কাগজ প্রতিবেদক : বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের বিপদ এড়াতে সচিবদের সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশে যাতে দুর্ভিক্ষ না আসে সেজন্য এখন থেকেই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এখনই বিপদে পড়েছি তা নয়, কিন্তু আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে দেশ কোনো বিপদে না পড়ে। আমাদের সেই সতর্কতা একান্তভাবে দরকার এবং সেই সতর্ক বার্তাটাই আমরা দিচ্ছি। গতকাল রবিবার নিজ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সচিব সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পাশাপাশি জঙ্গি বিষয়ে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সভায় বলেন, তারা যেন কারো সহায়তা ও অর্থ না পায়, এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল বিকালে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলা হচ্ছে যে, বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতি যখন করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিপর্যস্ত, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছে। একটি বা দুটি দেশ এই সংকটের সুবিধা পাচ্ছে এবং উন্নত দেশসহ বাকি দেশগুলো কষ্টে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোও গুরুতর সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, যার জন্য তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং রিজার্ভের অর্থ কমে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বহুগুণ বেড়েছে। আমাদের দেশ এর আওতার বাইরে নয় এবং এটি আমাদের দেশেও আঘাত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে – সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়া, অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং প্রতি ইঞ্চি পতিত জমি চাষের অধীনে নিয়ে আসার জন্য জনগণকে সচেতন করা এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যারা রেমিট্যান্স পাঠায় তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ ও প্রণোদনা আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের ভালো রিজার্ভ রয়েছে। আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের ৫/৬ মাসের রিজার্ভ আছে। তারপরও এখন যা অবস্থা তাতে আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে, আরেকটু সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যাতে যে কেউ যে কোনো তথ্য ওখান থেকে জানতে পারে, নিতে পারে। সেখানে আমাদের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের অনেক জিনিস এখনো কিনতে হয়। যে সমস্ত জিনিস বাইরে থেকে কিনতে হয় তার মধ্যে যে সব জিনিস আমরা দেশে উৎপাদন করতে পারি সেই দিকে এখন দৃষ্টি দিতে হবে। অন্তত বাইরের উপর নির্ভরশীলতা যতটা কমাতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য জ্বালানি তেলের দাম বা গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এক্ষেত্রেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আগামীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলে আসলে সংকট অনেকাংশে কেটে যাবার আভাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আমাদের গ্রিড লাইন নির্মাণকাজ আরও দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। শেখ হাসিনা সবাইকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।