসসিএসসি উপস্থিত ছিলেন। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় (অর্থ বিভাগ), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ) সিনিয়র সচিব/ সচিবরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) উপাচার্যরা।
প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে তার সরকারের অব্যাহত সহযোগিতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। করোনাকালে সশরীরে সব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠান দুটিকে সাধুবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদাপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠান দুটির উন্নতি ও অগ্রগতিতে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কলেজ দুটির উন্নতি ও অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রাখায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়